বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য
 

নলহাটির প্রাচীন দুই পুজোর 
নিরঞ্জন যাত্রাই মূল আকর্ষণ

সংবাদদাতা, রামপুরহাট: চোখের জল আর ভক্তদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার মিছিলে সিক্ত হয়ে বাইচে করে বিদায় নিলেন নলহাটির দুই বোন। করোনাকাল কাটিয়ে দু’বছর পর চেনা ছন্দে নলহাটির দুই বোনের নিরঞ্জন যাত্রা। বৃহস্পতিবার রাতে আবেগে ভাসলেন হাজার হাজার মানুষ। আবারও ফিরে আসবেন সুখ সমৃদ্ধি আর প্রশান্তির বার্তা নিয়ে এই আশায় ফের দিন গোনা শুরু হল নলহাটিবাসীর।  
নলহাটির ধোপাপাড়ার সিংহবাহিনী পুজোর বয়স প্রায় এক হাজার বছর। কথিত আছে, সেই সময় তালপাতার ছাউনি গড়ে মৃন্ময়ী মূর্তির আরাধনা করতেন মুনি ঋষিরা। বাংলা ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে পুজোর দায়িত্ব নেন নলহাটির ধরমপুর গ্রামের বাসিন্দা রাধাশ্যাম ভট্টাচার্য। পরে তিনি গ্রাম থেকে এসে নলহাটিতে মন্দির বানিয়ে পুজো চালিয়ে আসেন। অর্থাভাবে দু’বছর চলার পর পুজোটি বন্ধ হয়ে যায়। মন্দির লাগোয়া অভয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বসবাস। তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। সে সময়ে তিনি মায়ের কাছে পুত্রসন্তান চেয়ে মানত করেন। মা তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, মন্দির সংস্কার করে ফের পুজো শুরু করলে পুত্রসন্তান লাভ করবি। সেই বছরই তিনি পাকা মন্দির নির্মাণ করে পুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি তিন পুত্র ও দুই কন্যার পিতা হন। সেই থেকে বহু মানুষ সন্তান লাভের আশায় মায়ের কাছে মানত করেন। 
অন্যদিকে নলহাটির কামারপাড়ায় আরও একটি সিংহবাহিনীর পুজো হয়ে আসছে। কথিত আছে, কয়েকশো বছর আগে কোনও এক তান্ত্রিক এই পুজোর প্রচলন করেন। সপ্তমীর দিন ধোপাপাড়ার সিংহবাহিনীর পুজোয় বাজনা সহযোগে সকালে হাজরা পুকুরে কলাবউ স্নান ও ঘট ভরে নিয়ে আসা হয়। পিছনে পিছনে আসে কামারপাড়ার দেবী। সম্পর্কে তাঁরা দুই বোন। সেই সময় পুকুর পাড়ে প্রচুর বাজি ফাটানো হয়। প্রথমে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো শুরু হয়। তারপর ছোট বোনের। সপ্তমী থেকে নবমী প্রথমে নলাটেশ্বরী মন্দিরে বলিদান পর্ব চলে। সেই খড়গ নিয়ে ঢাক সহযোগে পুরোহিতরা আসেন ধোপাপাড়ার সিংহবাহিনী মন্দিরে। সেখানে বলিদান শেষ করে সেই শোভাযাত্রা আসে ছোট বোনের কাছে। দশমির রাতে দুই দেবীকে বাইচে করে বিসর্জনের উদ্দেশে বের করা হয়। দুই বোনের শোভাযাত্রা মিলত হয় নলাটেশ্বরী মন্দিরে। এসময় মন্দিরে আগত নারীরা একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর বিনিময় করেন। এরপর দুই দেবীকে কখনও দৌড়ে, কখনও নাচাতে নাচাতে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। একে অপরকে রাস্তা ছাড়া নিয়ে দুই বোনের মধ্যে কার্যত প্রতিযোগিতা চলে। কোনও বাহারি আলো নয়, হ্যাজাকের আলোতেই আলোকিত হয় দুই দেবীর চলার পথ। শহরের বাসিন্দারা তো রয়েছেনই, আশেপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ সেই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তাঁরাও দেবীর পিছন পিছন ছুট লাগান। প্রতিমাকে ঘাড়ে নেওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দুই দেবীর নাচ দেখতে রাস্তার দু’ধার, বাড়ির ছাদে শুধুই কালো মাথা। চলে শঙ্খ আর উলুধ্বনি। প্রচুর বাজি ফাটানো হয়। শেষ রাতে হাজরা পুকুরের দুই পাড়ে একসঙ্গে দুই বোনকে নিরঞ্জন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ঢাকের বাজনার রেশ মিলিয়ে যায়। নেমে আসে বিষন্নতার ছায়া। 
ধোপাপাড়ার পুজোর বর্তমান কর্তা সেন্টু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নিরঞ্জন যাত্রাই এই দুই বোনোর পুজোর মূল আকর্ষণ। যাঁরা পুজো চলাকালীন আসতে পারেন না, তাঁরা অবশ্যই নিরঞ্জন যাত্রা দেখতে ভিড় জমান। এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয় দশমীর রাত। -নিজস্ব চিত্র

7th     October,   2022
 
 
কলকাতা
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ