বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য
 

বিজেপিকে রুখতে মমতার পাশে চাকদহ
ধর্মে নয়, কর্মে আস্থা

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, চাকদহ: স্টেশন মোড়ে দিদির চায়ের দোকানে জমাটি ভিড়। দু’টি সিমেন্টের পোলে মুখোমুখি আটজন। জায়গা-সঙ্কটে কয়েকজন দাঁড়িয়ে। ভোট নিয়ে চলছে জোর কাঁটাছেঁড়া। সবাই যেন ভোট-পণ্ডিত! মতের পিঠে মত—তর্কের তুফান উঠছে রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সবার কাপে চা ‘ফিনিশ’। দ্বিতীয় রাউন্ডের চা নিয়ে হাজির দিদি। তর্কে সাময়িক বিরতি। চা দিতে দিতে দিদির মন্তব্য—‘চাকদহ নিজের ছেলেকেই চায়।’ শুনেই হো হো করে হেসে উঠল কলেজ পড়ুয়াদের দলটি। সমস্বরে ধ্বনি উঠল, এনকোর... এনকোর।
একুশের ভোটে তৃণমূলের হট স্লোগান—‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।’ তারই স্থানীয় সংস্করণ দিদির মুখে। বোঝা গেল এলাকার ভোট-হাঁড়ির খবরাখবর বেশ ভালোই রাখেন। কী বুঝছেন তাহলে? দিদির সাফ জবাব, ‘বোঝাবুঝির কিছু নেই। যে সারা বছর আমাদের পাশে থাকে, তাঁকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভোট দেবে না চাকদহবাসী। জিতবে যিশুই।’ ঘাড় নেড়ে দিদিকে সমর্থন জানাল শুভ, ভিকি, কিঞ্জনরাও। 
আসল নামের চেয়ে ডাকনামেই এলাকায় বেশি পরিচিত তৃণমূল প্রার্থী শুভঙ্কর সিংহ। দেওয়াল লিখন থেকে যাবতীয় ফ্লেক্স, ব্যানারেও তাই যিশু। প্রচারের ধারে-ভারে বিপক্ষ প্রার্থীদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল। তারপরও দিন-রাত এক করে কেন্দ্রের সব ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন শুভঙ্কর। সাড়া কেমন? ঘরের ছেলে, পরোপকারী ইমেজটাই কী আপনার ইউএসপি? ‘বলতে পারেন। চেষ্টা করি সুখে-দুঃখে সবার পাশে থাকার। আমার রাজনীতি বছরভর। কারণ, ছোটবেলা থেকে বাবা শিখিয়েছেন, ভোট আসবে, ভোট যাবে। কিন্তু মানুষ থাকবে। তাঁদের পাশে থাকতে হবে।’ ভোটে জিতে বাড়ি বাড়ি জলের লাইন পৌছে দেওয়া, এলাকাভিত্তিক ভ্যাটের তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। 
একদা চাকদহ বামেদের দুর্ভেদ্য দুর্গ। তা এখন অতীত। ২০১১ সাল থেকেই মমতার পাশে চাকদহবাসী। এবারেও ছবিটা একই থাকবে—প্রত্যয়ী শাসক শিবির। সেই প্রত্যাশার পারদ ওঠাচ্ছে স্থানীয় মানুষজন। কথা হচ্ছিল লালপুরের অনুপম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি একজন সরকারি কর্মী। অনুপমবাবু বলছিলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় আসেনি এখনও। তার মধ্যেই আমরা শীতলকুচি দেখলাম। তা নিয়ে গেরুয়া নেতারা যা মন্তব্য করছেন, ভাবা যায় না। চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক এই দল ক্ষমতায় এলে কী হবে, তা ভেবেই শিউরে উঠছি। এই আগ্রাসন রুখতে পারেন একমাত্র মমতা।’ উত্তর এনায়েতপুরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা তো বলেই দিলেন, ‘গেরুয়াতে ভরসা নেই।’ কথা বলে বোঝা গেল, পরিবারটি তৃণমূল সমর্থক। মতুয়া সম্প্রদায়। লোকসভা ভোটে পদ্মে ভরসা রেখেছিলেন। অচিরেই মোহভঙ্গ হয়েছে। এবার সম্পূর্ণ আস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই। তাঁদের কথায়, ‘কয়েকজন তৃণমূল নেতার ব্যবহারে বীতশ্রদ্ধ হয়েই বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা দল বদলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আমরা ফিরেছি দিদির পথে।’
দলবদলুদের নিয়ে যে চাকদহের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে, তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী বঙ্কিম ঘোষ। ভোট চাইতে গেলে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হচ্ছে বাম জমানার মন্ত্রীকে। ক্ষোভ রয়েছে বিজেপির নীচুতলার কর্মীদের মধ্যেও। ক্ষুব্ধ কর্মীদের একাংশ কার্যত বসে গিয়েছেন। তবে, ইভিএমে এর প্রভাব পড়বে না বলেই আশা প্রার্থীর। মোদির ‘সোনার বাংলা’ গড়ার শপথ ও নিজের বাম আমলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করতে চাইছেন বঙ্কিমবাবু। চাকদহের হাল ফেরাতে লাল ফেরানোর দাবি তুলে ছুটছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী নারায়ণ দাশগুপ্তও। প্রচারে কয়েক যোজন পিছিয়ে থাকলেও জয়ের আশা ছাড়ছেন না। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূল-বিজেপি দুই দলের উপরেই মানুষ বীতশ্রদ্ধ। তাঁরা ফের বামেদের চাইছেন।’
ফেরার পথে আলাপ টোটোচালক ইসমাইলের সঙ্গে। কথায় কথায় জানতে চাইলাম, হাওয়া কেমন? বললেন, ‘এখন তো চারদিকে ভোটের হাওয়া। কিছু বোঝার উপায় নেই। যদি উম-পুন বা লকডাউনের সময় আসতেন, তাহলে বুঝতেন। সেই সময়ে তৃণমূল কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার বিলি করেছেন। আটকে পড়া অনেককে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করেছেন। বাকিদের দেখা মেলেনি।’ 
স্টেশনের স্ট্যান্ডে ঢুকল টোটো। পাশের এক চালকের থেকে বিড়ি চেয়ে ধরিয়ে বললেন, ‘ও হিন্দু। আমি মুসলিম। এক বৃন্তে আমরা দু’টি কুসুম। দিব্যি রয়েছি ভাই। বিজেপি এটা চায় না। ওদের শুধু ধর্ম আর ধর্ম...। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধোঁয়া ছাড়লেন ইসমাইল। হাওয়ায় পাক খেতে খেতে মিশে গেল সেই ধোঁয়া...!

14th     April,   2021
 
 
কলকাতা
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ