বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দক্ষিণবঙ্গ
 

উল্টোরথের আগের দিন স্ত্রী লক্ষ্মীর
মানভঞ্জনে মালাবদল করেন জগন্নাথ

অনিমেষ মণ্ডল, কাটোয়া: ভাই বলরাম, বোন সুভদ্রাকে নিয়ে মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে পাড়ি দিয়েছিলেন প্রভু জগন্নাথ। কিন্তু সঙ্গে নেননি স্ত্রী লক্ষ্মীকে। রেগে কাঁই ধনদেবী। পঞ্চম দিন রাতে ‘সুবর্ণ মহালক্ষ্মী’ রূপ ধারণ করে পালকিতে চেপে চললেন গুন্ডিচায়। সঙ্গে নিলেন এক সেবককে।  ক্রুদ্ধ লক্ষ্মীর আসার খবর পেয়েই মন্দিরের প্রধান দ্বার বন্ধের নির্দেশ দেন ‘ভীত’ জগন্নাথদেব। ছাড়ার পাত্র নন লক্ষ্মীদেবীও। যে ভাবেই হোক স্বামীকে ঘরে ফেরাবেনই। তখন তিনি সেবককে দিয়ে প্রভুর কাছে খবর পাঠান। বাড়ি ফেরার সম্মতি জানিয়ে লক্ষ্মীর কাছে উপহার হিসেবে একটি ‘আজ্ঞা মালা’ও পাঠিয়ে দেন জগন্নাথদেব। স্কন্দপুরাণে জগন্নাথ-লক্ষ্মীর মান-অভিমান, মালাবদল নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। আর সেই স্কন্দপুরাণ মেনেই পুজো-উপাচার সবই হয় পুরীর মন্দিরে। একই উপাচার মেনে আজও জগন্নাথের রথযাত্রা পালিত হয় বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের দিগনগর মন্দিরে। উল্টো রথের আগের দিন দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে মালাবদল করেন প্রভু জগন্নাথ। এমন আচার পালিত হয়ে আসছে পুরীর গুন্ডিচা মন্দিরেও। তাই অনেকেই দিগনগরকে একখণ্ড ‘পুরী’ বলেও মনে করেন।    
এমন মনে করার পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তি চন্দ্র একবার পুরীর জগন্নাথদেব দর্শন করতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে এসেই দিগনগরে পুরীর আদলে মন্দির প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন। কথিত রয়েছে, প্রভুর স্বপ্নাদেশ পেয়েই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। পুজোর নিয়মকানুনও বেঁধে দিয়েছিলেন পুরীর মন্দিরের উপাচারকে অক্ষরে অক্ষরে পালনের করার মধ্যে। তথ্য বলছে, ১৭৪০ সালে মারা গিয়েছিলেন কীর্তি চন্দ্র। ফলে অনুমান করা হয়, ওই শতকের কোনও একটা সময়ে তিনি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকে আজও দিগনগরে রথযাত্রা পালিত হয়ে আসছে পুরীর প্রথা মেনেই। এলাকার প্রবীণ নাগরিকরা বলছিলেন, একসময় মন্দিরের গায়ে খোদাই করা ছিল পুরী-দিগনগরকে একসঙ্গে দেখার বাণী—‘নীলাচল ফিরে দিকনাগরে। পারো যদি ঘোরো সম বছরে...।’ 
সেই মহারাজা আজ আর নেই। তবে থেকে গিয়েছে দিগনগরের রথযাত্রায় তাঁর প্রচলিত নিয়মকানুন।  প্রথমের দিকে সেবাইতরাই মন্দিরে প্রভুর সেবা করতেন। ২০০০ সালে গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড তৈরি হয়। সেই থেকেই জগন্নাথদেবের নিত্যসেবা থেকে সবকিছুই মন্দির উন্নয়ন কমিটি দেখভাল করেন। কমিটির কোষাধ্যক্ষ সমর সিংহ, সম্পাদক মাধব রায়রা বলছিলেন, ‘রথযাত্রার প্রথমে মূল মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে চড়িয়ে মাসির বাড়ির উদ্দ্যেশে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাটতলার কাছ থেকে কোলে চড়েন তিনজনই। উলটো রথের আগের দিন হয় লক্ষ্মীযাত্রা। সেদিন লক্ষ্মীর মানভঞ্জনে মাসির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই জগন্নাথদেবের সঙ্গে মালাবদল হয় লক্ষ্মীদেবীর। পরের দিন অর্থাৎ উল্টো রথের দিন প্রভুকে ফের মূল মন্দিরে নিয়ে আসা হয়।’ 
সবমিলিয়ে ইতিহাস সমৃদ্ধ তীর্থস্থান দিগনগর। তাকে ঘিরে এখন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে চাইছে ব্লক প্রশাসন। সংস্কার করা হচ্ছে প্রাচীন মন্দিরটি। নব কলেবরে সাজবে যাত্রীনিবাসও। আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের আদলে এখানে মন্দির সংস্কার করা হচ্ছে। জলটুঙ্গি ঘিরেও হোম স্টে গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

1st     July,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ