আনন্দ সাহা , লালবাগ: নিরোগ ও সুস্থ শরীর গঠনের মূলমন্ত্র নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুলা। এই খেলাধূলাকে জিয়াগঞ্জের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে ১৯৭৪ সালে ডাঃ অমলকুমার সাহা, প্রণবগোবিন্দ মজুমদার, রণেশগোবিন্দ মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, মলয় ভট্টাচার্য, সুশীল সাহা, বিদ্যুৎ দুগার, অজিত সাহা, অমর সাহা, অরুণ বণিক, কুমুদরঞ্জন মণ্ডল, কানাইলাল ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন বিশ্বাস, ত্রিদিব সরকার, উদয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, অলোক রায়দের হাত ধরে ভট্টপাড়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ) আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে আজ অনেকেই নেই। আবার যাঁরা আছেন, তাঁদের অধিকাংশই বয়সের ভারে এবং শারীরিক কারণে ক্লাবে আসতে পারেন না। এদিকে ক্লাবের যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত এবং বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে। ক্লাবের দুর্দিনে চন্দন রাও শক্ত হাতে হাল ধরেন। ৪০-৫০ জন স্থানীয় তরতাজা যুবককে সঙ্গে নিয়ে ক্লাব পরিচালনা করেন। বর্তমানে শিশিরকুমার সাহা, অমৃত গোস্বামী, প্রবীর সরকার, গোবিন্দ সাহা, তন্তু সাহা, অরিজিৎ পাল, শ্যামল সিংহ, দীপ্তেশগোবিন্দ মজুমদার, সর্বেশ্বর দাসরা পূর্বসূরীদের ব্যাটনকে হাতে নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ক্লাব পরিচালনা করছেন। গুটি গুটি পায়ে জিয়াগঞ্জের এই ক্লাব পঞ্চাশের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। ক্লাবের নিজস্ব মাঠ রয়েছে। প্রাচীর ঘেরা বিস্তীর্ণ মাঠে সকাল-বিকেল দু’বেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল খেলা হয়। সকাল ও বিকেলে অনেকেই হাঁটতে আসেন। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরে থেকে প্রতি বছর বিএসএ ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফুটবল প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি টালিগঞ্জ, ভ্রাতৃ সঙ্ঘ সহ কলকাতা ফুটবল লিগের প্রথম ডিভিশনের একাধিক দল অংশগ্রহণ করেছে। ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন প্রদীপকুমার বন্দোপাধ্যায় (পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়), শ্যামসুন্দর মান্নার মতো ভারতীয় ফুটবলের দিকপাল খেলোয়াড়। করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি বছরে ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ফুটবলের পাশাপাশি প্রতিবছর নাইট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এবং ক্যারম প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অতিথি হয়ে এসেছিলেন পঙ্কজ রায়, জ্যোর্তিময়ী শিকদার। খেলাধুলার পাশাপাশি ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিবছর স্বাস্থ্য ও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। ২০০০ সালে ভয়াবহ বন্যা এবং করোনা মহামারী কালে গরিব, নিম্নবিত্ত কয়েকশো পরিবারের হাতে খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ ও আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয়। তাছাড়া সারা বছর ধরে আর্ত, দুঃস্থ মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে ক্লাবের সদস্যরা। আগে ক্লাবে কোনও পুজো হতো না। গত কয়েক ধরে সরস্বতী পুজো হচ্ছে। পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ক্লাবের পক্ষ থেকে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। দুর্গাপুজো না হলেও দশমীর দিন শহরবাসীকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। ক্লাবের সম্পাদক অমৃত গোস্বামী বলেন, খেলাধুলাকে পাখির চোখ করে আমাদের পূর্বসূরিরা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গত ৪৮ বছর ধরে সেই ঐতিহ্য চলে আসছে। সারাবছর ফুটবল অনুশীলন চলে। শীতের কয়েক মাস ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট অনুশীলন হয়। অনুশীলন শেষে ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে টিফিন দেওয়া হয়। যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি নেই তাদের খেলার সামগ্রী দেওয়া হয়। শহরের অন্য মাঠ যখন ফাঁকা পড়ে থাকে তখন বিএসএ ক্লাবের মাঠে দুইবেলা জোরকদমে অনুশীলন চলে।