বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য
 

আগে ভাত,পরে ধর্ম,
বলছেন ভোটাররা
কেন্দ্র: আলিপুরদুয়ার

অনুপ চট্টোপাধ্যায়, আলিপুরদুয়ার: তপসিখাতার বাসিন্দা যতীন দাসকে কর্মসূত্রে প্রতিদিন জেলাসদর আলিপুরদুয়ারে আসতে হয়। কিন্তু যাতায়াতের মূলপথে প্রধান বাধা দক্ষিণ পাটকাপাড়ার কাছে কালজানি নদী। সেই বাম আমল থেকে সেখানে সেতু আর হচ্ছে না। তাঁর কথায়, প্রতিবার ভোটের আগে সেতু তৈরির জন্য মাপজোক হয়। মাটি পরীক্ষা করা হয়। ব্যস, ওইটুকুই। বাম আমল থেকে তৃণমূল জমানা, এখনও হল না সেতু। ভোটে সবদলের মুখেই শুধু খেলা হবে, খেলা হবে শুনছি। এবার তাই ‘অন্য কিছু’  ভাবতে হবে, জানালেন যতীন।  
শিলাবাড়িহাটে ভোলানাথ হোটেলে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন নিতাই বর্মন। রাজবংশী পরিবারে জন্ম, আলিপুরদুয়ারের ভোটার। বললেন, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের এলাকার জন্য অনেক কিছু করেছেন।  কিন্তু সেসব প্রসঙ্গ ভোটে আসছে না। এবার ভোটে পরিকল্পিতভাবে ধর্মকে সামনে আনা হচ্ছে, যা ভয়ঙ্কর। 
নিতাই বর্মনদের আশঙ্কা ছড়িয়েছে আলিপুরদুয়ারের আনাচে কানাচে। টটপাড়া এলাকার বাসিন্দা মিনা ওঁরাও সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার জন্য ফালাকাটায় ডিউটি করতে এসেছিলেন। বললেন, এবার নতুন ভোটার হয়েছি। ভোট এক উৎসব বলে জানতাম। এবার সবকিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধক্ষেত্র। 
দীর্ঘকাল বামেদের দুর্গ বলে পরিচিত ছিল আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র। আরএসপির নির্মল দাস ১৯৮৫ সাল থেকে টানা বিধায়ক ছিলেন। ২০১১ সালে প্রবল তৃণমূল স্রোতে তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেস ওই আসনটি দখল করে। বিধায়ক হন দেবপ্রসাদ রায়। আর ২০১৬’র নির্বাচনে শাসক তৃণমূলের হাতে আসে আলিপুরদুয়ার। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণের ঝড়ে ওলটপালট হয়ে যায় আলিপুরদুয়ার। শাসকদলকে পিছনে ফেলে প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে এগিয়ে যায় বিজেপি। রাজনীতির আঙিনায় নতুন এই শক্তিই এবার তৃণমূল এবং কংগ্রেসের কাছে ‘থ্রেট’, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। যদিও তৃণমূল প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তী বিজেপিকে আমল দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, এখানে রামের নাম করে ভোট হয় না। ভোট হয় জাতীয়তাবাদের আদর্শে। আর আমাদের লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে। বিজেপি তৃতীয় স্থানে থাকবে। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে সৌরভকে জেতানোর পিছনে ভূমিকা ছিল দেবপ্রসাদ রায়ের। এলাকায় তিনি মিঠু নামেই পরিচিত। এবার তিনি নিজেই আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস প্রার্থী। আলিপুরদুয়ারবাসীর ‘কাছের লোক’ও। উল্টোদিকে মিঠুবাবু থাকায় লড়াই কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলেরও একাংশ। তবে কাটাকুটি হলে সেই ফয়দা বিজেপি পাবে না তো? আলিপুরদুয়ার পুরসভার প্রশাসক মিহির দত্ত বললেন, বিজেপি প্রার্থী আনকোরা। 
স্থানীয় মহলে ততটা পরিচিত নন। তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে তাঁদের দলেই যথেষ্ট ক্ষোভ। তাই বিজেপির অনেকেই এবার ‘উল্টো পথে’ হাঁটতে পারেন। মিলিয়ে নেবেন।  আলু সহ একাধিক সব্জি চাষ, চা-বাগান এসবই আলিপুরদুয়ারের জীবিকার মূল উৎস। রয়েছে পর্যটন ব্যবসাও। তবে চা বাগানের হাজার হাজার শ্রমিকের স্বার্থরক্ষার দিকে বেশি নজর তৃণমূলেরই। এখানকার আদিবাসীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। পাতলাখাওয়ার শীলা ওঁরাওয়ের কথায়, এতকাল পরে একটা সরকার পেয়েছি, যারা আমাদের অভাব-অভিযোগ দেখছে। আর গেরুয়া বাহিনী? তাঁর সপাট জবাব, ‘আগে পেট, পরে ধর্ম। ওরা তো রামের নামে ভোট চাইছেন’। 
এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ১৭ শতাংশ। তাতে ভাগ বসাতে চায় কংগ্রেসও। প্রার্থী দেবপ্রসাদবাবু বলেন, দলের গণ্ডির বাইরে গিয়েও মানুষের কাছে সমর্থন চাইছি। এটা আমার শহর। পাওয়ার গ্রিড করেছি। অসম গেটে সেতু করেছি। আমি বিধায়ক থাকার সময়েই কলেজ হয়েছে। ৬৪টি উন্নয়নমূলক কাজের তালিকাও ভোটারদের দিচ্ছেন তিনি। তবে বিজেপিকে রুখতে তিনি যে এককাট্টা, তা চড়া গলায় বলছেন ভোটারদের। অন্যদিকে, বিজেপিও তাদের গা থেকে ‘সাম্প্রদায়িকতার’ তকমা ঘোচাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। দলের প্রার্থী সুমন কাঞ্জিলাল বললেন, জয় শ্রীরাম ধ্বনিকে হিন্দুত্বের প্রচার বলছে ওরা। এটা ওদের অপব্যাখ্যা। আমরা মানুষকে তা বোঝাচ্ছি। সুমনের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার শহরে সবার কাছে এখনও পানীয় জল পৌঁছয়নি। জঞ্জাল নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ২০১৪ সালে আলিপুরদুয়ার শহরের যে উন্নয়ন হয়েছে তা স্বীকার করে সুমন বলেন, সেসময় উনি করেছিলেন ঠিকই। তবে তাতে এখনকার তৃণমূল প্রার্থীর কোনও অবদান নেই। বরং ওঁর ব্যবহারে ক্ষুব্ধ স্থানীয় অনেকেই। এটাই আমাদের বাড়তি লাভ। যদিও তৃণমূল সরকারের  সাফল্যকেই প্রচারের মুখ করছেন সৌরভ। তাঁর বিশ্বাস, উন্নয়ন যদি জনভিত্তির মাপকাঠি হয়, তাহলে আলিপুরদুয়ার বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক দলের জয়ধ্বজা ফের উড়বে। 

8th     April,   2021
 
 
কলকাতা
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ