বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

বইমেলায় জীবনের পথে এগিয়ে চলার
বার্তা দিচ্ছে অভিভাবকহীন কিশোরীরা

সোমনাথ বসু, কলকাতা: পড়ন্ত বিকেলে বসন্ত শুরুর আভাস। রোদের তেজ কিছুটা হলেও কম। ব্যস্ত বইমেলা। ভিড় বাড়ছে। আট থেকে আশির। বাসস্ট্যান্ডের ঠিক গা লাগোয়া আট নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই শুরু হচ্ছিল খুদেদের আব্দার—‘বাবা, এবার কিন্তু টিনটিন কিনে দিতেই হবে।’ কারও আবার চাই ফেলুদার কাণ্ডকারখানা। কয়েক পা দূরেই ‘শিশু আলয়’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের স্টল। সামনে রাখা খান বিশেক চেয়ারে বসে উদাসী দৃষ্টি ফেরাচ্ছিল একঝাঁক কিশোরী। একে অপরের দিকে। কারণ, তাদের তো আব্দার মেটানোর কেউ নেই। কারও থেকেও নেই, কেউ জানেই না বাবা-মার পরিচয়। ভাগ্যই তাদের আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। বইমেলায় বই কেনার কথা স্বপ্নেও ভাবার সাহস পায় না। দুর্গাপুজো এবং বইমেলা তাদের কাছে মানুষ দেখার দু’টো সুযোগ মাত্র। কিশোরী হৃদয়ের ক্যানভাসে তাই জেগে থাকে সাদা-কালো অতৃপ্তি। 
নিষিদ্ধপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া হাসি, খুশিদের  (নাম পরিবর্তিত) অন্ধকার জীবনে মেলার অক্সিজেন জোগানোর নেপথ্যে কৃত্তিকা প্রোটেকশন হোম এবং নিউ লাইট সংস্থা। সোমবার বিকেলে মেলায় ঘণ্টা তিনেকের সফর। ‘শিশু আলয়ে’র অনুষ্ঠানের জন্য। এই কিশোরীরাই অনুষ্ঠানের প্রাণবিন্দু। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাউন্ড বক্সে বেজে উঠল, ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায়...’। আর হাসি-খুশিদের সাবলীল নৃত্য এক মুহূর্তে ধুইয়ে দিল দর্শকদের মনের কোণে জমে থাকা সব দীনতা-মলিনতা। তাদের এক-একটি মুদ্রাতেই ছিল সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার। নৈপুণ্যের দিক থেকে হয়তো এই নাচ ‘পারফেক্ট টেন’ নয়, কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ততায় ‘একশোয় একশো’। কার্যত শৈশব হারানো হাসি-খুশিদের জীবনে এই কয়েকটি ঘণ্টা তো অমূল্য!
কীভাবে বেড়ে উঠছে এই কিশোরীরা? কৃত্তিকা এবং নিউ লাইটের প্রতিনিধিরা জানালেন, ‘পড়াশুনো এবং সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে দিয়ে এদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। অন্ধকার অতীত ভুলে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণার জন্য শিক্ষার বিকল্প তো কিছুই হতে পারে না।’ অনুষ্ঠানের শেষে সমাজে পিছিয়ে পড়া কিশোরীদের জন্য ছিল গল্প পাঠের আসর। জয়দীপ কুণ্ডু ও সুচন্দ্রা কুণ্ডুর মুখে বাঘ, হরিণ, মৌমাছির গল্প, সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয় খুব মন দিয়ে শুনল সবাই। মাঝেমধ্যে ছুড়ে দিল বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নও। কয়েকটি বিষয় নিয়ে তাদের কথা শুনল বইমেলার ভিড়। বোঝা গেল, জীবনের কঠিন, কঠোর পথ পাড়ি দিতে হাসি-খুশিরা নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। সত্যিই বইমেলা শুধু কেনাবেচার হাট নয়, শিক্ষার কত উপাদান ছড়িয়ে আছে এই মিলনক্ষেত্রে।  
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। স্টলে স্টলে বাড়ছে ভিড়। শুধু বই নয়, ব্যাগ, খাবার, আচার কেনার আগ্রহে বাঙালির একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে, চলবে। আর ঠিক সেই সময়ে ‘হোমে’র পথে ফেরার পালা সেই কিশোরীদের। মেলা প্রাঙ্গণে বাজছে, ‘যখন ফুরিয়ে বেলা, চুকিয়ে খেলা তপ্ত ধুলার পথে/যাব ঝরা ফুলের রথে--/তখন সঙ্গ কে লবি...’। অস্থায়ী অভিভাবিকার হাত ধরে থাকা হাসিও গেয়ে উঠল, ‘লব আমি মাধবী’। সঙ্গে থাকার প্রত্যয় তো সাথীহারাদেরই মানায়।  বইমেলায় নৃত্য পরিবেশন করছে হোমের কিশোরীরা। -নিজস্ব চিত্র

7th     February,   2023
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ