নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দুপুর গড়াতেই নামল স্বস্তির বৃষ্টি। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সর্বত্র গত কয়েকদিন ধরে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি চলছে। গত দু’দিন রোদের দাপট সেভাবে না থাকলেও অস্বাভাবিক গরমে জেরবার হয়েছে মানুষ। চাতকের মতো দু’ফোটা বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ করে বসেছিল সবাই। শুক্রবার দুপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আবহাওয়ার হালচাল বদলাতে শুরু করে। বিকেলে বৃষ্টি শুরু হয় কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। সঙ্গে মুহুর্মুহু বজ্রপাত এবং ঝোড়ো হাওয়া। খাস কলকাতায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় দু’জন মহিলার। পুলিস জানিয়েছে, প্রগতি ময়দান থানা এলাকার ধাপায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে পলানি মণ্ডল (২৪) ও কাজলা নস্কর (৫৮) নামে দুই মহিলার। তাঁরা কাগজকুড়ানি ছিলেন। বজ্রাঘাতে গুরুতর জখম হন সন্ন্যাসী মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। 
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মায়ানমার উপকূল সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ থেকে কিছু মেঘপুঞ্জ বাংলাদেশ হয়ে রাজ্যের দিকে চলে আসাটাই এই ঝড়বৃষ্টির কারণ। কলকাতা ছাড়াও নদীয়া, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া জেলা এদিন বৃষ্টিস্নাত হয়েছে। কলকাতা সহ কয়েকটি জেলায় রাত পর্যন্ত চলে বৃষ্টি। রাজ্যের উপকূল সংলগ্ন ও নিকটস্থ জেলাগুলিতে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বিক্ষিপ্ত ঝড়-বৃষ্টি আপাতত চলবে বলেই জানানো হয়েছে। তবে অস্বস্তিকর গরম থেকে এখনই অব্যাহতি মিলবে না। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা রয়েছে। এই জেলাগুলির অনেক জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে রয়েছে গত ক’দিন ধরে। শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গে সর্বাধিক গরম ছিল ঝাড়গ্রামে (৪৩.৫ ডিগ্রি)। পুরুলিয়া (৪৩.৩), আসানসোল (৪২.৯) বাঁকুড়া (৪২.৫) প্রভৃতি জায়গায়ও তাপমাত্রা বেশ চড়া ছিল। 
উত্তরবঙ্গে হিমালয় সংলগ্ন জেলাগুলিতে কিন্তু পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা ছিল। ১৫ জুন পর্যন্ত সেখানে (দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলা) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। দার্জিলিংয়ের কয়েকটি জায়গায় ধস এবং নিচু এলাকায় জল জমতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। কোচবিহার সহ কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে মালদহ ও দুই দিনাজপুরে আজ, শনিবার তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিই থাকবে। আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে বর্ষা প্রবেশ করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর। এদিকে, মায়ানমার উপকূল সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় রাজ্যের মৎস্যজীবীদের শনিবার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস জানিয়েছেন, নিম্নচাপটি সমুদ্রের উপর অবস্থানকালে সেখান থেকে ভেসে আসা মেঘপুঞ্জের জেরেই দক্ষিণবঙ্গে আপাতত চলবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত।