বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দক্ষিণবঙ্গ
 

হার্টের অসুখে বাবার মৃত্যু, সংসার ও
পড়াশোনা চালাতে চা বিক্রি ছাত্রীর

বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: হার্টের অসুখে বছর তিনেক আগে বাবা মারা গিয়েছেন। মা ছাড়াও বাড়িতে ভাই-বোন রয়েছে। সংসার ও নিজেদের পড়াশোনা চালানোর জন্য রামপুরহাটে চায়ের দোকান খুলেছেন কলেজছাত্রী ঈশা গুপ্তা। নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সের ছাত্রীর মনের জোর এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়চ্ছে। অনেকেই তাঁর দোকানে চা খেতে আসছেন। 
রামপুরহাট শহরের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মহাজনপট্টি এলাকায় ভগ্নপ্রায় বাড়িতে ঈশারা থাকেন। তাঁর বাবা সুনীল গুপ্তা লেবু বিক্রি করতেন। ২০২০সালে হার্টের অসুখে সুনীলবাবু মারা যাওয়ায় তাঁর স্ত্রী মধু গুপ্তা দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন। চরম অর্থাভাব দেখা দেয় পরিবারে। সংসারের দুর্দশা দেখেও কিছু করতে পারছিলেন না ঈশা। বড় ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। তাই অল্প পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করেন। জেরক্সের দোকানে কাগজ বিক্রি করে দু’চার পয়সা আয় করতে থাকেন। তারমধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যান। তবে আয় কম হওয়ায় পড়াশোনা ও সংসার খরচ সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। 
সেইসময় ইউটিউবে মুম্বইয়ের একটি চায়ের দোকানের খোঁজ পান। সেটি তৈরি করেছেন উচ্চশিক্ষিত এক যুবক। বিষয়টি মনে ধরে ঈশার। কিন্তু মেয়ে চায়ের দোকান করবে, সেটা তাঁর মা মানতে পারছিলেন না। দোকান করলে অনার্স নিয়ে পড়ার চাপ কীভাবে সামলাবে, সেই চিন্তায় তিনি আপত্তি জানান। তাছাড়া মেয়ে চায়ের দোকান খুললে এলাকার পাঁচজন কী বলবে, তা নিয়েও ছিল চরম দুশ্চিন্তা। ঈশা মাকে বোঝান, হতাশায় ডুবে না গিয়ে দোকান করে সংসারের টাকা জোগাড় করা অনেক ভালো। তাতে মানুষ খুশিই হবে। মা মেয়ের চাপে মত দেন। তাছাড়া সংসার চালানোর অন্য কোনও উপায়ও তাঁর সামনে খোলা ছিল না। ফলে সামান্য পুঁজি নিয়ে ঠেলাগাড়িতে চায়ে দোকান খুলেছেন ঈশা। একা হাতেই দোকান সামলাচ্ছেন ঈশা। 
লোকজন কী বলছেন? মাটির হাঁড়িতে চা তৈরি করতে করতেই একগাল হেসে ঈশা বলেন, প্রথম দিন অনেকে খুব উৎসাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু শুরুর লড়াইটা ছিল ঘরে ও বাইরে। কোনও কাজই ছোট নয়। ইচ্ছে আছে, চায়ের দোকানটাকে দাঁড় করিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করব। নিজের পরিচিতি গড়ে তুলব। দিনের শেষে ঈশা যখন বাড়ি ফেরেন তখন শরীর আর দেয় না। তবুও বই নিয়ে বসেন। কারণ জীবনে আরও এগিয়ে যাওয়াই তাঁর লক্ষ্য।
ঈশার ভাইবোন পঞ্চম ও নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ঈশা বলেন, নিজেকে অথবা ভাই-বোনকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই এই লড়াই সার্থক হবে। তবে দোকান নিয়ে তিনি রীতিমতো গর্বিত। তাঁর মনের জোর ও দোকানের চায়ের প্রশংসা করছেন অনেকে। এক কাপ চায়ের জন্য তাঁর দোকানে মাঝে মধ্যেই লাইন পড়ছে। সেই ভিড় দেখেই চায়ের দোকান ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন ঈশা।
 নিজস্ব চিত্র   

26th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ