বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

জবাব দিল পাঞ্জাব

মোদি সরকারের তৈরি তিনটি কৃষি আইন নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। গত বছরের ৯ আগস্ট লোকসভায় কৃষি বিল পেশ করা হয়। সেদিনই আপত্তি জানায় বিরোধীরা। এমনকী এনডিএ শরিকদেরও একাংশ বিলের বিরোধিতা করে। যারা আপত্তি জানিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের একটাই দাবি ছিল, বিলগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। কারণ, এই বিল আইনে পরিণত হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি, যা আজও ভারতের অর্থনীতির ভিত্তি। কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অর্থ, প্রত্যক্ষভাবে বিপন্ন হবেন কৃষকরা। প্রান্তিক চাষি থেকে খেতমজুর শ্রেণিরও লোকসান হবে পরোক্ষে। অন্যদিকে, লাভের গুড় খেতে থাকবে কর্পোরেটরা। স্বাধীন ভারতের কৃষি ও কৃষকের ভবিষ্যতের মধ্যে ব্রিটিশ ভারতের নীলচাষের বিভীষিকাময় দিনগুলো দেখতে পাচ্ছেন অনেকে! কিন্তু মোদি সরকার বিরোধীদের হাজার আপত্তি, প্রতিবাদ, পরামর্শের কিছুই কানে তোলেনি। বরং বিল তিনটি বেশ তড়িঘড়ি সংসদের উভয় কক্ষে পাশ করিয়ে নিয়েছে সরকার পক্ষ। 
‘সর্বনাশা’ কৃষি বিল আইনে পরিণত হতেই আন্দোলন আছড়ে পড়েছে রাজধানীর উপকণ্ঠে। ২৬ নভেম্বর শুরু হওয়া আন্দোলন তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ হয়ে দক্ষিণ ভারত এবং পূর্ব ভারতেরও নানা অংশে। পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের নানা প্রান্তের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষক জমায়েতে যোগ দিয়েছেন, সংহতির বার্তা নিয়ে। কানাডা, ব্রিটেন, আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা অংশের অসংখ্য গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। খোদ রাষ্ট্রসংঘ বলেছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কৃষকদের অধিকার। একাধিক বিশ্ববন্দিত সেলিব্রিটিও কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ভারত সরকারের মনোভাবের পরোয়া না করে। এমনকী, যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন বিতর্কিত কৃষি আইনের কিছু ভালো দিকের উল্লেখ করেও কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে কুণ্ঠিত হয়নি। সব মিলিয়ে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে স্বাধীন ভারতে তা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। শুধু দেশে-বিদেশেই প্রতিক্রিয়া হয়নি, নাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের জোটকেও। এনডিএ থেকে সবার আগে বেরিয়ে গিয়েছে অত্যন্ত পুরনো এবং শক্তিশালী পার্টনার অকালি দল। এনডিএ-র আরও একাধিক শরিক দল নানাভাবে বার্তা দিয়েছে বিজেপি দল এবং মোদি সরকারকে। তবু, আইনগুলো বলবৎ করার ব্যাপারে সরকার একগুঁয়ে মনোভাব ছাড়েনি। শুধু আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে একাধিকবার; রাজি হয়েছে আইনের সামান্য কিছু সংশোধনে। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজার কথা নয়, ভেজেওনি। সরকার হয়তো ভেবেছে, আর পাঁচটা ব্যাপার যেভাবে ম্যানেজ করে নিতে অভ্যস্ত, এটাও সেরকমভাবে ম্যা঩নেজ হয়ে যাবে; পুরনো হয়ে গেলে থিতিয়ে যাবে কৃষক আন্দোলনও। কিন্তু অন্যান্য ক্ষোভ-বিক্ষোভের সঙ্গে এই আন্দোলনের তফাতটা কৃষকরা বুঝিয়ে দিয়েছেন ভোটের বাক্সে। পাঞ্জাবের মানুষ আপাতত হাতের কাছে পেয়েছেন পুরসভা এবং নগর পঞ্চায়েতের ভোট। যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন সেটুকুরই সদ্ব্যবহার করেছেন তাঁরা সুচারুভাবে। আটটি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সবক’টিই পাঞ্জাবের মানুষ কংগ্রেসকে উপহার দিয়েছে। ৫৩ বছরের মধ্যে ভাতিন্দা কর্পোরেশন এবারই প্রথম পেল কংগ্রেস। মোট ১০৯টি পুরসভা এবং নগর পঞ্চায়েতেরও বেশিরভাগ গিয়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে। বিজেপির প্রতীকে সানি দেওল এমপি হয়েছেন গুরদাসপুর থেকে। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন ২০১৯-এ। মাত্র দেড় বছরে সেখানে বিজেপির ভোটে এমন ধস নেমেছে যে গুরদাসপুর কর্পোরেশনে একটিও আসন তারা পায়নি। বহু পুরসভা ও পুর কর্পোরেশন এই ভোটে বিজেপিকে স্রেফ শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। এমনকী, বহু আসনে বিজেপি পুওর ফোর্থ! 
তৃণমূল স্তরের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভোটে কংগ্রেস যে সাফল্য পেয়েছে তা অভাবনীয়, সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধীও হয়তো এতটা প্রত্যাশা করেননি। কংগ্রেসের এই সাফল্যের পিছনে রাহুল গান্ধীর কৃতিত্বের চেয়ে কৃষক এবং গণতান্ত্রিক মানুষের চেতনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্বৈরাচারী বিজেপিকে যোগ্য জবাব দিয়েছে পাঞ্জাব। রাজনৈতিক মহলে এই ভাবনা সঞ্চারিত হচ্ছে যে, ‘পাঞ্জাব এফেক্ট’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে ভারতের কোনায় কোনায়। পশ্চিমবঙ্গসহ পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে খুব শিগগির। পাঞ্জাবের এই ছবি বিজেপি-বিরোধীদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করছে। বাংলাকে নিয়ে বিজেপির স্বপ্নভঙ্গ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। 

19th     February,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ