বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

একলহমায় ফিরে যাওয়া যায় শৈশবে,
‘পুরনো মেলা’ যেন আস্ত টাইম মেশিন

সোহম কর, কলকাতা: কোনও সকালে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দক্ষিণ শাখার লক্ষ্মীকান্তপুর বা নামখানা লোকালে উঠে মথুরাপুর রোড স্টেশন। নেমে খানিক হাঁটা। তারপর দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মেলার মাঠ। মেলায় ঢোকার পর মনে হবে ট্রেন নয় টাইম মেশিনে চড়ে চলে আসা হয়েছে বিষ্ণুপুরে। এখানকার স্থানীয়রা বলেন ভাঙা বা পুরনো মেলা। সেখানে দাদু-ঠাকুরদার মুখে শোনা গল্পের মতো ক্যামেরা, সাদাকালো টিভি, আবলুস বার্নিস করা কাঠের আসবাব, বই, সংবাদপত্র, ঘড়ি, বাদ্যযন্ত্র, লন্ঠন থেকে বোতাম টেপা ভিডিও গেমস, কী নেই!  এখানে এলে মনে হবেই হবে, ছোটবেলার দুনিয়াটা এখানে থমকে। একটা ট্রেনের মতো দেখতে টাইম মেশিনে চেপে বাল্য আর কৈশোরের দুনিয়াটায় পা পড়েছে হঠাৎ। সেই মেলায় সকালে ঢুকলে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল গড়িয়ে যায়।
সে এক সময় ছিল। তখন আড়াই ফুট লম্বা গ্র্যান্ড ফাদার ক্লকটি কাকভোরে ছ’বার ‘গং’ শব্দ তুলতো। ঘুম ভাঙত গোটা গ্রামের। সেই ঘড়িটি আছে। গ্যাসের বাতি জ্বলত কলকাতার রাস্তায়। তার হালকা আলোয় আলোকিত ধর্মতলা। সেরকম একটি বাতিও আছে। পাথরের নটরাজ। কে জানে সেটির বয়স কত, সেটিও আছে। আর আছে খবরের কাগজ। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পরের দিনের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ খবরের কাগজ নিয়ে হাজির নুর হুসেন মোল্লা। আছে আরও অনেক কিছু। সবই পুরনো। এককথায় বলতে গেলে কী নেই এই মেলায়। দেশি-বিদেশি কোম্পানির তৈরি করা অন্যের ব্যবহৃত জুতো আছে। সেগুলির মারাত্মক চাহিদা। রয়েছে সচল-অচল ঘড়ি। সেগুলিরও চাহিদা রয়েছে। ব্রিটিশ আমলের ঝর্ণা কলম আছে। পঞ্চাশ বছরের হারমোনিয়াম আছে। ফের বলতে হয়, কী নেই এই মেলায়! 
শোনা যায়, কোনও এককালে দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের উপর দিয়ে বয়ে যেত গঙ্গা। এখনও সেখানে ছোট ছোট ঘাট। জনশ্রুতি আরও আছে, এককালে চৈতন্যদেব এই নদীপথে ওড়িশা গিয়েছিলেন। সেবার এখানেই পৌষ সংক্রান্তির রাত কাটিয়েছিলেন তিনি। মেলা শুরু তখন থেকেই। আবার কেউ বলেন, এককালে গঙ্গাসাগর যাত্রীরা কোনও কারণে এখানে আটকে পড়েছিলেন। তারা সেই গঙ্গাতেই মকর সংক্রান্তির পূণ্যস্নান সারেন। তখন থেকে শুরু হয় মেলা। এখনও দক্ষিণ বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানের ওই ঘাটে পূণ্যস্নান সারেন অনেকে। সবাই বলেন, এই মেলা ফুলেফেঁপে উঠেছে গত ২০০ বছর ধরে। ক্রমে বাড়ছে জনপ্রিয়তা। এই মেলা পায়ে হেঁটে একদিনে ঘোরা অসম্ভব। আড়ে বহরে বিশাল মেলাটি বসে ১০০ একর জায়গা জুড়ে। ১৫ দিন মেলা চালানোর অনুমতি দেয় প্রশাসন। তবে মেলা চলে প্রায় একমাস ধরে। প্রায় তিনহাজার দোকান এবার বসেছে।  এই মেলায় গেরস্থালির জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর প্রায় সবকিছু মেলে। চাহিদা রয়েছে পুরনো জুতো, সাইকেল, লম্বা টর্চ, পোশাক, খাট-চৌকি-পালঙ্কের। পাওয়া যায় পুরনো বাইক। এখানে যাঁরা স্টল দেন তাঁরা সারাবছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে পুরনো মালপত্র সংগ্রহ করেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ জিনিস কিনতে যান রাজ্যের বাইরেও।
মেলা কমিটির সুকুর হালদার, ধ্রুব বৈরাগী, সুশান্ত হালদার, মণিরুল ফকিররা বললেন, পুলিস, গ্রাম পঞ্চায়েত, ফায়ার ব্রিগেড খুবই সাহায্য করছে। অকেজো হলেও ঘর সাজানোর জন্য মেলা থেকে অনেকে কিনছেন পুরোনো রেডিও, টাইপ মেশিন। বিক্রি ভালোই হচ্ছে। করোনা মিটেছে বলে এবছর মেলায় ভিড় আরও বেশি।  মেলায় বিকোচ্ছে পুরনো ক্যামেরা, ঘড়ি থেকে শুরু করে সংবাদপত্রও। -নিজস্ব চিত্র 

26th     January,   2023
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ