বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য
 

এক ডুবেই বিদেশ!
রেট মাত্র ৪ হাজার
সরলাক্ষ গুপ্ত

বসন্তের দুপুর। সোনাই নদী বেশ শান্ত। মাইলের পর মাইল সবুজ ক্রমশ ঘন হচ্ছে। দু’পারে ভারত ও বাংলাদেশ। সীমান্তে কাঁটাতার নেই, রয়েছে শুধু একফালি সোনাই। ভারতীয় ভূখণ্ডে ঘাটের পাথরে বেশ করে গোড়ালি ঘষতে ব্যস্ত এক প্রৌঢ়। ডান হাতের তর্জমা ও বুড়ো আঙুল দিয়ে তেলের শিশি খুলতে খুলতে হাত নেড়ে ওপারের বন্ধুকে জিগ্যেস করলেন, ‘আজ দেরি কেন?’ নদীর উপর দিয়েই উত্তর ভেসে এল হাওয়ায়, ‘মাঠের কাজ ছিল। শেষ করতেই এত বেলা।’
শুনতে অবাক লাগলেও দহরকান্দার বাসিন্দাদের কাছে এটাই বারো মাসের যাপনচিত্র। পাচার ও অনুপ্রবেশ শব্দ দুটো তাই অনেকের কাছেই অচেনা। এপার বাংলার সেই প্রৌঢ় বললেন, ‘সীমান্ত তো ভূগোল বইতে থাকে। হৃদয়ে নয়। আমরা এক ডুবে কচুরিপানার তলা দিয়ে ওপারে যাই। ওরাও আসে। বিএসএফের দেখার সুযোগই নেই।’ 
তাহলে কি দহরকান্দা খুবই শান্ত জায়গা? একেবারেই নয়। পল্লিপ্রকৃতি দেখে আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই। রাতের অন্ধকারে এখান দিয়েই হয় অবৈধ যাতায়াত। নিঃশব্দে, নিশ্চুপে। নো ভিসা, নো পাসপোর্ট। কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে এক পরিচিত ফিসফিস করে বললেন, ‘দত্তপাড়ায় চলে যান। ধুর সিন্ডিকেটের মাথারা ওখানেই থাকে।’ বাপরে বাপ, সিন্ডিকেটের নাম ধুর। মানে বোকা? না, না, একদম বোকা বনবেন না। কাগজপত্র ছাড়াই এপারের মানুষ ওপারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে এই চক্র। কাঁটাতার নেই এমন জায়গা দিয়েই যে শুধু অবৈধ পারাপার হয়, তেমনটা নয়। সোনাইয়ের শান্ত জলে এক ডুবে অশান্তির ঢেউ তুলে চলে যাওয়া যায় ‘বিদেশে’।
কিছুক্ষণ পর এক এজেন্টের দেখা মিলল। থুতনির লাল দাড়ি চুলকে তাঁর প্রশ্ন, ‘মেহমান আছে নাকি?’ এরপর উত্তরের তোয়াক্কা না করেই রেট বলা শুরু, ‘নতুন-আনকোরা হলে চার-পাঁচ হাজার। আর পুরনো হলে তিনেই ডান।’ নতুনদের বেশি কেন? ফের দাড়িতে হাত বুলিয়ে ব্যাখ্যা, ‘আরে বাপ, নতুন হলে রিস্ক বেশি। ক্যাবলাকান্ত হলে ধরা পড়ার চান্স রয়েছে। তাই রেট বেশি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাবড়ার বহু এজেন্টও হাকিমপুর, বিথারী, দহরকান্দা প্রভৃতি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে মানুষ ঢোকায়। 
বাংলাদেশের গা ঘেঁষে এপারের পদ্মবিলা সীমান্ত। সেখান থেকে হাকিমপুরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় বসেছিলেন এক যুবক। এই অঞ্চলের চেনা মুখ। আগে তালাচাবির ‘ব্যবসা’ করতেন। বাংলাদেশে তালার চাহিদা বেশ ভালো। কাঁটাতার নেই, এমন জায়গা দিয়ে ওদেশে পাচার হয়। দাম ডাবলেরও বেশি। শুধু তালা নয়, ব্যাগে ভরে এপারের চা, শাড়ি, মশলাও পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশে। 
এবার আসা যাক রুপোর অলঙ্কার পাচারে। এলাকার একাধিক ইনফর্মারের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে খবর পাওয়া গেল যে, হাকিমপুর-বিথারী সহ স্বরূপনগরের বড় অংশে এপার থেকে বাংলাদেশে রুপোর গয়না পাচারের বড় চক্র গজিয়ে উঠেছে। কীভাবে পাচার হচ্ছে? বাইকের ট্যাঙ্ক কাস্টমাইজ করে নীচে ২৫০ মিলিলিটার পেট্রল ধরার একটা বোতল রাখছে পাচারকারীরা। ট্যাঙ্কে ভরছে গয়না। শুধু বাইক নয়, টোটোতেও যাচ্ছে রুপো। কীভাবে? ছাদ খুলে ভিতরে ঠেসে ঠেসে ভরে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেখে কিস্যু বোঝা সম্ভব নয়। একইভাবে সাইকেলের টায়ারে রুপো ভরে চলছে পাচার। ধরা পড়ে না? বিড়িতে সুখটান দিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে এক সূত্রধরের নির্লিপ্ত উত্তর, ‘ধরা না পড়লে তো রেটই কমে যাবে কাকা। কিন্তু বিএসএফ ধরলেই বা কী? দিন কয়েক পরই জামিন। ফের পাচার শুরু।’

30th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ