বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিদেশ
 

সঙ্গী ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানা
জমজমাট বাংলাদেশের পুজো

মৃণালকান্তি দাস ও সুদীপ্ত সেন, কলকাতা : বাংলাদেশের দেড় হাজার বছরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাক্ষী রমনা কালীমন্দির। ১৯৭১-এর মার্চে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদাররা কামান দেগেছিল মন্দিরের একাংশে। গুলি করে হত্যা করেছিল সেখানকার ঠাকুর, সেবাইত-সহ ৬২ জন ভক্তকে। সেদিন এই কালীমন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পাক বাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অভিযান।
আজ সদর ফটক দিয়ে ঢুকলেই বাঁদিকে দেখা মেলে সেই শ্বেতপাথরের ফলক, তাতে লেখা ৭১-এর শহিদ ৬২ জনের নাম। ডানপাশে শানবাঁধানো পুকুর— মায়ের দিঘি। এই মন্দির লাগোয়া তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ন’মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীর কাছে এই ময়দানেই পাকবাহিনী আত্মসমর্পণও করে। সেই ময়দান আজ বিশ্ব হেরিটেজ।
পাকিস্তানি দখলদাররা স্তব্ধ করতে পারেনি রমনা কালীমন্দিরের ঐতিহ্যকেও। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছর দুর্গাপুজো হয় ঘটা করেই। আজও। রমনা কালীমন্দিরে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়া মানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেন আরও একবার প্রাণ ফিরে পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হওয়ায় মূলত ছাত্রছাত্রীদের ভিড় বেশি এখানেই।
ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির অন্যতম। কথিত আছে, প্রায় ৮০০ বছর আগে এখানে দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছিল। জানা যায়, রাজা বল্লাল সেন একসময়ে বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে জঙ্গলে মাদুর্গার একটি মূর্তি খুঁজে পান। সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন তিনি। সেই থেকেই এই মন্দিরের নাম ঢাকেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরের নাম অনুসারে ঢাকার নামকরণ হয় এমনটাও শোনা যায়। মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহ চারটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এখানে। আজও সাবেকিয়ানাকে সঙ্গী করে সেই পুরোনো স্বাদ বজায় রেখেছে ওপার বাংলা। মায়ের মূর্তিও তৈরি হয় সাবেকি আদলেই। ঢাকার রামকৃষ্ণ আশ্রমের পুজোও বেশ বিখ্যাত। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এই আশ্রম। এখানকার পুজোর মূল আকর্ষণ অষ্টমীর কুমারী পুজো।
ঐতিহ্যের চর্চা হবে আর পুরনো ঢাকার দুর্গাপুজোর নাম উঠবে না, তা-ও কি হয়? শাঁখারিবাজারের দুর্গাপুজো পুরনো ঢাকার মূল আকর্ষণ। শাঁখা, পলা-সহ হরেক মণিহারি সামগ্রীর দোকান রয়েছে এখানে। মোট ন’টি পুজো হয় শাঁখারিবাজারে। প্রতিটি পুজো ৪০ বা ৫০ বছরের পুরনো। এখানকার বেশ কিছু বাড়িতেও দুর্গাপুজো হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশে সবথেকে বেশি পুজো হয় চট্টগ্রামে। শুধু দুর্গা প্রতিমাই নয়, প্যান্ডেল সাজসজ্জাতেও তাক লাগিয়ে দেয় কিছু প্রাচীন পুজো। কিন্তু মাদুর্গার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গত বছর কুমিল্লায় ভয়ানক হিংসার স্মৃতিও ফিরে আসছে বাংলাদেশের কিছু জেলায়। তাই কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুলিস, গোয়েন্দা বাহিনী ও নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যস্ততাও তুঙ্গে।
গত বারের তুলনায় এবছর পুজো বেড়েছে বাংলাদেশে। দেশজুড়ে পুজোর সংখ্যা এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরে। প্রত্যেকটি মণ্ডপে সিসিটিভি লাগানো বাধ্যতামূলক। মণ্ডপগুলিতে মৌলবাদী, কট্টরপন্থীদের হামলা ঠেকাতে সর্বক্ষণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। শারদোৎসবে সম্প্রীতি রক্ষাই হাসিনা সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ।
এসবের মধ্যেই নবমীর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামবে ...। সন্ধ্যারতির ধুনোর গন্ধটা ক্রমেই মৃদু হয়ে আসবে। সাত খিলানের ঠাকুর দালানে জ্বলতে থাকা ঝাড়বাতিতে মেয়াদ ফুরনো মোমবাতির শিখা কাঁপতে থাকবে অবিরত। চারপাশের এত রোশনাই দেখতে দেখতে ফিকে হয়ে আসবে। মনের মাঝে তখন বেজে উঠবে একটাই সুর … ‘নবমী নিশি গো তুমি আর যেন পোহায়ো না।’ নবমীর রাত যত বাড়ে এক অদৃশ্য বিষণ্ণতাও যেন গ্রাস করবে ওপার বাংলার মণ্ডপ থেকে মণ্ডপে। বাড়ির আনাচ কানাচে। এপার বাংলার মতোই।ফের এক বছরের নীরব প্রতীক্ষা!

1st     October,   2022
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ