রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: জবকার্ড হাতে নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুরের বাসিন্দা বিষ্ণুপদ দাস, দেবশঙ্কর মাঝি, উজ্জ্বল মাঝি, কধু মাল, কৌশিক মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ মাঝিরা। একসুরে তাঁরা আওয়াজ তুললেন, হকের টাকা ছিনিয়ে আনবই। প্রাপ্য না-পাওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন বন্ধ হবে না।
শুক্রবার দুপুরের মধ্যে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পৌঁছে যান রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা থেকে জবকার্ড হোল্ডাররা। কেউ এসেছেন উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা থেকে আবার কারও বাড়ি পুরুলিয়ায়। তাঁরা ১০০ দিনের কাজ করে বসে আছেন, অথচ পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। তাঁরা বঞ্চনা শিকার কেন্দ্রের উদাসীনতার কারণে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষের আজ, শনিবারের গন্তব্য ছিল দিল্লি। এদিন দিল্লিগামী স্পেশাল ট্রেন ধরার কথা ছিল সকাল ৮টায়। সেইমতো সব প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হাজির হন। ব্যাগে এনেছিলেন জামা-কাপড়। কিন্তু বুকে আগলে রেখেছেন জবকার্ড। এটাই তাঁদের রুটি-রুজি, বেঁচে থাকার আইডেন্টিটি কার্ড।
তৃণমূলের তরফে একটি ২০ বগির ট্রেন ভাড়া করা হয়েছিল। ওই ট্রেনেই দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। দুপুরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসে তাঁরা ডিম-ভাত খেয়ে খানিক জিরিয়ে নেন। ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আসা শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পার্থ ভৌমিক, কুণাল ঘোষ, তাপস রায়, মদন মিত্রদের সঙ্গে সাক্ষৎ হয় তাঁদের। সব প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত তখনই ইন্ডোরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সন্ধ্যায় নেমে এল গর্জন। পরিবেশ গুরুগম্ভীর। উত্তাপ চড়ল।
এদিন সন্ধ্যায় পূর্ব রেল আচমকাই জানাল, স্পেশাল ট্রেন দেওয়া যাচ্ছে না! খবর শুনেই ইন্ডোরের ভিতরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের জবকার্ড হোল্ডাররা। ওই কার্ড হাতে নিয়েই শুরু হয় তাঁদের প্রতিবাদ। আওয়াজ ওঠে, ‘যতই চেষ্টা করো তৃণমূল ঝুঁকেগা নেহি!’ রানিনগরের বাসিন্দা ইসলাইল শেখ বলেন, বিজেপির প্রতিহিংসা স্পষ্ট। হকের টাকা ছিনিয়ে আনতে আমরা লড়াই চালিয়ে যাবই।
জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বাসিন্দা হরিপদ রায়, জুরেন সরকার, হরিশঙ্কর রায়, রফিউল ইসলাম, শ্যামল রায়, মানিক মণ্ডলরা একযোগে বলেন, ১০০ দিনের টাকা দিচ্ছে না। আবাস যোজনায় বাড়ি দিচ্ছে না। মোদির আমলে আর কত দুর্ভোগ পোহাতে হবে বাংলার গরিব মানুষে?
চোপড়ার বাসিন্দা গায়ত্রী বিশ্বাস, লিপি খাতুন, সন্ধ্যা সাহারা বলেন, আমাদের পারিশ্রমিক কেড়ে নিয়েছে মোদি সরকার। প্রাপ্য ছিনিয়ে আনতে আন্দোলনই একমাত্র পথ। করোনার পর থেকে কাজ নেই। ১০০ দিনের কাজের টাকা না পেলে খাব কী!
ট্রেন বাতিল হলেও রাত পর্যন্ত তাঁরা নেতাজি ইন্ডোরেই ছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অভিষেক বলেছেন, ‘বাংলার গরিব মানুষের অধিকার ও হকের টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। আমরা যখন আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েছি, তখন নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলার মানুষকে এত ভয় কিসের মোদিজির? আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হলেও আমরা থামব না।’