বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

চরম উপেক্ষিত যাত্রীসুরক্ষা, রিপোর্ট ক্যাগের,সরব বিরোধীরাও
পিঠ বাঁচাতে সিবিআই

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাহানাগা, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ২৪ ঘণ্টা আগের ছবিটাও আর নেই। সাফ হয়ে গিয়েছে মৃত্যুমিছিলের মঞ্চ। কিন্তু বগিগুলির কঙ্কাল এখনও পড়ে রয়েছে... ওই লাইনেরই ধারে। তবে সবুজ রঙের পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে হাড়হিম করা সেই ‘স্মৃতি’। ধীর লয়ে ট্র্যাক দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে ট্রেন। কিন্তু চাপা দেওয়া যাচ্ছে না মোক্ষম দুটো প্রশ্ন—কীভাবে এবং কেন? অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব রবিবার হাওয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। তারপরও সিবিআই তদন্তের সুপারিশে দুর্ঘটনার অন্ধকার দিকগুলো আরও বেশি প্রকাশ্যে চলে আসছে। প্রশ্ন উঠছে, যাত্রীসুরক্ষায় চরম উদাসীনতা ধামাচাপা দিতেই কি শুরু হয়েছে উদ্যোগ? 
সিবিআইয়ের প্রাথমিক দাবিতেও কিন্তু অন্তর্ঘাত নয়, গাফিলতির যুক্তিই স্পষ্ট। কারণ সোমবার ঘটনাস্থল ঘুরে এবং খুরদা রোডে গিয়ে রেল আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা দাবি করেছে, বাহানাগা লেভেল ক্রসিংয়ের ইন্টারলকিং সিস্টেমে গোলমাল রয়েছে। এবং তা অনেকদিনের। শুক্রবার সকালেও সমস্যা হয়েছিল। আর তা ধরেছিলেন এক গ্যাংম্যান। দেখেছিলেন, লাইনে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। ফলে লাইন চেঞ্জ করলে বিপদের সম্ভাবনা প্রবল। এই তথ্য তিনি জানিয়েছিলেন সেখানকার স্টেশন ম্যানেজার ও কেবিন ম্যানকে। তারপরেও তাঁরা বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি। একপ্রকার জোর করে ওই লাইন দিয়ে ট্রেন চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সারমর্ম—যাত্রীসুরক্ষায় গাফিলতি। 
বিরোধীদের অভিযোগ, পিঠ বাঁচাতেই সিবিআইকে আসরে নামিয়েছে কেন্দ্র। গিমিকের রাজনীতি ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠা গাফিলতিকে যেভাবে হোক ঢাকা দিতে চাইছে তারা। তাই সবার আগে ‘কবচ’ প্রযুক্তি সংক্রান্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ, এই প্রযুক্তি কার্যকর করার জন্যই গত তিনটি অর্থবর্ষে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল রেলকে। আশ্চর্যজনকভাবে তার একটা টাকাও খরচ হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রেলের পিঙ্ক বুকেই এই তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে ‘ইন্ডিজেনাস ট্রেন কলিশন অ্যাভয়েডেন্স সিস্টেম’ বলে এর উল্লেখ থাকলেও, তারই প্রচলিত নাম ‘কবচ’ প্রযুক্তি। ১ হাজার ৫৬৩ কিমি লো-ডেনসিটি নেটওয়ার্কে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জন্য বরাদ্দকৃত ছিল ৪৬৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি লো-ডেনসিটি ওই দেড় হাজার কিমি রেল নেটওয়ার্কের জন্য ট্রেন সংঘর্ষরোধী উন্নত ব্যবস্থা কার্যকরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩১২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এই খাতেও টাকা খরচ হয়নি। অর্থাৎ, যে গাফিলতির অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলেছেন, তাতে সিলমোহর দিচ্ছে মোদি সরকারের তথ্যপঞ্জি। এখানেই শেষ নয়। রেলের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, চার বছরে ১৮ হাজার কিমি রেলওয়ে ট্র্যাক বদলানোর কথা ছিল মন্ত্রকের। প্রতি বছর ৪ হাজার ৫০০ কিমি। কিন্তু সংসদে পেশ করা সর্বশেষ ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭-’১৮ থেকে ২০২০-’২১ পর্যন্ত বদলানো হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৯৮৪.৩৬ কিমি। 
অর্থাৎ, ছবিটা পরিষ্কার—বন্দে ভারত বা বুলেট ট্রেনের জন্য যে উৎসাহ কেন্দ্রের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, তার সিকিভাগও যাত্রীসুরক্ষায় মেলে না। ফল? করমণ্ডলে ভয়াবহ মৃত্যুমিছিল। এই প্রসঙ্গ টেনে সোমবারও মমতা বলেছেন, ‘সত্যি ধামাচাপা দেওয়ার সময় এটা নয়। অথচ, যেভাবে রাজনৈতিক হাওয়া দেওয়া হচ্ছে, তা মানা যায় না। মৃত্যুমিছিল চলছে। কিন্তু ওদের কোনও লজ্জা নেই। শুধু মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।’
দুর্ঘটনার মামলায় সিবিআই কেন? প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। একই সুরে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও। বালেশ্বরের দুর্ঘটনা নাশকতা নয়, স্রেফ গাফিলতি। তার মাশুল গুনছে শত শত পরিবার। বহু নিখোঁজ এখনও ঘরে ফেরেনি।
গড়াল ট্রেনের চাকা। ছবি: পিটিআই

6th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ