বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য
 

মাঠে কলেজের ‘দুই বন্ধু’,
গোলরক্ষক দিদিই
কেন্দ্র: উলুবেড়িয়া পূর্ব


বিশ্বজিৎ দাস, উলুবেড়িয়া: — আসুন, গঙ্গার ধারে হাওয়া আছে। বসে কথা বলি। উলুবেড়িয়া জেটিঘাটের সামনে থেকে তাঁর প্রচার শুরু হওয়ার কথা। কাস্তে-হাতুড়ি হাজির। দেখা মিলছে হাত চিহ্নেরও। একটা-দুটো করে বাইকের সংখ্যা বাড়ছে। মাথার উপর ক্রমশ প্রখর হচ্ছে সূর্যের তাপ। তবে জেটিঘাট বেশ ঠান্ডা জায়গা। গঙ্গাপাড়ে চা, জলখাবার, ভাতের ছোটখাট হোটেল। সেখানেই ২০-৩০ জন সমর্থক নিয়ে হাজির হলেন উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের অন্যতম আলোচিত চরিত্র—সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী আব্বাসউদ্দিন। বিদায়ী তৃণমূল বোর্ড পরিচালিত উলুবেড়িয়া পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান। ফ্ল্যাগ, সাইনবোর্ড, ব্যানারে তিনি দুই বড় দলের ধারেকাছেও নেই। কিন্তু তাঁকে অস্বীকার করতে পারবে না এখানকার কোনও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই। 
—তৃণমূল ছাড়লেন। তারপর আপনার নেতৃত্বে তুমুল অশান্তি চলল। টায়ার পোড়ানো, বিক্ষোভ। পরিস্থিতি তো রীতিমতো অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। 
—এতদিন ধরে দল করছি। কোনও গুরুত্ব নেই? প্রার্থী ঘোষণার আগে একবার জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করা হল না। মানুষ ক্ষোভ দেখিয়েছে। 
—তা বলে আইএসএফ? বহু হিন্দু এলাকাতেও যে ‘আব্বাসউদ্দিন  ভালো কাজ করেছে’ বলা হচ্ছে, এই তার প্রতিদান? 
—জানেন কি, আইএসএফের প্রার্থীতালিকায় অসংখ্য হিন্দু মুখ রয়েছে। কোনও কোনও দল গায়ে স্টিকার লাগিয়ে দিতে চাইছে। তাতে তাদেরই সুবিধা। 
—উলুবেড়িয়ার গলিতে কান পাতলে শোনা যায়, আব্বাসউদ্দিন দল ছেড়ে টিকিটের জন্য প্রথম গিয়েছিলেন বিজেপিতে। তারপর জোটের দরজায় কড়া নাড়েন। 
—(একটু থেমে) ওসব ছাড়ুন। জিতছি আমিই। এখানে পানীয় জলের সমস্যা, যানজট, টোটোর পারমিট, মিল শ্রমিকদের যন্ত্রণা আমার মতো কে জানে? ক্ষমতায় এসে চেষ্টা করব এইসব সমস্যা মেটাতে। 
বিধানসভা কেন্দ্রে গোনাগুনতি যে ক’টি জায়গায় আইএসএফ ব্যানার দিয়েছে, সব জায়গাতেই আব্বাসউদ্দিনের নামের উপর জ্বলজ্বল করছে লেখা—‘ভূমিপুত্র’। উলুবেড়িয়া পূর্ব আসনে এই ‘ভূমিপুত্র’ শব্দটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জগদীশপুরের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ডাঃ শেখ জালালউদ্দিন উত্তর দিলেন, সত্যিই এখানে তৃণমূলের ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থী দেওয়ার দরকার ছিল। আমাদের বিধানসভার ইতিহাস দেখুন, হায়দার আজিজ সফি, ইদ্রিশ আলি—সবাই বাইরের মানুষ। প্রার্থী হওয়ার মতো কি কেউ এখানে ছিলেন না? গলায় ক্ষোভের সুর স্পষ্ট। বলেই চললেন, যিনিই বিধায়ক হন, আমাদের দু’টি দাবি থাকবে। এক, উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত রাস্তা যানজটমুক্ত করতে হবে। দুই, এখানে সরকারি আইসিইউ পরিষেবা, ট্রমা কেয়ার দরকার। জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষা বিধানসভা। প্রচুর পথ দুর্ঘটনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুধাংশু মুখোপাধ্যায়ের আবার বললেন, ‘রাস্তাঘাট ভালোই হয়েছে। বিশেষত গ্রামের ভিতরে। তবে এখানে মেয়েদের কলেজ চাই। অল্পবয়সিদের চাকরির কথাও ভাবতে হবে।’ 
রেললাইন পার করে পশ্চিম বাউরিয়া কেবিন রোড। সেখানেই বাড়ি বাড়ি প্রচার করছেন বিজেপির হাওড়ার গ্রামীণ সভাপতি প্রত্যুষ মণ্ডল। কোথায় উনি? এক পথ প্রদর্শকের পিছু পিছু কিছুটা এগিয়েই দেখতে পেলাম পদ্মপতাকায় ঘেরা গ্রাম। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দুপুরের খাবার সারছেন প্রত্যুষবাবু। তারপর চলল প্রশ্নবাণ আর উত্তরমালা। 
—এখানকার ইস্যু কী কী? 
—অজস্র। উলুবেড়িয়াকে কীভাবে সংখ্যালঘুদের একাংশ বোমাগুলির কারখানা বানিয়ে ফেলেছে জানেন? হিন্দুরা রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এখানে। 
—সংখ্যালঘু মানেই সন্ত্রাস, লোকে বলে এ আপনাদের চেনা ছক। রীতিমতো পড়ানো হয়। সাধারণ মানুষের কী কী সমস্যা মেটাবেন বলে ভোট চাইতে যাচ্ছেন?
—পানীয় জলের অভাব। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বেহাল পুর পরিষেবা। মানুষের অজস্র সমস্যা। একবার ভেবে দেখুন, কলকাতার মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে অন্যতম বড় শহর, দেখে কেউ বলবে?
—আপনিও তো দেখছি ‘ভূমিপুত্র’ শব্দকে হাতিয়ার করছেন।
—নিঃসন্দেহে ‘ভূমিপুত্র’ বড় ইস্যু। বলতে দ্বিধা নেই, আব্বাস তৃণমূলে থাকলে এই আসন আমার কাছে কঠিন ছিল। ও, আমি কলেজ লাইফের বন্ধু। সবারই রাজনৈতিক ভূমি উলুবেড়িয়া কলেজ। 
—এখনও তো লড়াই ত্রিমুখী? বিদেশ বসু তৃণমূল প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু আসল লড়াই তো দিদি আর তৃণমূলের গ্রামীণ সভাপতি পুলক রায়ের সঙ্গে।
মৃদু হাসি দিয়ে জবাব এড়ালেন প্রত্যুষবাবু।
উলুবেড়িয়া পুরসভা ‘অমর-আকবর-অ্যান্টনি’ বলা হত বিদায়ী চেয়ারম্যান অভয় দাস, বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান আব্বাসউদ্দিন ও বিদায়ী কাউন্সিলার আকবর সাহেবকে। আব্বাস বেরিয়ে গিয়েছেন। তাতে তৃণমূল প্রার্থী বিদেশ বসুর লড়াই কতটা কঠিন হল? অভয়বাবু অবশ্য বলছেন, মোটেই ‘টাফ’ নয়। আমরা দল করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে। এই দলে ‘আমিত্ব’ ছাড়তে হবে। সব আসনে প্রার্থী উনিই। উনিই গোলরক্ষক। তাছাড়া পুরসভায় প্রচুর কাজ হয়েছে। আমরাই জিতছি। ‘ভি’ চিহ্ন দেখালেন অভয়বাবু। 
ফল যাই হোক না কেন, প্রধানত শহরকেন্দ্রিক এই বিধানসভার লড়াই টানটান। দুপুরে জাতীয় সড়কের ধারে একটি ধাবায় মধ্যাহ্নভোজন সারতে গিয়েও তাড়া করল সেই এক প্রশ্ন—দাদা, কী বুঝঝেন, কী হবে? এই উত্তর একমাত্র জানেন একজনই— অন্তর্যামী!   
দলীয় কর্মীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারছেন বিজেপি প্রার্থী প্রত্যুষ মণ্ডল (বাঁদিকে)। উলুবেড়িয়ার ‘ভূমিপুত্র’ হিসেবে ভোট চাইছেন জোট প্রার্থী আব্বাসউদ্দিন। -নিজস্ব চিত্র

8th     April,   2021
 
 
কলকাতা
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ