বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

সিগন্যাল  মেইন লাইনের 
পয়েন্ট  লুপ লাইনের
ইঙ্গিত প্রাথমিক তদন্তে

শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, বাহানাগা: সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ত্রুটি, নাকি চালকের গাফিলতি? শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজারে ঘটা ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় দায় কার? ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এই প্রশ্নের সঠিক জবাব কারও কাছে নেই। দ্রুতগতিতে চলছে উদ্ধারকাজ। শনিবার রাত পর্যন্ত রেলের দাবি, মৃতের সংখ্যা এখন ২৮৮। গুরুতর আহত ৫৬ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যদিও বালেশ্বর জেলার পুলিস সুপার সাগরিকা নাথের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছুঁতে পারে। তবে এর মধ্যেই সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—দুর্ঘটনার সময় চেন্নাইগামী আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে সিগন্যাল ছিল মেইন লাইনের। কিন্তু পয়েন্ট লুপলাইনেই রয়ে যায়। তার জেরেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রেলের প্রাথমিক তদন্তে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। সরকারিভাবে অবশ্য এই খবরে সিলমোহর দেওয়া হয়নি। তবে যে-ই দায়ী হোক না কেন, দোষীদের বিরুদ্ধে চরম শাস্তি দেওয়া হবে বলে দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন সকালেই বাহানাগা পৌঁছন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তারপরই বায়ুসেনার বিশেষ কপ্টারে বাহানাগায় আসেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উড়ে যান দুর্ঘটনাস্থলে।
তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্টের তথ্য। রেলের দাবি, বাহানাগা স্টেশনের ঢোকার মুখে আপ এবং ডাউনের পাশাপাশি দু’টি অতিরিক্ত লাইন রয়েছে। এই জোড়া লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল দু’টি মালগাড়ি। এমন জায়গায় পয়েন্টের মাধ্যমে ট্রেন ট্র্যাক বদল করে। করমণ্ডলের চালক গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে দ্রুত গতিতে ট্রেন ছোটান। কিন্তু ট্র্যাক বদলের সংযোগস্থলের পয়েন্ট থেকে যায় লুপ লাইনে। ফলে মুহূর্তের মধ্যে সেটিতে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে করমণ্ডল। ২১টি বগি নিমেষে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপর। বাকি বগিগুলি খেলনার মতো উড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক সেই সময় ডাউন মেইন লাইন দিয়ে দ্রুত গতিতে হাওড়ার দিকে আসছিল যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের লাইনচ্যুত বগির সঙ্গে ধাক্কা খায় তার দু’টি বগি। সেগুলিও বেলাইন হয়ে পড়ে। তবে এই তথ্য চূড়ান্ত নয়। রেলের তরফে দুর্ঘটনার তদন্তে জোড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলমন্ত্রী নিজে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটিও তদন্ত করবেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।
রেলকর্তাদের একাংশের অবশ্য দাবি, সিগন্যালিংয়ে গাফিলতি থাকলেও এই দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না করমণ্ডলের চালক। কেননা, নিয়ম অনুযায়ী পয়েন্টের আগে গতিবেগ কমাতে হয়। কিন্তু দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির গতি ১০০ কিমিরও বেশি ছিল। কেন চালক তা কমাননি? সেক্ষেত্রে লুপ লাইনে ঢুকে পড়েও এত বড় ঘটনা এড়ানো যেত। রেল সূত্রের খবর, পর্যাপ্ত চালকের অভাবে কর্মরতদের বাড়তি ডিউটি করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে চালকদের মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তিকে দুর্ঘটনার অনুঘটক হিসেবেও ব্যাখ্যা করছেন অনেকে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে রেল ট্র্যাকের একটা বড় অংশ মরচে ধরার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন রেলকর্তারা। অপর একটি মহল দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতার তত্ত্বকে সামনে আনছেন। তাঁদের দাবি, ওই অংশের রেল ট্র্যাক ‘ট্যাম্পার’ করা হয়ে থাকতে পারে।
করমণ্ডল ও যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে সংরক্ষিত যাত্রী সংখ্যা ছিল যথাক্রমে—১,২৫৭ এবং ১,০৩৯ জন। অসংরক্ষিত যাত্রী ধরলে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা আড়াই হাজার ছাড়াবে। এদিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে মৃত রাজ্যের বাসিন্দাদের পরিবারকে ৫ লক্ষ, গুরুতর জখমদের এক লক্ষ এবং স্বল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মমতা। পাশাপাশি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলের তরফে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। 

4th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ