পার্ল: ফরম্যাট বদলাল। পাল্টাল ভেন্যু। পরিবর্তন ঘটল নেতৃত্বেও। তবু জয়ের রাস্তায় ফিরল না ভারত। বোল্যান্ড পার্কে বুধবার সিরিজের প্রথম একদিনের ম্যাচে ৩১ রানে পরাজিত টিম ইন্ডিয়া। ২৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে আট উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ ২৬৫ রান। এই ফরম্যাটে নেতা হিসেবে অভিষেক সুখের হল না লোকেশ রাহুলের। দলের হারের পাশাপাশি নিজেও রান পেলেন না তিনি। টস হার দিয়ে শুরু। শেষ হল সিরিজে ০-১ পিছিয়ে গিয়ে।
ওভার প্রতি ছয় রানের টার্গেট ছিল ভারতের সামনে। অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা ও রাসি ফন ডার ডুসেন সেঞ্চুরি করেছিলেন বলেই তিনশো ছুঁইছুঁই রানে পৌঁছেছিল হোম টিম। জবাবে শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি ও শার্দূল ঠাকুর হাফ-সেঞ্চুরি পেলেও হার এড়াতে পারল না ভারত। অথচ, লোকেশ দ্রুত ফেরার পর দ্বিতীয় উইকেটে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে কোহলির জুটি আশার আলো জ্বালিয়েছিল। যোগ হয়েছিল ৯২ রান। শেষ পর্যন্ত ৮৪ বলে ৭৯ করে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনারটি। শিখর ফেরার পর টিম ইন্ডিয়া তাকিয়ে ছিল কোহলির দিকে। এমনিতেও ক্রিকেট মহলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ভিকে। নেতৃত্বের রাজমুকুট ছেড়ে পাঁচ বছর পর ফের কারও অধীনে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে বেশ সাবলীল দেখাচ্ছিল তাঁকে। মনে হচ্ছিল, শতরানের জন্য দু’বছরের অপেক্ষার অবসান হতে পারে পার্লে। কিন্তু তা এল কোথায়? একদিনের ক্রিকেটে ৬৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরই ফিরলেন ভিকে।
এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল ভারতের মিডল অর্ডার। শ্রেয়স আয়ার (১৭), ঋষভ পন্থ (১৬), অভিষেককারী বেঙ্কটেশ আয়ার (২), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৭), ভুবনেশ্বর কুমাররা (৪) ডাহা ব্যর্থ। শেষবেলায় শার্দূল ঠাকুর হাফ-সেঞ্চুরি না করলে আরও করুণ দেখাত ভারতীয় ইনিংস। অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে যশপ্রীত বুমরাহের সঙ্গে শার্দূলের ৫১ রানের জুটি বড় লজ্জার হাত থেকে কিছুটা বাঁচাল দলকে। তবে ব্যাটিং কম্বিনেশন নিয়ে প্রশ্ন থাকলই। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে যদি বেঙ্কটেশকে ব্যবহারই না করা হয়, তাহলে খেলিয়ে লাভ কী! সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে আসা উচিত সূর্যকুমার যাদবের। ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, ঈশান কিষাণরাও তো বসে রয়েছেন ড্রেসিং-রুমে! কোচ রাহুল দ্রাবিড় পরের ম্যাচে কী দল সাজান সেদিকে নজর থাকবে।
টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬৮ রানে তিন উইকেট খুইয়ে চাপে ছিল তারা। এই সময়ই ত্রাতা হয়ে ওঠেন বাভুমা ও ডুসেন। চতুর্থ উইকেটে দু’জনের জুটিতে ওঠে ২০৪ রান। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে এটা দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বাধিক রানের জুটি। ডুসেন ৯৬ বলে ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। বাভুমা ফেরেন ১৪৩ বলে ১১০ রান করে। তাঁর ইনিংসে ছিল আটটি বাউন্ডারি। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭২ রান দেন শার্দূল। বিবর্ণ ভুবনেশ্বর কুমার, যুজবেন্দ্র চাহালও। ২০১৭-র পর প্রথমবার একদিনের ম্যাচ খেলতে নামা অশ্বিন দেন ৫৩ রান। ভারতের সফলতম বোলার বুমরাহ (২-৪৮) একা আর কী করবেন!
স্কোরবোর্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা: ডি’কক বো অশ্বিন ২৭, মালান ক পন্থ বো বুমরাহ ৬, বাভুমা ক রাহুল বো বুমরাহ ১১০, মার্করাম রান আউট (বেঙ্কটেশ) ৪, ডুসেন অপরাজিত ১২৯, মিলার অপরাজিত ২, অতিরিক্ত ১৮, মোট (৫০ ওভারে, ৪ উইকেটে) ২৯৬। উইকেট পতন: ১-১৯, ২-৫৮, ৩-৬৮, ৪-২৭২। বোলিং: বুমরাহ ১০-০-৪৮-২, ভুবনেশ্বর ১০-০-৬৪-০, শার্দূল ১০-১-৭২-০, অশ্বিন ১০-০-৫৩-১, চাহাল ১০-০-৫৩-০।
ভারত: লোকেশ ক ডি’কক বো মার্করাম ১২, শিখর বো কেশব ৭৯, কোহলি ক বাভুমা বো শামসি ৫১, পন্থ স্টাম্পড ডি’কক বো ফেহলুকায়ো ১৬, শ্রেয়স ক ডি’কক বো এনগিডি ১৭, বেঙ্কটেশ ক ডুসেন বো এনগিডি ২, অশ্বিন বো ফেহলুকায়ো ৭, শার্দূল অপরাজিত ৫০, ভুবনেশ্বর ক বাভুমা বো শামসি ৪, বুমরাহ অপরাজিত ১৪, অতিরিক্ত ১৩, মোট (৫০ ওভারে, ৮ উইকেটে) ২৬৫। উইকেট পতন: ১-৪৬, ২-১৩৮, ৩-১৫২, ৪-১৮১, ৫-১৮২, ৬-১৮৮, ৭-১৯৯, ৮-২১৪। বোলিং: মার্করাম ৬-০-৩০-১, জানসেন ৯-০-৪৯-০, কেশব ১০-০-৪২-১, এনগিডি ১০-০-৬৪-২, শামসি ১০-১-৫২-২, ফেহলুকায়ো ৫-০-২৬-২।
৩১ রানে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা।
ম্যাচের সেরা ফন ডার ডুসেন।