বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
খেলা
 

চুক্তি-গেরোর দায় সমর্থকদের নয়,
ময়দানে নামুক ইস্ট বেঙ্গল

সোমনাথ বসু, কলকাতা: ইস্ট বেঙ্গল মানে লাল-হলুদ আবেগ। ইস্ট বেঙ্গল মানে ডার্বি। শতবর্ষ পেরিয়েও ইস্ট বেঙ্গল মানে ঘাসের উপর আগুন ঝরানো। মাঠের বাইরে নয়। চুক্তির নামে গত দশ মাস ধরে ময়দানের তাঁবু ঘিরে যা চলছে, তা এবার শেষ হওয়া প্রয়োজন। চুলোয় যাক চুক্তি... আমাগো দলটা কি মাঠে নামছে? এটাই শেষ প্রশ্ন। হক কথা। চূড়ান্ত ধ্যাষ্টামিতে ক্লাবটাই যে এখন ছন্নছাড়া। প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিজেদের সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। আর চুক্তিজটে ভুগতে হচ্ছে লাল-হলুদকে। তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, ফুটবল বেঁচে থাকে সমর্থকের মধ্যে। আর সমর্থক বেঁচে থাকে তাঁর ক্লাবে। এই আবেগকে কি এতটুকু সম্মান করা যায় না? ক্লাব কর্তা এবং ‘পৃষ্ঠপোষকদের’ মধ্যে চলতে থাকা এই দীর্ঘ টালবাহানার দায় সমর্থকরা কেন নেবেন? তাঁদের একটাই দাবি, ইস্ট বেঙ্গল খেলুক। 
বুধবার সন্ধ্যায় টেলিফোনের ওপার থেকে ভেসে এল বর্ষীয়ান কণ্ঠস্বর। একটানা কথা বললে শ্বাসকষ্ট হয়। তবু যন্ত্রণা বেরিয়ে আসে অবলীলায়, ‘ইনভেস্টর-ক্লাব কর্তাদের ঝগড়া তো কলতলায় পৌঁছেছে। দু’পক্ষই ধৃতরাষ্ট্র। ইস্ট বেঙ্গলের ভালো তো আর কেউ দেখতে পারছে না। টিম না করে শুধু আইনি কূটকচালি। মাঠে না খেললে আমাদের সব চলে যাবে।’ এরপর লম্বা শ্বাস নিয়ে বললেন, ‘টার্মশিট ও চুক্তিপত্রের মধ্যে কী পার্থক্য তা জানি না। তেমন আগ্রহও নেই। শুধু জানতে চাই, দল কি আইএসএল খেলবে?’ লগ্নিকারী সংস্থা ও কর্তারা কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন... অনেক সময় দিয়েছেন ক্লাবপ্রেমীরা। আর কত? 
আসলে, গত সেপ্টেম্বরে শ্রী সিমেন্টকে ইনভেস্টর হিসেবে পেয়ে আশার আলো দেখেছিলেন ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকরা। কিন্তু দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ম্লান হয়েছে। অক্টোবর থেকেই শুরু উভয়পক্ষের চাপানউতোর। যার প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সে। গত আইএসএলে নবম হয়েই থামতে হয়েছিল লাল-হলুদ ব্রিগেডকে। আর এবার? খেলার সম্ভাবনা ধোঁয়াশায় ভরা। ক্লাব অন্ত প্রাণ অধিকাংশ সমর্থকই চাইছেন, চুক্তিজট কাটিয়ে দেশের সেরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করুক লাল-হলুদ ব্রিগেড। আর এই কারণেই বুধবার দুপুরে ক্লাবমুখো হয়েছিলেন হাজার খানেক অনুরাগী। দেখালেন বিক্ষোভও। তাঁদের সামাল দিতে পুলিসের পাশাপাশি প্রস্তুত ছিল ক্লাবকর্তাদের অনুগামীরাও। অর্থাৎ, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে সমর্থকদের মধ্যেও বিভাজনরেখা সুস্পষ্ট। সবাই নাকি ক্লাবের শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু উভয় পক্ষের চাহিদা বিপরীতধর্মী। এই সমীকরণ মোটেই ইতিবাচক নয়। সাত কিংবা আটের দশকে লাল-হলুদ গ্যালারিতে প্রায় প্রতিটি বিকেল কাটানো সমর্থকদের সিংহভাগের বক্তব্য, ‘জট কাটানোর জন্য লগ্নিকারী সংস্থা এবং কর্তাদের স্বার্থত্যাগ প্রয়োজন। দু’পক্ষই যদি নিজেদের গোঁ ধরে বসে থাকে তাহলে তো ক্ষতি ক্লাবেরই। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব তো ফুটবলের জন্য বিখ্যাত। ঐতিহ্য, গরিমা--সবই মাঠে খেলে। আইনি জটিলতার কারণে ফুটবলটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।’
লগ্নিকারী সংস্থার কাছেই এখন স্পোর্টিং রাইটস। দল গড়ার কর্তব্য তাই তাদেরই। কিন্তু চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে কর্তারা সই না করলে শ্রী সিমেন্ট এক পা’ও এগতে রাজি নয়। কর্তাদের পাল্টা দাবি, একাধিক শর্ত না মানলে তাঁরা সই করবেন না। কারণ, টার্মশিট ও মূল চুক্তিপত্রের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যা মেনে নিতে নারাজ লগ্নিকারী সংস্থাটি। এই নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। এটিকে মোহন বাগান, বেঙ্গালুরু এফসি সহ অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি খেতাবের লক্ষ্যে দল গুছিয়ে নিলেও এসসি ইস্ট বেঙ্গলে শুধুই অন্ধকার। ক্ষমতার অলিন্দে বসে থাকা উভয় পক্ষের কর্তারা একে অপরকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ। অর্থের জোগান দিচ্ছে বলে লগ্নিকারী সংস্থাটির সর্বগ্রাসী চাহিদা মেনে নিতে পারছেন না একদল সমর্থক। আবার অনেকেরই মনে হয়েছে, নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্যই চুক্তিপত্রে সই করছেন না কর্তারা। 
আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে চুক্তিজট ছাড়ানোর প্রক্রিয়া চলুক। কিন্তু দল গঠন তো হতেই পারে। প্রিয় দলের ফুটবলাররা বিপক্ষের জালে বল ঢোকালেই তো সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাবেন লাল-হলুদের প্রকৃত সমর্থকরা। গর্বের মশাল জ্বলে উঠবে হৃদয়ের আনাচে কানাচে। আর আইএসএল না খেললে? ডার্বিহীন প্রতিযোগিতা তো বর্ণহীন হবেই। যা নিঃসন্দেহে মেনে নেওয়া কঠিন ইস্ট বেঙ্গল অনুরাগীদের কাছে। কর্তাপ্রেমী হোন বা ফ্যান ক্লাবের সদস্য—দল না খেললে গর্ব করবেন কী নিয়ে? 

22nd     July,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ