বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

উপযুক্ত ও দ্রুত তদন্ত হোক 

ঠিক তিন বছর আগের ঘটনা। দত্তক নেওয়ার নামে বিদেশে শিশু বিক্রি ও পাচার করার অভিযোগ ওঠে জলপাইগুড়ির একটি বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় জড়িয়ে যায় বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার এক নেত্রীর নাম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হোমের এক কর্ত্রীকে সহযোগিতা করেছিলেন। সিআইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। প্রত্যক্ষভাবে অভিযুক্ত না-হলেও বিজেপির দুই সাংসদেরও নাম (তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা) চার্জশিটে ছিল। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক চলেছে দীর্ঘদিন। চাপানউতোরে তোলপাড় হয়েছে সংসদ। বিশেষভাবে আন্দোলিত হয়েছে সারা বাংলার রাজনীতি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল রাজদীপ ধনকরও একসময় অংশ নিয়েছেন এই বিতর্কে। সেই চাঞ্চল্যকর মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ফের অন্য এক অপরাধের অভিযোগে জড়াল বিজেপিরই অন্য এক নেত্রীর নাম। পুলিস সূত্রের খবর, শুক্রবার নিউ আলিপুর থানার পুলিস ৯০ গ্রাম কোকেনসহ বিজেপির এক যুব নেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর এক সঙ্গীসহ দু’জনকে। ধৃত মহিলা একজন পরিচিত মডেল। তিনি কলকাতার বাসিন্দা। একসময় দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার বিজেপির পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। দলের প্রভাবশালী মহলে তাঁর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিস। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি থেকে রাজ্য সভাপতি পর্যন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে তাঁর ছবি পুলিসের হাতে রয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, তাদের কাছে খবর ছিল দামী গাড়িতে চেপে এক সুন্দরী মহিলা মাঝেমধ্যেই নিউ আলিপুর এলাকায় প্রবেশ করছেন। গাড়ি থামিয়ে কিছু ‘সামগ্রী’ ডেলিভারি করেই তিনি এলাকা ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছেন। রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপর পুলিস শুক্রবার দুপুরে সেখানে জাল বিস্তার করে। ‘সোর্স ইনফরমেশন’ অনু্যায়ী, ওই মডেল-রাজনীতিক যথারীতি এন আর অ্যাভিনিউতে গাড়ি নিয়ে হাজির হওয়া মাত্রই পুলিস তাঁকে আটক করে। পুলিসের দাবি, তখন তাঁর ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৯০ গ্রাম কোকেন পেয়েছে তারা, যা একটি নিষিদ্ধ মাদক।
বাংলার হাইভোল্টেজ ভোটের মুখে এমন একটি খবর নানা মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলার শাসক দল তৃণমূল এবং একাধিক বিরোধী দলও এনিয়ে নীতির রাজনীতির ধ্বজাধারী বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। তবে বিষয়টি বিজেপি-বিরোধীদের আক্রমণে আর সীমাবদ্ধ নেই। গেরুয়া শিবিরকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন মাদক-কাণ্ডে ধৃত বিজেপি নেত্রী স্বয়ং। শনিবার ধৃত নেত্রী অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি চক্রান্তের শিকার তাঁর তর্জনীর লক্ষ্য, দলের এক কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের ঘনিষ্ঠ এক নেতা! সেই তরুণ নেতা ধৃত মডেলের অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। তা সত্ত্বেও ওই তরুণ নেতার গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হয়েছেন ধৃত মডেল। অন্যদিকে, বিজেপির তরুণ নেতাটি বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, ধৃত নেত্রী পুলিসি হেফাজতে থেকেও মিডিয়ার সামনে এসব কথা কী করে বলতে পারছেন! সোজা কথায়, মাদক পাচার কাণ্ডকে কেন্দ্র করে বাংলায় বিজেপির ঘরেই জোর অশান্তি বেধেছে। অনুমান করা যায়, সময় ভোটের দিকে যত এগবে এই বিতর্ক ততই চড়া মাত্রা পাবে। দেশবাসীর অভিজ্ঞতা বলে, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের দোহাই পেড়ে অতীতে বহু অপরাধের ঘটনা থেকে রাজনীতিকরা বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছেন। সেই তুলনায় কারাদণ্ড ভোগের সংখ্যা নগণ্য।
তাই এই মামলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগাম জল্পনা না করাই ভালো। প্রশাসনের উচিত, এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা। তদন্ত ও বিচার দ্রুত শেষ করা। কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিবাদের মধ্যে পড়ে আইনি প্রক্রিয়া কোনওভাবেই যেন ব্যাহত না হয়। তাতে প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের ধারণা খারাপ হতে পারে। রাজনীতির বল্গাহীন দুর্নীতিকরণ এবং দুর্বৃত্তায়ন দেখে রাজনীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই বিরূপ হয়ে উঠেছে। যুব সমাজের মধ্যে এই প্রবণতার পরিণাম কল্যাণকর নয়। দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারীরা যুব শ্রেণীর মধ্য থেকেই উঠে আসেন। প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা এবং রাজনীতির প্রতি আস্থা ফেরাতে হলে যে-কোনও গুরুতর অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দ্রুত বিচার সম্পন্ন হওয়া দরকার। 

22nd     February,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ