রাজু চক্রবর্তী কলকাতা: দূরপাল্লার বেসরকারি বাসের টিকিটের দাম নিয়ে চূড়ান্ত কালোবাজারি চলছে। পুজোয় উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের বাড়ি ফেরার তাগিদ এখন তুঙ্গে। আর সেই ঝোঁক বুঝে যাত্রীদের পকেট কাটছে এক শ্রেণির পরিবহণ কারবারি। হাওড়া বাস টার্মিনাস, ধর্মতলা, বাবুঘাটে টিকিট কাটতে গিয়ে দিনের আলোয় প্রতারিত হচ্ছেন যাত্রীরা। ১৫০ টাকার টিকিটের দাম চড়ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর এসব চলছে প্রশাসনের একেবারে নাকের ডগায়। যদিও নির্বাক পুলিস প্রশাসন। শুধু বেসরকারি নয়, চূড়ান্ত অনিয়ম চলছে সরকারি বাস পরিষেবাতেও। করোনা আবহে নবান্নের নির্দেশে বর্তমানে দূরপাল্লার সরকারি বাসগুলি ৫০ শতাংশ যাত্রী বহন করতে পারে। কিন্তু সেই সরকারি নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই বাস বোঝাই যাত্রী নিয়ে জেলায় জেলায় যাচ্ছে সরকারি বাসগুলি।
কিছু বেসরকারি দূরপাল্লার বাসের টিকিট দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, প্রতিবছরই পুজো, দোল সহ কিছু উৎসেবর আগে এক শ্রেণির দালাল কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে টিকিটের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। ঘরে ফেরার তাগিদে যাত্রীরাও প্রতারণার শিকার হন। রাহুলবাবুর স্পষ্ট বক্তব্য, পুলিস ও প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে অবৈধ আঁতাত গড়ে নিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অর্থ সংগ্রহের আখড়া হয়ে উঠছে বাস টার্মিনাসগুলি। যাত্রী দুর্ভোগ রুখতে অবিলম্বে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, সরকারি বাসের অনিয়ম প্রসঙ্গে এক পরিবহণ কর্তা বলেন, করোনার জন্য বাসে ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রীদের টিকিট কাটার নিয়ম নেই। অভিযোগ, পুজোর জন্য অগ্রিম বুকিং নেওয়া হচ্ছে না। বদলে ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে হাতে হাতে টিকিট কাটা হচ্ছে। কিন্তু বাস ছাড়ার ঠিক আগে রীতিমতো পাদানিতে যাত্রী তুলে গেট কোনও রকমে বন্ধ করছেন কিছু কন্ডাকটর। বিষয়টি দপ্তরের শীর্ষ মহলের গোচরে এনেও কোনও লাভ হয়নি। সাফ জানান ওই আমলা।
এদিকে, ঢাকঢোল পিটিয়ে পুজোর শহরের বুকে সরকারি নাইট সার্ভিস চালুর কথা বলা হলেও বাস্তবে রাস্তায় বাসের দেখা মিলছে না। একদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির কাছে জ্বালানি বাবদ বিরাট অঙ্কের টাকা বকেয়া রেখেছে পরিবহণ দপ্তর। তার উপর উপযুক্ত মেরামতির অভাবে শ’য়ে শ’য়ে বাস কার্যত পড়ে নষ্ট হচ্ছে। স্বভাবতই রাতের দিকে পর্যাপ্ত সংখ্যায় সরকারি বাস বের করাই এখন চ্যালেঞ্জ। সেই সূত্রে কিছুটা হলেও আশার আলো জোগাচ্ছেন বেসরকারি বাস মালিকরা। এ প্রসঙ্গে সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ষষ্ঠীর রাত থেকেই শহর ও শহরতলির বুকে বেশি রাতের দিকে বাস নামতে শুরু করবে। তবে প্রতিবছর পুজোর দিনগুলিতে পরিবর্তিত রুট স্থির করতে পরিবহণ দপ্তর ও পুলিসের সঙ্গে বেসরকারি বাস মালিকদের বৈঠক হয়। কিন্তু এবার তা হয়নি বলে জানান টিটুবাবু। তবে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে রাস্তায় রাতের দিকে বাসের সংখ্যা বাড়বে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গাড়ির গতি সচল রাখতে এবং চালক-কন্ডাকদের চাঙ্গা করতে গতবার বন্ধ থাকা বোনাস এবার ফের চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।