নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আদিবাসীদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের জেরে শুক্রবার সকাল থেকে যানজটে লণ্ডভণ্ড হল কলকাতা। কাজের দিনে অফিসটাইমে হাওড়া ব্রিজ সহ শহরের বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন হাজার হাজার মানুষ। সকাল ন’টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে আসা মিছিলের জেরে হাওড়া ব্রিজে যান চলাচল থমকে যায়। দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে যাঁরা হাওড়া স্টেশনে যাচ্ছিলেন, তাঁরা বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে অনেকে লঞ্চে চেপে হাওড়া পৌঁছন। ব্রিজে ওঠার মুখে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, সেই যাত্রীরা ক্যাব-ট্যাক্সি ছেড়ে লাগেজ হাতে ফুটপাত ধরে কার্যত ছুটতে থাকেন স্টেশনের দিকে। হাওড়া ব্রিজের সবক’টি লেন মিছিলের জেরে থমকে যাওয়ায় বাস-মিনিবাসের চাকাও গড়ায়নি। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকার পর বহু মানুষকে রীতিমতো দৌড়ে দৌড়ে অফিসে যেতে হয়েছে। মিছিলের জেরে কোথাও আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স, কোথাও স্কুলবাস। সকাল থেকে ট্রাফিক পুলিস তৎপর থাকলেও শহর খুব একটা সচল রাখতে পারেনি তারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বিকেল গড়িয়ে যায়।
কুড়মিদের এসটি মর্যাদার দেওয়ার দাবির বিরোধিতা, ২০২৩ সালের বন সংরক্ষণ আইন বাতিল সহ একগুচ্ছ দাবিতে এদিন মিছিল ও জমায়েতের ডাক দিয়েছিল ইউনাইটেড ফোরাম অব অল আদিবাসী অর্গানাইজেশন। তাদের ডাকে এদিন সকাল থেকে জঙ্গলমহল সহ রাজ্যের সব জেলা থেকে দলে দলে আদিবাসী তির-ধনুক, কুঠার হাতে নিয়ে ধর্মতলা আসতে শুরু করেন। হাওড়া স্টেশন থেকে আসা মিছিলের জেরে হাওড়া ব্রিজ, স্ট্র্যান্ড রোড, ব্রাবোর্ন রোড, ইন্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্লেস, পোদ্দার কোর্ট, রবীন্দ্র সরণি, বেন্টিংঙ্ক স্ট্রিট সহ ধর্মতলামুখী সব রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। প্রভাব গিয়ে পড়ে স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড, বড়বাজার, পোস্তা, রবীন্দ্র সরণি, গিরিশ পার্ক এলাকায়। শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও আদিবাসীদের মিছিল যায় ধর্মতলা অভিমুখে। তার জেরে বেলেঘাটা মেইন রোড, এপিসি রোড, মৌলালি, এমজি রোড, এজেসি বোস রোড, এস এন ব্যানার্জী রোড, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, ডোরিনা ক্রসিং, জওহরলাল নেহরু রোড, ডাফরিন রোড, রেড রোড, লেনিন সরণি, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ যানজটের কবলে পড়ে। শারদোৎসবের মুখে ব্যবসায়ীদের বিক্রিবাটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব কারণে। কলকাতার পাশাপাশি হাওড়ায় যানজট মাত্রাছাড়া পর্যায়ে পৌঁছয়। হাওড়া ব্রিজ থমকে যাওয়ায় সালকিয়া স্কুল রোড, জিটি রোডে যান চলাচল থমকে যায়। বঙ্কিম সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাগুলিও ব্যাপক যানজটের কবলে পড়ে।
আন্দোলনের প্রভাব পড়ে হাইকোর্টেও। আদালতে আসার পথে রাস্তায় আটকে পড়ে একাধিক বিচারপতি ও আইনজীবীর গাড়ি। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গাড়িও আটকেছিল। তবে বিচারপতি পুলিসের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘কলকাতা পুলিসের ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট দারুণ কাজ করেছে। আমার গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে পার করেছে। না হলে সময়ে এজলাসে পৌঁছতে পারতাম না।’