বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
উত্তরবঙ্গ
 

৭৭ বছরের রুবি বোর্ডিং এখনও
জলপাইগুড়ির অন্যতম মুখ
আসতেন হেমন্ত-মান্না, অমলাশঙ্কর-মলিনাদেবী

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, কলকাতা: মান্না দে আর শমিত ভঞ্জ এসে উঠেছেন আমাদের বোর্ডিংয়ে। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান। তার আগেই তারাদের আসার খবর চাউর হয়ে গেল কীভাবে, কে জানে। ব্যস, ধীরে ধীরে লোকে লোকারণ্য। গেট বন্ধ। উপায় না দেখে আসরে নামলেন অনুষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তাঁর কথায় চিঁড়ে ভিজল। বোর্ডিংয়ের সামনে থেকে সরে অনুষ্ঠান মঞ্চের পথ ধরল জনতা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমরা। এমন ঘটনা একবার নয়, ঘটেছে বহুবার। আসলে সেই সময়ে জলপাইগুড়িতে সেরকম কোনও হোটেল ছিল না। কলকাতা থেকে যে সমস্ত শিল্পীরা অনুষ্ঠান করতে আসতেন, তাঁদের ঠিকানা ছিল একটাই—রুবি বোর্ডিং।
সবুজরঙা তিনতলা বাড়ি। একপাশে পাইস হোটেল। অন্যদিকে বোর্ডিংয়ে ঢোকার রাস্তা। বোর্ডিংয়ের রিসেপশনে বসে সোনালি অতীতের গল্প শোনাচ্ছিলেন প্রবীর দে। বলছিলেন তাঁর বাবার কথা। শুরুর দিনগুলির কথা। রমেশচন্দ্র দে থাকতেন ঢাকার বিক্রমপুরে। একদিন ভিটে-মাটি ছেড়ে অন্য অনেকের মতোই উদ্বাস্তু চাদর গায়ে চলে আসেন জলপাইগুড়িতে। কাজ নেন সাইকেলের দোকানে। কখনও সখনও স্টেশনে বাদাম বিক্রি করতেন। আয় হতো অল্প। কিন্তু জলপাইগুড়ির মায়া ততদিনে জাঁকিয়ে বসেছে ভিতরে। ১৯৪০ সাল নাগাদ একটি চায়ের দোকান দেন থানার সামনে। কয়েকটি চা অফিসের কর্মীদের খাওয়াতে কিনে ফেলেন কয়েকটি থালা-বাসনও। 
১৯৪৬ সালের মার্চ মাসে চা-দোকানের উল্টোদিকের বাড়ির দোতলা ভাড়া নিলেন রমেশচন্দ্র। শুরু হল রুবি বোর্ডিংয়ের পথ চলা। তিন-চারটে ঘরে আটটি চৌকি পেতে ডরমেটরি। সঙ্গে খাবারের ব্যবস্থা। কলকাতা থেকে বিভিন্ন সংস্থার সেলসের কর্মীরা জলপাইগুড়িতে এসে সেখানে উঠতেন। পরের দিকে তিনতলার কয়েকটি ঘরও ভাড়ায় নেন তিনি। এখন যেখানে রুবি বোর্ডিং, সেটা তৈরি হয় ১৯৬৫ সাল নাগাদ। ডুয়ার্সজুড়ে তখন চা, কাঠের ব্যবসার রমরমা। কলকাতা থেকে প্রতি সপ্তাহেই ব্রিটিশ চা ব্যবসায়ী, টিম্বার মার্চেন্টদের ভিড় লেগে থাকত হোটেলে।
শিল্পজগতের নামজাদা ব্যক্তিত্বরা যাত্রা, থিয়েটার বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আসতেন। সেই সময়ে কোচবিহার পর্যন্ত কোথাও তেমন কোনও হোটেল ছিল না। স্বভাবতই প্রায় সকলের গন্তব্য হতো রমেশচন্দ্রের  হোটেল। থিয়েটার জগতে গুরুদাস-মলিনা তখন উজ্জ্বল দুই নক্ষত্র। এখানে থেকে বহু থিয়েটার করেছেন তাঁরা। এসেছেন উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্করও। মাঝেমধ্যেই অনুষ্ঠান করতে এসে থাকতেন মান্না দে, শমিত ভঞ্জ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়রা। আর তাঁদের একবার চোখের দেখা দেখতে হোটেলের বাইরে ভিড় জমাতেন অত্যুৎসাহীরা।
রুবি বোর্ডিংয়ের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রান্না। রমেশবাবু ও তাঁর স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে পূর্ববঙ্গীয় কায়দায় রান্না করতেন ওড়িয়া ঠাকুর। খাবার পরিবেশন করা হতো কাঁসার বাসনে। ৭৫ বছর পেরিয়েও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। রমেশচন্দ্রের মৃত্যুর পর ভাগ হয়ে যায় জলপাইগুড়ির বহু দশকের সাক্ষী এই হোটেল। পাইস হোটেলের দায়িত্বে বড় ও মেজো ভাই প্রণব ও অশোক। মেজো ভাইয়ের মৃত্যুর পর প্রণববাবুই এখন পাইস হোটেল সামলান। বাকি তিন ভাই—প্রবীর, মলয় ও কৌশিক বোর্ডিংয়ের দায়িত্বে। বয়স বাড়লেও এখনও ম্যানেজার রাখেননি তাঁরা। সময় ভাগ করে তিন ভাই মিলেই সামলান পারিবারিক ব্যবসা। ঝড়-ঝাপটা কম যায়নি এঁদের উপর দিয়ে। কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় মন্দা এসেছে। কিন্তু হাল ছাড়েননি। 
এই হোটেল তাঁদের নাড়ির টান। অদৃশ্য এক সুতো বেঁধে রেখেছে প্রজন্মকে। যে বাঁধন জানে উদ্বাস্তু-দেশভাগের যন্ত্রণা আর প্রতিদিনের লড়াইয়ের গল্প।  তিস্তার মতো।  নিজস্ব চিত্র

30th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ