বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দক্ষিণবঙ্গ
 

ছেলের মুখাগ্নি করলেন বাবা
ভিক্ষে করবেন, তবু কড়ুই গ্রামের
কেউই আর কেরলে যাবেন না

সংবাদদাতা, কাটোয়া: দীর্ঘদিন ধরে ১০০ দিনের কাজের টাকা পাইনি। জবকার্ড থাকলেও কাজ আর হচ্ছে না। রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ থাকলে কেরল যেতাম না। ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বজন হারিয়ে এমনই আক্ষেপ করছেন মৃতদের পরিবার। আমাদের শখ মিটে গিয়েছে। আর আমরা কেরলমুখো হব না। ছেলেকে হারিয়ে সোমবার এমনই বললেন শোকসন্তপ্ত বাবা কড়ুইয়ের শুকলাল সর্দার। দুর্ঘটনার বীভৎসতা দেখে শোকের পাশাপাশি প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে আতঙ্কের মধ্যে। 
ভাই ছোট্টু সর্দারকে হারিয়ে দিদি পিয়া সর্দার এদিন বলেন, আমাদের সব গরিব খেটে খাওয়া পরিবার। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। আগে ১০০ দিনের কাজ ছিল। অন্তত দু’ বেলা ভাত জোগাড় হয়ে যেত। এখন আর ১০০ দিনের কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়েই কেরল যেতে হয়েছে আমাদের ভাইদের। শুকলালের স্ত্রী সন্তানহারা মা ঝর্না বলেন, সংসার চালাতে না পারলে লোকের কাছে হাত পাতব। তবু আর স্বামীকে কেরলে কাজ করতে যেতে দেব না। কড়ুই গ্রামের অনেক বাড়ির সন্তানকে আর ভিনরাজ্যে কাজে পাঠানোর কথা ভাবতেই পারছেন না বাসিন্দারা। 
জানা গিয়েছে, কড়ুই গ্রামে ছ’ জনের দল করমণ্ডল এক্সপ্রেস চেপে রওনা দিয়েছিল কেরলের উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যে পাঁচজনেরই মৃত্যু হয়েছে। ফিরে এসেছে পাঁচটি লাশ। দুর্ঘটনার পর একমাত্র জীবিত শুকলাল সর্দার। ছেলে ও ভাগ্নে সহ চারজনের মৃতদেহ একই চিতায় দাহ করে এসেছেন। দাহপর্ব সেরে এদিন ভোরে কড়ুই গ্রামে পা রাখতেই গ্রামজুড়ে শুধু স্বজন হারানোর আর্তনাদ। কাটোয়ার কড়ুই এবং কৈথন পাশাপাশি গ্রাম। কড়ুই গ্রামের বাসিন্দা শুকলাল সর্দার রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজে মজুরি বেশি পাওয়া যায়। তাই প্রায় ৮ বছর ধরেই শুকলাল কেরলে কাজ করতে যেতেন। তার সঙ্গে গ্রামের আরও কয়েকজন একই কাজে কেরলে যেতেন। শুকলাল আরও বলেন, আমি এস ৬ কামরায় ছিলাম। সিট না পেয়ে দরজার কাছে বসেছিলাম। সাদ্দাম, ছোট্টু, সৃষ্টি, সঞ্চিত ও কলেজ ছিল একইসঙ্গে। সন্ধ্যার মুখে হঠাৎ বিশাল শব্দের পাশাপাশি ঝাঁকুনি। চারিদিকে ধোঁয়ায় ভরে যায়। বুঝতে পারি অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কামরা থেকে লাফিয়ে নেমে ছোট্টুদের কামরার কাছে ছুটে যাই। দেখি কামরার ভিতরে গাদাগাদি করে রক্তাক্ত অবস্থায় সবাই পড়ে রয়েছে। ছেলেকে তখনই দেখতে পাই। যারা  বেঁচে রয়েছে বলে মনে হয়েছে তাদের আগে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তারপর আমার ছেলের দেহ তুলে নিয়ে যাই। এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই কড়ুই গ্রাম থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুকেশ চট্টোপাধ্যায় সহ গ্রামের কয়েকজন ওড়িশা পৌঁছে যান। রবিবার রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ কাটোয়া শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় ছোট্টু, কলেজ, সৃষ্টি ও সঞ্জিতের দেহ। একই শ্মশানে চারজনকে দাহ করা হয়। ছেলের মুখাগ্নি করেন শুকলাল। মৃত সঞ্চিত সর্দারের তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে সীমা তাঁর বাবার মৃতদেহের মুখাগ্নি করেন।  ছেলে ও ভাগ্নেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ কড়ুই গ্রামের শুকলাল সর্দার৷

6th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ