নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: গঙ্গা, তিস্তা, মহানন্দা, জলঙ্গী। তালিকা দীর্ঘই। রাজ্যের উপর দিয়ে বয়ে চলা এমন ১৭টি নদী অংশের দূষণ মারাত্মক। তবে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গই নয়। সারা দেশের এমন ৩৫১টি নদী অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দূষণ মাত্রাছাড়া। বৃহস্পতিবার লোকসভায় লিখিতভাবে এই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জলশক্তি মন্ত্রকের এহেন তথ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে। পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে চলা যে ১৭টি নদীর অংশবিশেষকে দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি হল বিদ্যাধরী, মহানন্দা, চূর্ণি, দ্বারকা, গঙ্গা, দামোদর, জলঙ্গী, কোশি, মাথাভাঙা, বরাকর, দ্বারকেশ্বর, কালজানি, করোলা, ময়ূরাক্ষী, রূপনারায়ণ, শিলাবতী এবং তিস্তা।
এদিন লোকসভায় জলশক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর টুডু লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ‘২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (সিপিসিবি) সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে সারা দেশের ৩২৩টি নদীর ৩৫১টি অংশকে দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সারা দেশের ৫২১টি নদীর উপর সমীক্ষা ও নজরদারি চালিয়ে ওই রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বায়ো-কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ডের (বিওডি) উপর ভিত্তি করে দূষিত নদী অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, জলের বায়ো-কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড হল অর্গ্যানিক পলিউশনের সূচক। বৃহস্পতিবার লোকসভায় দূষিত নদী-অংশের যে পরিসংখ্যান পেশ করেছে জলশক্তি মন্ত্রক, তাতে দেখা যাচ্ছে মহারাষ্ট্রের উপর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলিরই বেশি অংশ দূষিত। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ওই দূষিত অংশের সংখ্যা ৫৩টি। এর মধ্যে গোদাবরী, কৃষ্ণা নদীর অংশও রয়েছে। দূষিত নদী অংশের হিসেবে মহারাষ্ট্রের পরেই রয়েছে অসম। অসমে এমন দূষিত রিভার স্ট্রেচের সংখ্যা ৪৪টি। তালিকায় রয়েছে শোন, সঙ্কোশের মতো নদীও। ২২টি দূষিত রিভার স্ট্রেচ নিয়ে দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। দূষিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মন্দাকিনীর অংশবিশেষও। তবে উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে একটি বিষয় একপ্রকার স্পষ্ট। তা হল গঙ্গার দূষণ নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে পুরোমাত্রায়। কারণ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গই নয়। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও উত্তরাখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গা নদীর অংশবিশেষকেও দূষিত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সারা দেশের কয়েকশো নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার? এদিন সংসদে লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। তবে নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার দায় রাজ্য সরকারগুলির। দূষিত জল যে নদীতে পড়ছে না, তা সুনিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকেই। নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্র নিয়মিত রাজ্যগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কেন্দ্রের সহযোগিতায় শুরু হয়েছে নমামি গঙ্গের মতো কর্মসূচিও।’
মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘ন্যাশনাল রিভার কনজার্ভেশন প্ল্যানের আওতায় এখনও পর্যন্ত ১৬টি রাজ্যের ৭৭টি শহরের ৩৪টি দূষিত নদী-অংশ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এখানে অনুমোদিত প্রকল্পে খরচ প্রায় ছ’হাজার কোটি টাকা। নমামি গঙ্গের আওতাতেও দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দেশে মোট ৩৫৩টি প্রকল্পের কাজ চলছে।’