বিশ্বজিৎ দাস কলকাতা: দেড় বছর পার। এখনও কোভিডের বহু রহস্য রয়ে গেল অধরাই। পশ্চিমবঙ্গের পরিসংখ্যান বলছে, কোভিডের ছোবলে প্রতি তিনটি মৃত্যুর মধ্যে দুটি মৃত্যুই হয়েছে পুরুষদের। তিনভাগের একভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে মহিলাদের। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের কোভিড বুলেটিন থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলায় মোট কোভিড মৃত্যুর ৬৬.৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু হয়েছে পুরুষদের। মাত্র ৩৩.১ শতাংশ ক্ষেত্রে মারা গিয়েছেন মহিলারা। শুধু বাংলা নয়, সারা দেশ এমনকী পৃথিবীর বহু প্রান্তের একাধিক সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে, কোভিডের শিকার বেশি হচ্ছে পুরুষসমাজ। করোনার দুটি ঢেউ পার করার পর এই পরিসংখ্যানে বিরাট কোনও পরিবর্তন আসেনি।
চিকিৎসক মহলের একাংশ গোড়া থেকেই তত্ত্ব খাঁড়া করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা কাজেকর্মে অনেক বেশি ঘরের বাইরে বেরন, তাঁদের ‘এক্সপোজার’ বেশি। তাই কোভিডেও অনেক বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। মৃত্যুও হচ্ছে তুলনায় বেশি পুরুষদের। চিকিৎসকদের অন্য মহল যদিও সেই তত্ত্বকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। তাদের মত হল, প্রথম মতটি প্রাগৈতিহাসিক চিন্তাভাবনার ফসল। বাংলা তথা ভারতের ক্ষেত্রে ১০-১৫-২০ বছর আগে ভাবা যেত। এখন অফিস-কাছারি-স্কুল-কলেজ সর্বত্রই মহিলারা পুরুষদের প্রায় সমান সংখ্যায় কাজ করেন। বাইরেও বেরন আগেকার সমাজের তুলনায় অনেক বেশি। তাছাড়া গ্রাম-শহর মিলিয়ে সামগ্রিকতার বিচারে যদিও-বা পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় বাইরে বেরন, তাতেও পরিসংখ্যানের এই বড় ব্যবধান ঘোচানোর মতো যুক্তি দাঁড় করানো খুব কঠিন। তাই রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
একই সুর শোনা গিয়েছে রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য তথা পিজি হাসপাতালের মেডিসিনের প্রধান ডাঃ সৌমিত্র ঘোষের কথায়। সোমবার বলেন, পুরুষরা বাইরে বেরচ্ছেন বলেই তাঁদের কোভিড বেশি হচ্ছে, এই ধারণায় এতটা পরিসংখ্যানের ফারাক যুক্তিগ্রাহ্য করা মুশকিল। অন্যকোনও রহস্য আছে। প্রথম বিশ্বের বহু দেশেও দেখা যাচ্ছে এই ফারাক ৬০:৪০। বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের প্রাক্তন প্রধান ডাঃ অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, কোনও একটা শারীরবৃত্তীয় বর্ম হয়তো আছে মহিলাদের। তিনিও মেনে নিয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞান এত আধুনিক হলেও, এই রহস্য আজও ভেদ করা যায়নি। ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরনের মতো হয়তো কোনও বিশেষ হর্মোন কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধ করছে। হয়তো-বা তাতেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতে কোভিড মোকাবিলার কোনও সূত্র। এ নিয়ে অবশ্যই গবেষণা হওয়া দরকার।