বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

দফায় রফা? 

বাজল ভোটের ঘণ্টা। বঙ্গে লাগু হয়ে গেল আদর্শ আচরণবিধি। এবার রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী ঘোষণার পালা। যদিও ভোটে এবার ‘খেলা’র প্রবল দাপট। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছোট বড় নেতারা প্রায়ই বলছেন ‘খেলা হবে’। খেলা হোক, ক্ষতি নেই। কিন্তু তা যেন রক্তক্ষয়ী না হয়। এজন্যই বোধহয় নজিরবিহীন বাড়তি সতর্কতা। নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে হিংসা আটকাতে আট দফায় ভোট। বাংলা দেখেছে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ছয় দফায় ভোট, গত লোকসভা নির্বাচনে সাত দফায় ভোট। এবার আট দফার ভোটের ঘোষণা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিল। শুধু এক্ষেত্রেই নয়, নির্ঘণ্টে ছক ভাঙার নজির সৃষ্টি হল আরও অনেকক্ষেত্রে। দফাওয়ারি ভোটে অতীতে যেখানে পাহাড় থেকে ভোট পর্ব শুরু হতো এবার সেখানেও ব্যতিক্রম। গত লোকসভা ভোটে যেখানে গেরুয়া শিবির প্রভাব ফেলেছিল সেই জঙ্গলমহল দিয়েই শুরু হচ্ছে প্রথম দফার ভোট। সঙ্গে তৃণমূলের গড় বলে পরিচিত পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার ভোট। আরও আছে, অন্য চার রাজ্যে একজন হলেও বাংলার জন্য দু’জন পুলিস পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। শুধু তাই নয়, তাঁদের যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আবেদনও করা হয়েছে। এ নজিরও খুঁজলে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। মোটামুটিভাবে বলা যায়, বাংলার এই হাইভোল্টেজ নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বেই অতীতের অনেক রেকর্ডই ম্লান হয়ে গেল। তবে রাজ্যের মানুষের একটাই প্রত্যাশা। কত দফায় নির্বাচন হচ্ছে সেটা বড় কথা নয়, তাঁরা চান অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেটাই নিশ্চিত করুক নির্বাচন কমিশন। কারণ অতীতের একাধিক নির্বাচনে পুলিস, কেন্দ্রীয় বাহিনী পর্যবেক্ষক থাকা সত্ত্বেও বহু জায়গায় তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বহু ভোটারকে। তাঁরা দেখেছেন পর্যবেক্ষক নামে থাকেন, কাজে সেভাবে থাকেন না। এবারের ‘খেলার ময়দানে’ তেমনটা ঘটুক সাধারণ মানুষ চান না। চান নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালিত হোক। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবটি হোক নির্বিঘ্ন।
বাংলায় আট দফায় ভোট এবং একাধিক জেলার সব বিধানসভা আসনের ভোট একদিনে না রেখে একাধিক দফায় ভাগ করে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তে কোন দল কতটা সুবিধা পাবে তা রাজনৈতিক দলগুলির তরজার বিষয়। রাজনৈতিক মহলে সে চর্চাও হচ্ছে। বিন্যাসের এই বদল প্রসঙ্গে একটি যুক্তিও দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কম বাহিনী দিয়ে বহু জায়গায় ভোট করানো সম্ভব হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোট করানোর উদ্দেশ্যে কমিশনের ব্যাখ্যাকে মান্যতা দিয়েই বলা যায় বঙ্গে ভোটের এই নির্ঘণ্টে কেন্দ্রের শাসকদল বাড়তি একটু সুযোগ পেয়ে গেল। কারণ বাকি চার রাজ্য অর্থাৎ কেরল, অসম, তামিলনাড়ু, পুদুচেরিতে ভোটগ্রহণ পর্ব ৬ এপ্রিল শেষ হয়ে যাচ্ছে। তখনও বঙ্গে আরও পাঁচটি দফায় ভোট বাকি থাকছে। ফলে কেন্দ্রের শাসক দলের নেতারা সদলবলে দফায় দফায় রাজ্যে এসে ভোট প্রচারে ঝাঁপানোর সুযোগ পেয়ে গেলেন। রাজ্য বিজেপি নেতারা তো চেয়েইছিলেন বাংলার ভোটের দফা বাড়ানো হোক। ভোট হোক পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে। রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্বীকারও করেছেন, তাঁরা দফা বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। এক দলবদলু নেতা তো সুর আগেই বেঁধে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ভোট দিদির নয়, দাদার পুলিসই করাবে। সত্যিই তো, ভোট ঘোষণার আগেই রাজ্যে যত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে তা অতীতে কখনও দেখেনি বাংলা। এও এক দৃষ্টান্ত হয়েই রইল। বাংলা ছাড়া অন্য যে চার রাজ্যে ভোট হচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে অশান্ত অসমে তিন দফায় এবং অন্য রাজ্যগুলিতে এক দফায় ভোট হবে। অতীতেও নিত্য অশান্তি গণ্ডগোলে জেরবার জম্মু-কাশ্মীরেও এত দফায় কখনও ভোট হয়নি। প্রশ্ন হল, বাংলার আইনশৃঙ্খলা কি অশান্ত রাজ্যগুলির থেকেও খারাপ? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে? বাংলা ব্যতিক্রম! কারণ বিজেপি’র লক্ষ্যই যে বাংলা দখল।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় স্বভাবতই পদ্ম শিবির খুশি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ম্যারাথন এই ভোট গ্রহণ পর্ব থেকে কে কতটা ফায়দা তুলতে পারল সে উত্তর পাওয়া যাবে ২ মে গণনার পর। কিন্তু ভোটকে কেন্দ্র করে কোনও অশান্তি হোক তা রাজ্যের মানুষ চান না। চান না ভোটে রক্ত ঝরুক। তাঁরা এও জানেন, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বঙ্গ ভোটে এমনটা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করুক নির্বাচন কমিশন। কারও অঙ্গুলিহেলনে নয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকুক। ভোটাররা নির্ভয়ে যাতে নিজের ভোটটি দিতে পারেন তার ব্যবস্থা হোক। ভোট হোক অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। তাহলেই বঙ্গের আপামর জনসাধারণ নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানাবে। 

28th     February,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ