বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য
 

১০টা সোনার বিস্কুট শরীরে,
ডেলিভারি করে আয় লক্ষাধিক
সরলাক্ষ গুপ্ত

২০২১ সালের নভেম্বর। বিএসএফের কাছে খবর ছিল, বাংলাদেশ থেকে ঢুকবে সোনার বিস্কুট। হাকিমপুর সীমান্তে এক সন্দেহভাজনকে ধরল জওয়ানরা। হাতে কোনও ব্যাগ নেই। দীর্ঘ তল্লাশি চালিয়েও মিলল না কিছু। ৫৬ বছরের গোলাম হোসেন দালাল জামার বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল, ‘স্যর, আমি পাচারকারী নই। বেকার দাঁড় করিয়ে রেখেছেন’। বিএসএফ জওয়ানরা ভাবলেন, তাহলে কি খবর ভুল ছিল? না। কারণ, মেটাল ডিটেক্টর পেটে ঠেকানো মাত্রই ‘বিপ’ আওয়াজ। জ্বলে উঠল আলো। 
পেটে কী আছে? গোলামের উত্তর, ‘কোমরের তাবিজের আওয়াজ স্যর।’ কিন্তু তা খোলা হলেও বিপ বিপ আওয়াজ থামে না। সঙ্গে সঙ্গে কড়া ধমক, ‘মিথ্যে বলার জায়গা পাসনি? বল্‌ কী আছে? না হলে...’। ফেঁসে গিয়ে গোলাম জানাল, ‘পেটে ১০ খানা সোনার বিস্কুট আছে স্যর’! সেই প্রথম স্বরূপনগর সীমান্তে সামনে এল মলদ্বারে করে সোনা পাচারের ঘটনা। শুধু গোলাম নয়, রাজেশ কুমার, এনামুল, চিমন লাল, বাদকুল্লা, মাধাই মণ্ডলের মতো অনেকেই মলদ্বারকে পকেট করে সোনা পাচারের ব্যাপারী হয়ে উঠেছে। সীমান্তে এখন ‘শরীর ভাড়া’র ডিমান্ড বেশ ভালো। কয়েক ঘণ্টাতেই পকেটে ঢুকছে ৩ ঩থেকে ১০ হাজার টাকা। যার ধারণ ক্ষমতা বেশি, তার রেটও অধিক। রিস্ক সামান্য। ধরা পড়লে মেরেকেটে দিন কয়েকের জেল হেফাজত। তারপর জামিনে মুক্ত এবং ফের কাজ শুরু। 
কীভাবে মলদ্বারে সোনা পাচার হয়? শোনালেন হাকিমপুরের এক ব্যক্তি। এরকম একাধিক ঘটনা তাঁর কণ্ঠস্থ। চায়ের দোকানের সামনে রাখা বাঁশের কঞ্চির রোয়াকে বসে বললেন, ‘মলদ্বারে সোনা পাচার সহজ নয়। বেশ কষ্টসাধ্য। ডেলিভারির আগের দিন উপোস। পেটে কিছু পড়লে চলবে না। কারণ, প্রকৃতির ডাক এলেই মুশকিল। এছাড়া খেতে হয় রেক্টাম নরম করার ওষুধ। শরীর ‘ফিট’ হলে পাচারকারীরা বাংলাদেশের দিকে চলে যায়। সেখানে বসে সোনার বিস্কুট মলদ্বারে গুঁজে নেয়। সহজে বের করার জন্য অনেকে এখন কন্ডোমও ব্যবহার করছে। তবে ১০টির বেশি বিস্কুট নেওয়া যায় না।’
পাচারের কাজে অভিজ্ঞতা থাকলে মেলে অগ্রাধিকার। কারণ, শরীরে সোনার বিস্কুট নিয়ে হাঁটা সহজ নয়। একটু বেচাল হলেই বিএসএফ ধরে ফেলে। তাই অভিজ্ঞ ক্যারিয়ারের রেট বেশি। এরা ধরা পড়লেও সহজে ভেঙে পড়ে না। মলদ্বারে সোনা ঢোকানোর আগে কোমরে ও গলায় লোহার মাদুলি পরে। মেটাল ডিটেক্টর ঠেকানোর মাত্রই তারা বলে, স্যর, মাদুলির আওয়াজ। তারপরেও বিপ শব্দ হলে বলে স্যর, আমার হার্নিয়া অপারেশন হয়েছে। লোহার নেট বসানো আছে। 
তারালি, হাকিমপুর, দহরকান্দা থেকে আঙরাইল, ছয়ঘড়িয়া হয়ে পেট্রাপোল পর্যন্ত সোনা পাচারের করিডর। বিএসএফ বলছে, পেট্রাপোল সীমান্তে মলদ্বারে সোনা পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে ২০১৪ সালে। ধরা পড়েছিল রাজেশ কুমার, চিমন লাল, যোগেশ খান্না ও সুশীল খান্না। তারা মলদ্বারে পাঁচ কেজি সোনা নিয়ে ঢুকেছিল। গত ৩০ জানুয়ারি হাকিমপুরের পাশে আমুদিয়া সীমান্তে ধরা পড়ে মাধাই মণ্ডল। মলদ্বার থেকে উদ্ধার হয়েছিল আটটি সোনার বিস্কুট। পেটে মেটাল ডিটেক্টর ঠেকানোর পরও অভিজ্ঞ মাধাই স্বীকার করেনি। এক্স-রে করানোর পর সত্যিটা সামনে আসে। কন্ডোম ব্যবহার করে বিস্কুট ভরাই ছিল মাধাইয়ের ইউএসপি। পরে এই কাজ অনেকে শিখে নেয়। শুরুতে কষ্টসাধ্য। কিন্তু ‘অভ্যাস’ হয়ে গেলে এটাই নেশা। কারণ, খুব অভিজ্ঞ হলে দিনে তিনটে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ সারতে পারে এরা। প্রতি ট্রিপে ৩ হাজার টাকার অর্থ দিনে ৯ হাজার। অর্থাৎ, মাসে হেলায় দু’-আড়াই লাখ টাকার উপর ইনকাম। অন্ধকার জগৎই যে হয়ে উঠছে গরিবের নন্দন কানন।

24th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ