বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ
 

রাতেই শুরু উদ্ধারকাজ, ভোরের
আলো ফুটতেই স্পষ্ট হল বীভৎসতা

পিনাকী ধোলে, বাহানাগা: ‘এ কোন সকাল...!’ রাতের অন্ধকারে যে ভয়াবহতার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল, শনিবার ভোরের আলো ফুটতেই দেখা গেল, বীভৎসতা তার চেয়ে অনেক বেশি। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বহু কামরা। কোথাও একটি বগির উপর উঠে গিয়েছে আরেকটি। সেই বগির কোনও জানালা থেকে ঝুলছে কাটা হাত বা রক্তাক্ত দেহাংশ। তখনও কোনও কোনও কামরার ভিতর থেকে ভেসে আসছে আর্তনাদ, টানা গোঙানির শব্দ। শুক্রবার রাতে আলোর অভাবে ট্রেনের মধ্যে বা তলায় চাপা পড়ে থাকা অনেক লাশ উদ্ধারকারীদের নজরে আসেনি। সকালে স্পষ্ট হয় দুর্ঘটনার ব্যাপকতা। বোঝা যায়, বালেশ্বরের বাহানাগা বাজারে ঘটে গিয়েছে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনা। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে, স্বজনহারাদের কান্নায় ভারী হয়েছে বালেশ্বরের বাতাস। প্রিয়জনের খোঁজে দিশাহারা হয়ে মানুষ ছুটে চলেছে  এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। মনে তাঁদের আশা, ‘ও নিশ্চয়ই ভালো আছে!’
শুক্রবার রাতেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত কামরাগুলিতে জোরকদমে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। কাজ চালানোর মতো আলোর ব্যবস্থা হলেও বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য তা মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না। তাই ছিটকে যাওয়া বহু কামরার ধারেকাছেই পৌঁছতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। ভোরের আলোয়  স্পষ্ট হয় ঘটনাস্থলের লণ্ডভণ্ড চেহারা। দেখা যায়, লাইন থেকে ৫০-১০০ মিটার দূরে ছিটকে গিয়েছে কয়েকটি কামরা। কয়েকটি বগি এমনভাবে উল্টেছে যে সেগুলির চাকা আকাশের দিকে হয়ে গিয়েছে। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে মানুষের দেহাংশ, ব্যাগ, মানিব্যাগ, জুতো, মোবাইল ফোন  সহ নানা ব্যবহার্য সামগ্রী।
সকাল থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারে নামে সেনা, এনডিআরএফ, বিপর্যয় মোকাবিলা দলগুলি। গ্যাস কাটার দিয়ে দুমড়ে যাওয়া কামরা কেটে পরপর নিথর দেহ বার করে আনা হয়। কাজে লাগানো হয় পে লোডার, ক্রেন। যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসের দু’টি কামরা থেকে দেহ উদ্ধার করতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়। রাতে বোঝাই যায়নি যে রেললাইন থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে ছিটকে গিয়েছে যশবন্তপুর-হাওড়া ট্রেনের দু’টি বগি। রেল সূত্রে খবর, উদ্ধারকাজ চলবে আজ রবিবারও। দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি কংক্রিটের স্লিপার, ওভারহেডের তার, বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলি মেরামতির কাজ শুরু করেছে রেল। যত দ্রুত সম্ভব ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে তত্পর তারা। 
সাদা কাপড়ে মোড়া লাশগুলি লরিতে তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নিকটবর্তী বাহানাগা স্কুলে। সেখানে শনাক্তকরণের পর দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। সেই স্কুলের বাইরে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন ওড়িশার জাজপুরের সরস্বতী সাউ। তাঁর স্বামী শিবশঙ্কর সাউ ছিলেন ‘অভিশপ্ত’ করমণ্ডলে। স্বামীর খোঁজে রাত থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন তিনি। কোথাও তাঁর হদিশ না পেয়ে শনিবার সকালে তিনি ছুটে আসেন বাহানাগা স্কুলের ‘লাশকাটা ঘরে’। সেখানেই খুঁজে পান স্বামীকে। কিন্তু তাঁর নিশ্চল দেহের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেননি। জ্ঞান হারান সরস্বতীদেবী। পরিজনদের কান্না মিশে যায় অজস্র স্বজনহারার হাহাকারে। 

4th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ