সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: বৃহস্পতিবার রাখিপূর্ণিমার শুরু। নবদ্বীপে বৈষ্ণব মতে আজ, শুক্রবার ঝুলন পূর্ণিমার তিথি ধরে বলদেবচন্দ্রের জন্মদিন অনুষ্ঠিত হবে। এই তিথিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলদেবচন্দ্র। রাধাষ্টমীতে যেমন রাধা, জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন, তেমনই ঝুলন পূর্ণিমা তিথিতে আবির্ভূত হন কৃষ্ণের বড়ভাই বলরাম অর্থাৎ বলদেবচন্দ্র। সেই উপলক্ষে নবদ্বীপ গানতলা বলদেব মন্দিরে সকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বলদেবচন্দ্রের অভিষেক হবে। মন্দির প্রাঙ্গণে চলবে উদয়াস্ত হরেকৃষ্ণ নামগান।
আন্তর্জাতিক বলদেব সঙ্ঘের সম্পাদক তথা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের মহাসচিব কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, এই বলদেব মন্দির ১৯০৪ সালে নবদ্বীপের গানতলা রোডে প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার বুতুনি গ্রাম থেকে বলদেবচন্দ্রের বিগ্রহ নৌকাযোগে নবদ্বীপে আনা হয়। বলদেবচন্দ্র নবদ্বীপে অভিন্ন নিত্যানন্দ রূপে গানতলা রোডে প্রতিষ্ঠিত হন। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রভুপাদ রমণীমোহন গোস্বামী। পরবর্তীতে যতীন্দ্রলাল গোস্বামী, মহেন্দ্রলাল গোস্বামী এবং নিত্যধামগত প্রভুপাদ জীবনকৃষ্ণ গোস্বামী এই মন্দিরকে গৌরধামে ভক্তদের কাছে অন্যতম মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করান।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্মদিন উপলক্ষে বলদেবচন্দ্রের জন্য কিসমিস, কাজু, চেরিফল দিয়ে তৈরি করা হবে প্রায় পাঁচ কেজি ওজনের ছানার কেক। ভক্তদের উপস্থিতিতে সেই কেক কেটে বলদেবকে ভোগ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে মুগেরপুলি, পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, রসবড়া, ময়দা আর কালোজিরার মিশ্রণে ঘি দিয়ে ভেজে তৈরি করা হবে পরিবন্ধ। তাল ও ক্ষীরের মালপোয়া, ছানার পায়েস রয়েছে। সব কিছুই রুপোর থালা, বাটি ও গ্লাসে নিবেদন করা হবে।
দুপুরে ভোগ দেওয়া হবে সুগন্ধী চালের অন্ন, পাঁচ রকমের ভাজা, পুষ্পান্ন, ফুলকপির রসা, ছানার রসা, পটলের রসা ও রকমারি ব্যঞ্জন। এছাড়া আনারস, পেঁপে, আলুবখরার চাটনি, পরমান্ন, দই, মিষ্টিও থাকবে। শেষে সুগন্ধী মশলা যুক্ত পান। এমনকী ভোগ হওয়ার পর বলদেবচন্দ্রকে প্রতিদিনের মতো রুপোর গড়গড়ায় তামাকও দেওয়া হবে।
বলদেবকে পরানো হবে ৩০ ভরি ওজনের সোনার গয়না। মাথায় সোনার মুকুট, গলায় সোনার জড়োয়া সেট, হাতে সোনার চুর, পায়ে সোনার নূপুর। এছাড়া হাতে দেওয়া হবে সোনার সিঙা ও সোনার লাঠি। পরানো হবে কারুকাজ খচিত রাজবেশ। একাদশীর দিন থেকে ঝুলন পূর্ণিমা পর্যন্ত রুপোর সিংহাসনে বলদেবচন্দ্রকে দোলানো হয়। বলদেবের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা মন্দিরে উপস্থিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে রাখিপূর্ণিমা। শুক্রবার সকাল ৭টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত পূর্ণিমা থাকবে। মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, নবদ্বীপের নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণিমার তিথি যদি সূর্য উদয় স্পর্শ করে, তবে সেই দিনটিতে এই তিথি মানা হয়ে থাকে। যে কারণে শুক্রবার রাখিপূর্ণিমাও পালন করা হবে। বলদেব মন্দির ছাড়াও বলদেব আখড়ার কানাই বলাই মন্দিরেও বলদেবচন্দ্রের আবির্ভাব তিথি উদযাপন করা হবে। নিজস্ব চিত্র