রূপাঞ্জনা দত্ত, লন্ডন: আফগানিস্তানের মাটি থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার পর ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তালিবান। প্রায় প্রতিদিনই একটু একটু করে দেশের দখলদারি বৃদ্ধি করছে তারা। দিন কয়েক আগে তালিবান এবং বাহিনীর সংঘর্ষের মাঝে পড়ে নিহত হন ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। তালিবানের এই ‘সাফল্য’ই ব্রিটেনের কট্টরপন্থীদের উজ্জীবিত করছে। তাই ব্রিটেনজুড়ে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। ব্রিটেনের জয়েন্ট টেররিজম অ্যাসেসমেন্ট সেন্টারের রিপোর্টেও বলা হয়েছে, যে কোনও সময় দেশে নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই হাত গুটিয়ে বসে নেই প্রশাসন। জঙ্গি দমনে পুলিসের তরফে ঠিক কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, ‘বর্তমান’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সেটাই ব্যাখ্যা করলেন লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিসের কমিশনার ডেম ক্রেসিডা ডিক। পুলিস প্রধানের কথায়, ‘সমালোচনাকে স্বাগত। সেই মতো আমরা নিজেদের উন্নত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি।’
একটা সময় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে নাম লেখানোর জন্য লাইন পড়েছিল পশ্চিমী দেশগুলির তরুণ প্রজন্মের। বাদ যায়নি ব্রিটেনও। আইসিস-বধূ শামিমা বেগম এর জ্বলন্ত উদাহরণ। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কট্টরপন্থী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিটেন ছেড়েছিল সে। এখন ভুল ভেঙেছে একুশের তরুণী শামিমার। তাই দেশে ফেরার জন্য প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরতে হচ্ছে তাকে। শামিমার সূত্র ধরেই পুলিস কমিশনার বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেহেতু যুবসমাজকে নিশানা করা হচ্ছে, তাই আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলছি। স্কুলগুলিতে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।’ তাঁর মতে, যুব সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংস্থাগুলিও এই বিষয়ে সজাগ হলে পুলিসের কাজ অনেকটা সহজ হবে। উদাহরণ হিসেবে পুলিস কমিশনার বলেন, ‘ধরা যাক, দক্ষিণ লন্ডনের পেকহ্যাম থেকে কোনও স্কুল অথবা পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে কারও বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলেন আমাদের কোনও আধিকারিক। সঙ্গে সঙ্গে সেই তথ্য মেট্রোপলিটন পুলিস মারফত পৌঁছে যাবে পেশোয়ার অথবা পাকিস্তানে থাকা আমাদের এজেন্সিগুলির কাছে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট দক্ষ এবং প্রতিনিয়ত উন্নতি ঘটিয়ে চলেছি।’
যুবসমাজের মগজধোলাই করতে যেহেতু ইন্টারনেটকেই হাতিয়ার করা হচ্ছে, তাই মেট্রো পুলিসকেও আগের তুলনায় অনেক বেশি ‘টেক-স্যাভি’ হতে হয়েছে বলে জানান পুলিস কমিশনার। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২৯টি নাশকতার ঘটনা আটকেছে মেট্রোপলিটন পুলিস। যার মধ্যে ১৮টি ঘটনায় কট্টর মৌলবাদীকে সামনে রেখে জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। ১০টি ঘটনার নেপথ্য ছিল কট্টর ডানপন্থা। কমিশনার বলেন, বর্তমানে ব্রিটেনজুড়ে প্রায় ৮০০টি ঘটনার তদন্ত চলছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিকট্টর ডানপন্থার যোগ পাওয়া গিয়েছে।