নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর এবং সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: উত্তপ্ত চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ। শনিবার সকালে কোচবিহারের শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় চারজন ভোটারের। তার আগে ভোটের লাইনে এক তরুণও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই শিলিগুড়িতে পা রাখেন প্রধানমন্ত্রী। শীতলকুচি থেকে ১৩৫ কিমি দূরে তাঁর নির্বাচনী প্রচারসভা। সেখানে থেকেই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির আর্জি জানান নরেন্দ্র মোদি। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিচালনার পিছনে তিনি দায়ী করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোচবিহারে যা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। বিজেপির পক্ষে জনসমর্থন দেখে দিদি ও তাঁর গুন্ডারা ভয় পেয়ে গিয়েছে। কুর্সি যেতে বসেছে দেখেই দিদি এতটা নীচে নেমেছে। কিন্তু দিদি, টিএমসি, গুন্ডাদের সাফ বলে দিতে চাই, এসব বাংলায় আর চলবে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমার আবেদন, কোচবিহারে যা হয়েছে, তার দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দিদি এই হিংসা, লোককে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানো, ভোটপ্রক্রিয়া রুখে দেওয়ার চেষ্টা—এসব আপনাকে বাঁচাবে না। ১০ বছরের কুকর্ম থেকে এই হিংসা আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।’
এহেন তীব্র বিষোদ্গার সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর সভা জমেনি। ভরেনি কাওয়াখালির মাঠ। সকালে যেটুকু ভিড় ছিল, সেটা মূলত হেলিকপ্টার দেখার। কারণ, বেলা ১২টায় সভা মঞ্চের পাশে হেলিপ্যাডে মোদির কপ্টার নামার খানিকক্ষণ পর থেকেই মানুষ সভাস্থল ছাড়তে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা চলাকালীনও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বেও এই মাঠে সভা করেছিলেন মোদি। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিমল গুরুং। তাই সেদিন মাঠ উপচে জনজোয়ার পৌঁছে গিয়েছিল মহানন্দা সেতু পর্যন্ত। এবার গুরুং নেই। তাই আগের সভার সিকিভাগ লোকও হয়নি। পাহাড় থেকে কিছু লোক আনা হলেও, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনেননি।
এদিন ৪০ মিনিটের বক্তব্যে একই প্রসঙ্গই বারবার বলেছেন মোদি। উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্দিষ্ট করে তেমন কিছু বলেননি। শুধু জানিয়েছেন, ‘থ্রি-টি—টিম্বার, ট্যুরিজম ও টয়ট্রেন দিয়ে আমরা উত্তরবঙ্গকে সাজাব। চা ও সিঙ্কোনা শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাহাড়ের মানুষের সমস্যার সমাধান করা হবে। প্রত্যেককে জমির পাট্টা পাবেন।’ উন্নয়নের বদলে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আক্রমণেই বেশি সময় দেন তিনি। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রীর ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওর কথাও।
এদিন বিকেলে নদীয়ার কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে জনসভা করেন নরেন্দ্র মোদি। টানা তেত্রিশ মিনিটের সেই বক্তৃতাজুড়েও ছিল মমতা ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কাটমানি, সিন্ডিকেট, তোলাবাজের কটাক্ষ। মতুয়া ভোটারদের কথা মাথায় রেখে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রসঙ্গও টানেন তিনি। সেই সঙ্গে সাফাই দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর হয়ে। মোদি বলেন, ‘দিদি আজ নির্বাচন কমিশন, ইভিএম, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে গালি দিচ্ছেন। এখন নিজের দলের এজেন্টদেরও গালি দিচ্ছেন। অথচ, কেন্দ্রীয় বাহিনী বাকি চার রাজ্যের মতো গোটা দেশে সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। দিদি, সমস্যা নির্বাচন কমিশন বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নয়, আপনার। সমস্যা ছাপ্পা ভোট, হিংসার রাজনীতি বন্ধ করার। দিদি মনে রাখবেন, এটা ২০২১। বাংলায় আপনাকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু করতে দেওয়া হবে না।’ ‘ভাইপো’ প্রসঙ্গও শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়।
কৃষ্ণনগরে স্থানীয় ইস্যু নিয়েও এদিন প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় ছিলেন মমতা। তিনি বলেন, এখানকার পুতুল পট্টির দুর্দশার কারণ দিদি। বিজেপি সরকার এই শিল্পকে বাঁচাতে আধুনিক মার্কেটিং ব্যবস্থা চালু করবে। দিদির দুর্নীতি কৃষকের কোমর ভেঙে দিয়েছে। বিজেপি সরকার প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে পিএম কিষাণ সম্মাননিধি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেবে। ১৮ হাজার টাকা করে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছবে। সেই সঙ্গে জলঙ্গি, অঞ্জনা নদী সংস্কারের কথাও শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।