বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

হরিপালে সরকার বাড়ির পুজোয় আমিষ খেয়ে প্রতিমা গড়লে আগমন  হয় সাপ, বিছে, বিষাক্ত কীটপতঙ্গের

অমিত চৌধুরী  তারকেশ্বর: হরিপালের অলিপুর সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে। এখানে প্রতিমা গড়ার সময় মৃৎশিল্পীদের নিরামিষ আহার করতে হয়। পাছে ভুল করে কেউ আমিষ গ্রহণ করলে বা মদ্যপান করলে আটচালার নাটমন্দিরে সাপ, বিছে, বিষাক্ত কীটপতঙ্গের আনাগোনা বাড়ে। একবার ভয়ে সেই মৃৎশিল্পী মাঝপথেই পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। লোককথায়, দেবী এখানে জাগ্রত। এবার এই পুজো ২২০ বছরে পা দিতে চলেছে।
বনেদি বাড়ির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বেশিরভাগ পুজোরই প্রতিষ্ঠাতা সংশ্লিষ্ট পরিবারের কোনও পুরুষ। সরকার বাড়ি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এই পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন মহিলা। বঙ্কুবিহারী সরকারের স্ত্রী নীরদাময়ী দাসি স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়িতেই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। সরকার পরিবারের সদস্য তপন, সঞ্জীব ও সত্যজিৎরা বলেন, পুরনো মন্দির, সিংহদুয়ার বর্তমানে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরিবর্তে নতুন করে তৈরি হয়েছে আটচালা ও নাটমন্দির। এক সময় জমিদারি ছিল আমাদের পরিবারের। বর্ধমানের রাজাকে খাজনা দেওয়া হতো। ধীরে ধীরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়। পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় চলে গিয়েছেন। তবে পুজোর সময় অনেকেই আসেন। এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় ১৩০ জন। একচালার মূর্তি, ষোড়শ আচারে নিষ্ঠার সঙ্গেই পুজোপাঠ হয় এই সরকার বাড়িতে।
কথিত আছে, একসময় সিংহদুয়ার ভেঙে ডাকাতদল ঢুকেছিল বাড়িতে। দরজা ভাঙার পর তারা দেখে, দুয়ারে দাঁড়িয়ে স্বয়ং দেবী দুর্গা। তারপর ডাকাতি না করেই ভয়ে ফিরে যায় তারা। পরবর্তীকালে ডাকাতদলের লোকজনের কাছ থেকেই দুয়ারে দুর্গার কথা জানাজানি হয়।
আগে একটা সময় মোষ ও ছাগল বলি হতো। শোনা যায়, বছর ষাটেক আগে যে ছাগলটি বলি দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল, সেটি সাপের দংশনে মারা যায়। তখন পরিবারের কর্তা নীলরতন সরকারের নির্দেশে বন্ধ হয় পশু বলি প্রথা। পরিবর্তে আখ, আদা, ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। 
সরকার বাড়ির দেবী যে জাগ্রত, তার স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা প্রতিমা শিল্পী প্রদ্যুৎ শী। তাঁর কথায়, গত ১০ বছর ধরে আমি প্রতিমা তৈরি করছি এখানে। আমার আগে যিনি এখানে প্রতিমা তৈরি করতেন, তিনিই আমাকে বলেছিলেন, এই প্রতিমা তৈরি করলে মাছ, মাংস, মদ্যপান কোন কিছুই করা যাবে না। একদিন তিনি নাকি মাংস খেয়ে প্রতিমা গড়তে এসেছিলেন। তার পরিণাম ছিল ভয়াবহ। সাপ, বিছে সহ অন্যান্য বিষাক্ত কীটপতঙ্গে ভরে উঠেছিল গোটা মন্দির। ভয়ে তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন। অন্যান্য জায়গায় প্রতিমা করতে যদি তিনদিন সময় লাগে, সেই কাজ করতেই এখানে লেগে যায় কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছ’দিন। কারণ এখানে রাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সবাই একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। যে, যে অবস্থায় থাকেন, সেই অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। কেউ মাটি হাতে ঘুমোন, কেউ আবার প্রতিমার সাজ হাতে ধরেই চলে যান ঘুমের রাজ্যে। মহালয়ায় হয় দেবীর চক্ষুদান। সেদিন নির্জলা উপোষ করতে হয়। প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গা থেকে এই জাগ্রত দেবীমূর্তি দর্শন করতে হরিপালে উপচে পড়ে ভিড়।

26th     September,   2023
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ