রাহুল চক্রবর্তী কলকাতা : এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা! বহু পুরনো সেই প্রবাদই এবার বাস্তব হতে চলেছে বিধানসভার আঙিনায়, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসসি) ক্ষেত্রে। বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে বড় দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে সদ্য প্রাক্তন বিজেপি নেতাকে। আর যা নিয়ে তৃণমূলের এক রসিক নেতার মন্তব্য, জুনে ‘মুকুল’ এসেছে তৃণমূলে। এবার
ফুটবে পিএসিতে।
গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে ৪৩ মাসের সম্পর্ক শেষ করে ১১ জুন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন মুকুল রায়। সঙ্গী ছিলেন পুত্র শুভ্রাংশু রায়ও। তৃণমূল ভবনে এসে তাঁরা বৈঠক করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো দলের প্রথম সারির শীর্ষ নেতারা স্বাগত জানান মুকুল রায়কে। উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে মুকুল ও শুভ্রাংশুকে জড়িয়ে ধরেন অভিষেক। রাজনীতির ময়দানে মুকুলের তৃণমূলে যোগদান বিধানসভা নির্বাচনের পর সবথেকে আলোচিত খবর। মুকুলকে ঘিরে তৃণমূল শিবিরে উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনার ছবিও ধরা পড়েছে। তাঁর নিরাপত্তার জন্য থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ইতিমধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছেন মুকুলবাবু। রাজ্য পুলিসের পক্ষ থেকে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘরে ফেরা মুকুলের অভিজ্ঞতাকে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়ে বৈঠকও করেছেন মুকুলবাবু। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে জোড়াফুল ফোটাতে যখন মুকুল ময়দানে নেমে পড়েছেন, তখন বিধানসভার অন্দরেও ‘রায় সাহেবের ক্যারিশমা’ দেখা যাবে। এমনটাই খবর বিধানসভা ও তৃণমূল শিবির থেকে।
বিধানসভায় মোট ৪১টি কমিটি রয়েছে। তারমধ্যে অ্যাসেম্বলি কমিটি ১৫টি। আর স্ট্যান্ডিং কমিটির সংখ্যা ২৬। কিন্তু বিধানসভার সবথেকে আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ কমিটির নাম পিএসি। এই কমিটির চেয়ারম্যান ‘বিজেপির টিকিটে’ ভোটে জেতা মুকুল রায়কে করা হচ্ছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মুকুলবাবুর কথাবার্তা হয়েছে। কমিটির গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। পিএসি কমিটির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র মুকুলবাবু দাখিল করতে চলেছেন বলে খবর। মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে সই করছেন দু’জন বিধায়ক। কিন্তু মুকুলবাবুকে পিএসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কেন দেওয়া হচ্ছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনিক বিষয়ে মুকুলের অভিজ্ঞতা প্রশ্নাতীত। কেন্দ্রে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার তিনি কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তাছাড়া রাজনীতিতে তাঁকে ‘চাণক্য’ বলেও অভিহিত করা হয়। ফলে বিধানসভার অলিন্দে বিজেপিকে ঘায়েল করতে মুকুলকেই ব্যবহার করতে চলেছে রাজ্যের শাসক শিবির। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, মুকুলবাবুকে পিএসি চেয়ারম্যান হলে, তা ভালোই হবে। কারণ তিনি প্রশাসনিক বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। আগামী ২ জুলাই থেকে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। ফলে এখন নজর মুকুলে।