নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি পুরভোটে ‘চরম স্পর্শকাতর’ বুথের সংখ্যা ৮১। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত শহরে চরম স্পর্শকাতর বুথের ওই সংখ্যা ধরেই ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনের রিপোর্ট, এলাকার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বৈরিতা প্রভৃতি পর্যালোচনা করে ওই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভোট নিয়ে হাঙ্গামা রুখতে ‘ব্লু-প্রিন্ট’ তৈরি করছে পুলিস ও প্রশাসন। ইতিমধ্যে তারা এ ব্যাপারে কয়েকবার বৈঠকও করেছে বলে জানা গিয়েছে।
শিলিগুড়ির পুলিস কমিশনার গৌরব শর্মা বলেন, পুরভোট সুষ্ঠুভাবে করাতে ভালনারেবল ও ক্রিটিক্যাল বুথ চিহ্নিত করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে, আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিস সতর্ক রয়েছে। কমিশনের নির্দেশ মতো ভীতি প্রদর্শনকারী ও ঝামেলাকারীদের ‘বাউন্ড-ডাউন’ করা হচ্ছে। ওয়ারেন্ট জারি হওয়া দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে কমিশনের নির্দেশ মতো আরও কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
পুরভোট নিয়ে অনেকদিন আগেই প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় পুলিস ও প্রশাসন। ইতিমধ্যে তারা বুথ ও সচিত্র ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে এবার তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা নিয়ে তৎপর হচ্ছে। ইতিমধ্যে শহরে এসে ভোটের প্রস্তুতির কাজকর্ম খতিয়ে দেখেছেন বিশেষ ও সাধারণ পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের পরামর্শমতোই স্থানীয় পুলিস ও প্রশাসন প্রাথমিকভাবে চরম স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করেছে।
পুলিস ও প্রশাসনের অফিসাররা বলেন, বিগত বিভিন্ন ভোটের রিপোর্ট ও বুথের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে সেই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে বুথস্তরে রাজনৈতিক দলগুলির সম্পর্ক কী রকম, তাও যাচাই করা হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চরম শত্রুতা রয়েছে। তাই সেই বুথগুলিকে চরম স্পর্শকাতর বুথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া, ওই সব জায়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য বেশ কিছু অপরাধীও ভোটের সময় নেমে পড়ে। সেসব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে পুলিসও আগেভাগে প্রস্তুত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রথমে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করেছিল ২২ জানুয়ারি। কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ভোট গ্রহণের দিন পিছিয়ে করেছে ১২ ফেব্রুয়ারি। স্পর্শকাতর ও চরম স্পর্শকাতর বুথের যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তা ২২ জানুয়ারিকে সামনে রেখে। এই তালিকায় চরম স্পর্শকাতর হিসেবে চম্পাসারি, সমরনগর, বাঘাযতীন কলোনি, খালপাড়া, দেশবন্ধুপাড়া, মিলনপল্লি, জ্যোতিনগর, বাবুপাড়া, টিকিয়াপাড়া, সুকান্তপল্লি, নবগ্রাম প্রভৃতি এলাকা রয়েছে। যার অধিকাংশই দার্জিলিং জেলার অধীনে। হাতে গোনা কয়েকটি এলাকা জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে পড়ছে। পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা অবশ্য জানান, প্রতিটি এলাকার উপর নজর রাখা হয়েছে। স্পর্শকাতর ও চরম স্পর্শকাতর এলাকা বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, শিলিগুড়ি পুরসভার অধীনে ওয়ার্ড সংখ্যা ৪৭টি। এতে বুথ রয়েছে ৫০২টি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত শহরে চরম স্পর্শকাতর হিসেবে ৮১টি বুথকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন বুথের সংখ্যা ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি, ১৪টি। এর বাইরে ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আটটি করে, ৯ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ছ’টি করে, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচটি করে, ৪০ ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে চারটি করে, ১, ২, ৫, ১৭, ২২ ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি করে, ৬, ১০, ১৩, ১৯, ২০, ২১, ৩১, ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি করে চরম স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে। অর্থাৎ, শহরে ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতেই উত্তেজনাপ্রবণ বুথ রয়েছে। যা মোট বুথের মধ্যে ১৬ শতাংশেরও বেশি।