বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

বিজেপির বাতিল তত্ত্ব 

ইঞ্জিন। শব্দটি যন্ত্রসভ্যতার সমবয়সি। অর্থাৎ যথেষ্ট পুরনো। বহু ব্যবহারে অনেক জিনিস মানুষের কালচারের অঙ্গ হয়ে যায়। তবু একসময় জীর্ণ মনে হয় তাকে। তখন তাকে নিয়ে বাড়তি কৌতূহল আর অবশিষ্ট থাকে না। অপরিচয়ের ভীতি যেমন থাকে, তেমনি স্বাভাবিক হল অতি পরিচয়ের অবজ্ঞা। কিন্তু সম্প্রতি ব্যতিক্রমীভাবে আমাদের চর্চার অঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছে অতি ব্যবহারে জীর্ণ ‘ইঞ্জিন’ শব্দটি। সৌজন্যে রাজনীতি। বাংলার আসন্ন ভোট বিরাটভাবে আবর্তিত হচ্ছে ইঞ্জিন শব্দটিকে ঘিরে। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির তিন মাথা হলেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। তাঁদের মেঠো ভাষণে বারবার উঠে আসছে ‘ডবল ইঞ্জিন’ শব্দ বন্ধটি। যে সমন্বিত যন্ত্রাংশ শক্তির সাহায্য নিয়ে যানবাহনকে গতিশীল রাখে তাকে ইঞ্জিন বলে। গাড়ি নামক একটি বিরাট ভারী শরীরকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব ইঞ্জিনের। তাই চলার পথে ইঞ্জিনের কদর তর্কাতীত। এখন প্রশ্ন হল, আমরা কোন ইঞ্জিনের উপর ভরসা রাখব? অবশ্যই সচল হবে সেটি। আর হবে মজবুত এবং যুগোপযোগী। কোনও কোনও যন্ত্র একাধিক ইঞ্জিনের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটিই যথেষ্ট। তবু দ্বিতীয়টি ‘ব্যাক আপ’ বা আপৎকালীন প্রয়োজনে রেডি রাখা হয়। আরও প্রশ্ন হল—দু’টি ইঞ্জিনের একটি যদি অচল হয় তবে ডবল ইঞ্জিনের বেনিফিট পাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে যাহাই সিঙ্গল ইঞ্জিন, তাহাই ডবল ইঞ্জিন। আর যদি দু’টি ইঞ্জিনই খারাপ হয় তবে তার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হয় না। জোড়া বিকল ইঞ্জিনের গাড়ির দশা গোরুর গাড়ি, এমনকী ঠেলা রিকশর চেয়েও খারাপ।
ভোটের বাজারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বাংলা বাজারে ডবল ইঞ্জিন তত্ত্ব আমদানি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি অপদার্থ সরকারের নেত্রী। তাঁর আমলে বাংলার মানুষের নাকি দুর্দশার অন্ত নেই। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে বিজেপিওয়ালাদের দাবি, তাঁরা যেন দু’হাত ভরে বিজেপি প্রার্থীদের আশীর্বাদ করেন। তাহলে বিজেপি নিশ্চিতভাবে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে দেবে। এটি বাঙালির অধিকার। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী সাত দশকেও বাঙালিকে তা দিতে পারেননি বিধানচন্দ্র রায় কিংবা জ্যোতি বসু। মমতার কথা তো বলাই বাহুল্য! কথা রাখতে বিজেপি নাকি ব্যর্থ হবে না। কেন? কারণ এখানে বিজেপির সরকার হলে বাংলা এগতে থাকবে ডবল ইঞ্জিনের জোরে। মানে রাজ্য সরকার তো থাকবেই, সঙ্গে বিশেষভাবে পাবে আন্তরিক কেন্দ্রীয় সরকারকেও। যাঁরা এই কথা বলছেন, তাঁরা কি বিস্মৃত হয়েছেন, সংবিধান বলে দেশের প্রতিটি সরকার এমনিতেই ডবল ইঞ্জিনের! ভারতে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মেনে। কেন্দ্রে এবং রাজ্যগুলিতে যে-কোনও দল বা জোটের নির্বাচিত সরকার থাকতে পারে। কেউ কারও কাছে অচ্ছুৎ নয়। বরং তারা সমন্বয়ের নীতিতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে যাবে, এটাই ঐক্যবদ্ধ ভারতের কনসেপ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বা জোটের বিরোধী যেসব সরকার বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনওভাবেই অসহযোগিতা করা চলে না। কোনওভাবে বঞ্চনাও করা চলে না তাদের। যদি কোনও কেন্দ্রীয় শাসক সেটি করে থাকে তবে তারা নিশ্চিতভাবে সংবিধানকে অমান্য করছে, সেটি সংবিধানের অপমানও। এখানেই নস্যাৎ হয়ে যায় বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের মুখনিঃসৃত ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব।
আরও একটি প্রশ্ন এই প্রসঙ্গে আসে, তথাকথিত ডবল ইঞ্জিন সত্যিই কি কার্যকরী? পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরায় অতীতে একাধিক বার কংগ্রেসের ডবল ইঞ্জিন চালু ছিল। তাতে এই রাজ্যগু঩লির কী লাভ হয়েছিল? ত্রিপুরা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি বিজেপির ডবল ইঞ্জিনে এখন চলছে কিংবা কিছুদিন আগে চলেছে। এই রাজ্যগুলির কোনটিকে দেশবাসীর কাছে স্বর্গরাজ্য মনে হয়েছে? সদ্যপ্রকাশিত কেন্দ্রীয় তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরাসহ বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের বেশিরভাগ রাজ্য বেকারত্ব দূর করার প্রশ্নে ডাহা ফেল। সেই তুলনায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট সিঙ্গল ইঞ্জিনের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, যে-রাজ্যের কাণ্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাই প্রমাণ হয় যে ইঞ্জিনের সংখ্যা মোটেই গুরুত্ব নয়, ইঞ্জিনের কার্যকারিতাই শেষ কথা। একটি মজবুত ও যুগোপযোগী ইঞ্জিন থাকাই যথেষ্ট। দশ বছর যাবৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ। বাংলার সরকারের কাজ ও সাফল্য দেখে এই সার্টিফিকেট মোদি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকই বারবার দিতে বাধ্য হয়েছে। ডবল ইঞ্জিনের তত্ত্বটির আদর্শ ঠাঁই বাজে কাগজের ঝুড়ি। 

26th     February,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ