বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দক্ষিণবঙ্গ
 

সতীর নথ ও নোয়া পরিয়ে শুরু হয়
আরামবাগের ঘোষালবাড়ির দুর্গাপুজো

নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: সতীর নথ ও নোয়া মা দুর্গাকে পরিয়েই আরামবাগের হাটবসন্তপুরের ঘোষালবাড়ির শতাব্দী প্রাচীন পুজো শুরু হয়। আরামবাগ মহকুমায় এই বাড়ির পুজো সতীবাড়ির পুজো নামে খ্যাত। পুজোয় সতীর নথ ও হাতের নোয়া দেখতে দূর দূরান্ত থেকে বহু সাধারণ মানুষ এখানে আসেন। সতীর মাহাত্ম্য আজও অমলিন এই এলাকায়। পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো আজ সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। ঘোষাল বাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাড়ির পূর্বপুরুষ রামানন্দ ঘোষাল বয়সের কারণে মারা গেলে আরামবাগের এক সতীঘাটে তাঁর মুখাগ্নির ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর স্ত্রী গোঁসাইমণি ঘোষাল ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি সিদ্ধান্ত নেন স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যাওয়ার। তাঁদের দেহ সৎকারের পর গোঁসাইমণির দেহভস্মের সঙ্গে তাঁর নথ ও নোয়া একটি কৌটায় রেখে দেওয়া হয়। সেই নথ ও নোয়া পরিয়েই এই পরিবারে পূজিত হন দেবী দুর্গা। পরিবারের সদস্যদের দাবি, তৎকালীন সময়ে এই অঞ্চলে সতীদাহ প্রথা খুবই প্রচলিত ছিল। যাঁরা সতী হতেন, তাঁরা দেবী রূপে পূজিত হতেন। সেই ঐতিহ্যই পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে মিলেমিশে গিয়েছে।
পরিবারের বর্তমান বংশধর শৈলেন ঘোষাল বলেন, কয়েকশো বছর আগের ওই ঘটনা আজও লোকমুখে আলোচিত হয়। পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের কাছে ওই ঘটনার কথা আমি শুনেছি। পরিবারের সদস্য কৃষ্ণকান্ত ঘোষালকে গোঁসাইমণি স্বপ্নে জানিয়েছিলেন, বাড়ির গোপন এক জায়গায় কৌটার ভিতর দেহভস্মের সঙ্গে নথ ও নোয়া রক্ষিত আছে। তা যেন পুজোর দিনে দেবী দুর্গাকে পরিয়ে দেওয়া হয়। সেই রীতি আজও চলে আসছে। প্রতিবছর দুর্গাপুজোর সময় মহাষষ্ঠীর দিনে দেবী দুর্গাকে সেই নথ ও নোয়া পরিয়ে দেওয়া হয়। এখনও পুজোর সময় প্রথা মেনে রামানন্দ ও গোঁসাইমণির নামে সঙ্কল্প করেন পুরোহিত। পুজোয় অষ্টমীর দিনে লুচি ভোগ নয়, দেবীকে দেওয়া হয় মাছ-ভাত। যে প্রসাদ পেতে প্রতি বছর বহু ভক্তের আগমন হয়। বাড়ির সদস্যরা মনে করেন, সতী গোঁসাইমণিই দেবী দুর্গা হিসেবে এই বাড়িতে পূজিত হচ্ছেন। বলরামপুরের বাসিন্দা চন্দন ভট্টাচার্য বলেন, ঘোষাল বাড়ির পুজো এলাকায় খুবই বিখ্যাত। সতীর নথ ও নোয়া পরানো হয় দেবী দুর্গাকে। প্রতিবারই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখানে পুজো দেখতে আসি। এবারেও যাব। সতীর ঘটনা জড়িয়ে থাকায় কৌতূহলবশত আমার মতো বহু মানুষই পুজোর সময় ঠাকুর দেখতে ভিড় করেন।
আরামবাগ, খানাকুলজুড়ে ইতিহাসের সাক্ষ্য হিসেবে এখনও রয়ে গিয়েছে বহু সতীঘাট। এই এলাকায় একসময় সতীদাহ প্রথা ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাতও হয়েছিল খানাকুলের রাধানগরের রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে। নিঃসন্দেহে এই প্রথা অমানবিক। কিন্তু, তৎকালীন সময়ের সেই স্মৃতি আজও লোকমুখে, পারিবারিক স্মৃতিকথায় উৎসবে-অনুষ্ঠানে ফল্গুধারার মতো বয়ে চলেছে।

28th     September,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ