বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

ফেলুদার খোঁজে
কলকাতার পথেঘাটে

কলহার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: কলিং বেল একটা আছে বটে। তবে দরজার মাঝামাঝি লাগানো লোহার কড়াটাই আসল। ঠকঠক করে দু’বার নাড়তে হবে। পাঞ্জাবি আর ট্রাউজার পরা ৬ ফুট ২ ইঞ্চির চেহারাটা বেরিয়ে এলেই ষোলকলা পূর্ণ! 
সেটা অবশ্য হল না। কারণ, ২১ নম্বর রজনী সেন রোডের বাড়িটা আদপে নেই। ছিলও না কোনওদিন। ঠিক বাঙালির হাড়ে মজ্জায় মিশে থাকা প্রদোষচন্দ্র মিত্রের মতো। তবু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঙালি খুঁজে যায় ফেলু মিত্তিরকে। বইয়ের পাতা থেকে সিনেমার পর্দায়। কেউ কেউ আবার সেসব পেরিয়ে ‘সন্ধ্যা শশী বন্ধু’র রহস্য উদ্ধারে নেমে পড়েন রাজপথে। শনিবার এরকমই খোঁজাখুঁজি চলল দিনভর। রীতিমতো দলবেঁধে। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের হেরিটেজ কমিটি এবং ‘ওয়াক ক্যালকাটা ওয়াক’ নামে একটি ফোরাম আয়োজন করেছিল সেই অনুষ্ঠানের। নাম—‘ফেলুদা দ্য নস্টলজিয়া, ওয়াক অ্যাক্রস কলকাতা’।
রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে ফেলুদা পা রেখেছিলেন কিংবা তাঁর স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় টেনে এনেছিলেন যেখানকার অনুষঙ্গ, সেই জায়গাগুলিকে ফিরে দেখাই ছিল উদ্দেশ্য। সেই গুপ্তধনের কয়েকটির খোঁজে এদিন সকাল সকাল একটি হলুদ রঙের বাসে চেপে বেরিয়েছিলেন বিভিন্ন পেশার জনা পঁয়ত্রিশ ফেলুদাপ্রেমী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম চেম্বার্সের জিএম কাপুর, বৈশাখী ডালমিয়া, সুকন্যা বোস, অভিষেক কোয়ার, ‘ওয়াক ক্যালকাটা’র অয়ন মণ্ডল। ফেলুদাকে অনুসরণ করতে করতে কখনও তাঁদের সামনে কখনও উঠে এসেছে ছোটবেলার সত্যজিৎ, আবার কখনও ফেলুদার সংলাপের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্য।
দলটির প্রথম গন্তব্য ছিল সত্যজিতের জন্মস্থান গড়পার। সেখানে এথেনিয়াম ইনস্টিটিউশনে স্মরণ করা হয় লালমোহনবাবুর কীর্তি কাহিনি। তারপর রওনা দেওয়া হয় মার্বেল প্যালেসের উদ্দেশে। এই প্যালেসের একদা মালিক রাজেন্দ্র মল্লিকের কথা উঠে এসেছিল ‘বাদশাহী আংটি’-তে। এসেছিল চিড়িয়াখানার প্রসঙ্গও। পরবর্তী গন্তব্য ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম। জাহাঙ্গিরের স্বর্ণমুদ্রা গল্পে পানিহাটির জমিদার বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া মুদ্রা খুঁজে দেখার পালা ছিল। এরপর বিশপ লেফ্রয় রোড। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়। ছিল একটি ভিন্টেজ গাড়িও। সন্দীপবাবুর সঙ্গে আলাপ আলোচনার ফাঁকে হল ফটোসেশন। কথাবার্তার ফাঁকে সন্দীপবাবু বললেন, ‘ফেলুদা সিরিজ চলবে। আবার পর্দায় আসবে ফেলুদা।’ এই পর্বের পর যাওয়া হয় রজনী সেন রোডে। সেখানে ২১ বি বাড়ি রয়েছে। সেটির বাসিন্দারা ফেলুদার নিকটতম প্রতিবেশী। তাঁদের সঙ্গে খোশগল্পের ইচ্ছে অবশ্য পূর্ণ হয়নি।
সত্যজিতের গল্প থেকে উঠে আসা তথ্যে দেখা যায়, ফেলুদার পৈতৃক বাড়ি বিক্রমপুরের সোনাদিঘি গ্রামে। বাবার নাম জয়কৃষ্ণ মিত্র। পেশায় স্কুলশিক্ষক। কলকাতায় আসার পর ফেলুদারা তারা রোডে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত। তারপর ২১ নম্বর রজনী সেন রোডে কাকা বিনয় মিত্রের বাড়ি ফেলুদার পাকাপাকি বাসস্থানে পরিণত হয়। ছোটবেলায় ফেলুদার বাবা-মার মৃত্যু হয়। কাকার পরিবারে মানুষ। তাঁরই ছেলে তপেশরঞ্জন ওরফে ফেলুর স্যাটেলাইট তোপসে। সেই বাড়ি না থাকলেও গল্পের ফেলুর জন্মস্থানটা কিন্তু বাস্তবে আছে। সন্দীপবাবু বলছিলেন, ‘আমার অনুরোধ ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোডে আপনারা যান। কারণ, ওই বাড়িতে বসেই ফেলুদা গল্প লেখা শুরু করেছিলেন বাবা।’ সেই আঁতুড়ঘর দেখতেও যাওয়া হয়েছিল। সেখানে অবশ্য এখন ভাঙাভাঙি চলছে বলে জানালেন অয়নবাবু। 
ফেলু-রহস্যের সরণিতে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা নামে একসময়। গড়পার, বিশপ লেফ্রয় রোড, রজনী সেন রোড পিছনে ফেলে ফেরার পথ ধরে হলুদ বাস। তবে এ জার্নি শেষ হওয়ার নয়। বাঙালি যতদিন থাকবে, ততদিন ফিরে আসতে হবে এ মগজাস্ত্রের কাছে। বলতে হবে... ‘আপনাকে তো কালটিভেট করতে  হচ্ছে মশাই।’ - নিজস্ব চিত্র

29th     January,   2023
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ