বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য
 

কখনও মাগুর মাছের জোগানদার, কখনও আবার মুদি দোকানি
গোবলয়ের ‘বাহুবলী’দের মতোই উত্থান কেষ্টদা’র

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী থেকে জেলার স্বঘোষিত ‘বাদশা’। উত্থানটা গোবলয়ের ‘বাহুবলী’ টাইপের! একে সিরিজের রাইফেলধারী নিরাপত্তারক্ষী, লালবাতির গাড়ি, পাইলট, লম্বা কনভয়— আগাগোড়া সেলিব্রিটি সুলভ চলাফেরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে অসংখ্য মিম, মিমিক্রির ভিডিও, প্রচার মাধ্যমের মধ্যমণি! কখনও চড়াম, চড়াম, কখনও গুড়-বাতাসা, নকুলদানা, আবার কখনও পুলিসকে বোমা মারার নিদান!  
রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জুড়ে থাকলেও, আজকের অনুব্রত হয়ে উঠা শেষ আট বছরে। তবে জীবনের শুরুর দিকের লড়াইটা ঠিক এমন চমকদার ছিল না। বাজারে মাগুর মাছের জোগানদার, বাবার মুদিখানাতে দাঁড়িপাল্লায় মাপজোপ—এই ছিল ‘কেষ্ট’র রোজনামচা। মাঝে টুকটাক ব্যবসা করে হাল ফেরানোর চেষ্টা। যুব কংগ্রেস পর্বে রামপুরহাটে মমতা ব্যানার্জির মামাবাড়িতে আলাপ, পরে তৃণমূল দল তৈরির সময় মমতার আহ্বানে সেই দলের সাধারণ এক কর্মী হয়ে পথচলা শুরু। পরে নানা উত্ভান-পতনের মধ্যে দিয়ে শাসকদলের জেলা সভাপতির পদপ্রাপ্তি। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বোলপুরের নিচুপট্টির প্রাসাদপম বাড়ির বর্তমান মালিককে। বৃহস্পতিবার সিবিআইএর গ্রেপ্তারের পর জেলার অবস্থা এখন থমথমে। কেষ্ট’দার অবর্তমানে এবার ‘উন্নয়ন দাঁড়িয়ে’ থাকে কি না, তাই নিয়েই চলছে চর্চা। জীবনের শুরু নানুরের হাটসেরাণ্ডি গ্রামে। পরে ব্যবসার কারণে সপরিবারে তাঁর বাবা কৃপাসিন্ধু মণ্ডল বোলপুরে চলে আসেন। বোলপুরেই পাকাপাকি ভাবে তাঁরা থাকতে শুরু করেন। রাজ্য রাজনীতির এই বিতর্কিত বর্ণময় ব্যক্তিটির উত্থানের কাহিনীও বেশ চড়াই উথরায় পেরিয়ে। তাঁর পড়াশোনার ডিগ্রি নিয়ে কাউকে কোনদিন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, সরস্বতীর কৃপা লাভ ক্লাস এইট পর্যন্ত! তারপর বাবার মুদির দোকানে। টুকটাক ব্যবসা আর বাম দলের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এই ‘জেদি’ মনোভাব রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। মমতার ঘনিষ্ঠ আর বিশবস্ত হয়ে ওঠা। নায়ক নয়, বরাবরই হিন্দি সিনেমার ভিলেনদের ভক্ত বলে পরিচিত অনুব্রত। ‘শোলে’ সিনেমার গব্বর সিং চরিত্র তাঁর সদা পছন্দের। কথায় কথায় তাঁর মুখে ‘আব তেরা ক্যায়া হোগা রে কালিয়া’র মতো ডায়লগ শোনা গিয়েছে। বিরোধীরা বলতেন, ওটাই হুমকি, ওটাই সন্ত্রাসের ইউএসপি। ‘খেলা হবে’র পর আরও ভয় দেখাতে ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’ বলে হুঙ্কার দিয়েছেন বারবার। এই ভঙ্গিতে কথা বলেই হয়ে ওঠেন সংবাদমাধ্যমের ‘টিআরপি কিং’। 
প্রচার মাধ্যমে নিজেকে ‘ভাসিয়ে’ রাখতে ‘ইচ্ছে করেই’ বারবার বিতর্কিত মন্তব্য করতেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। সাধারণ পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে বিধায়ক, সাংসদ জেলার কোন পদে কে বসবেন,  সবই কেষ্টই ঠিক করতেন। গোটা জেলার নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন। আর তাই প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের অনুপ্রেরক হিসেবে অক্লেশে অনুব্রত মণ্ডলের নামটাই উচ্চারণ করতেন। জোড়াফুল শিবিরে বহুল চর্চিত—কেষ্টদা যা ঠিক করতেন, মানতেও একপ্রকার বাধ্য থাকত রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্ব। বীরভূমের এই বেতাজ বাদশার কোমল মন নিয়েও বহু মানুষ উদাহরণ টানেন। অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দেওয়া, চিকিৎসার খরচা দেওয়া, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার পাশে দাঁড়ানোর গল্পও শোনান কেউ কেউ। এবার তাঁর গ্রেপ্তারির পর জেলার রাজনীতি কী ভাবে আবর্তিত হয়, এখন সেটাই দেখার। 

12th     August,   2022
 
 
কলকাতা
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ