বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

ফের একাধিক বাড়ি ভাঙার সম্ভাবনা, হতাশ বাসিন্দারা
‘এটাই আমাদের ভবিতব্য’, অন্ধকারে
হাতড়াচ্ছেন বউবাজারের ভিটেহারারা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘দেখুন, এটা একটা ড্রিম প্রজেক্ট। বাড়ি ছাড়তে বললে সরতে হবে। কিছু করার নেই। এটাই আমাদের নিয়তি’, বলছিলেন ৯ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা আনন্দ সেন। সম্প্রতি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বউবাজারের মেট্রো বিপর্যয়ের পর বাড়িগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষার করেছে। কলকাতা পুরসভায় একটি প্রাথমিক রিপোর্টও জমা পড়েছে। সেখানে ৯ নম্বর বাড়িতে একাধিক ক্ষয়ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। তবে, সেটির হাল খুব একটা খারাপ নয় বলেই উল্লেখ করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। ইতিমধ্যেই সেখানে ছাদ মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু কতদিন মাথার ছাদ টিকে থাকবে, সেই আশঙ্কায় দিন কাটছে শুভাশিস সেন, মিন্টু সেনদের। 
রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেট্রোর কাজের জন্যই এই বিপত্তি। ১৮টি বাড়ি চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলির দেওয়ালে ফাটল, মেঝে বসে যাওয়া, দেওয়াল হেলে পড়া সহ নানা ধরনের বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রায় ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত বসে গিয়েছে মাটি। যার মধ্যে ন’টি বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি বেশি। তার মধ্যে আবার সাতটি বাড়ি ‘সিরিয়াস’ বা বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও, সেই বাড়িগুলির মধ্যে একাধিক বাড়ি ২০১৯ সালের বিপর্যয়ের পরেই বেগতিক বুঝে আংশিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কিছু বাড়ি আস্ত রয়েছে বটে, কিন্তু সেখানে কেউ থাকেন না। সেই বাড়িগুলি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হতে পারে। যদিও চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা করতে আরও সপ্তাহখানেক সময় নেবে যাদবপুর। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ জানাচ্ছে, সমীক্ষার কাজে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররাও ছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, শেষ পর্যন্ত কতগুলি বাড়ি ভাঙতে হবে, বা আর কোনও বাড়ি ভাঙতে হবে কি না?
এদিকে, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন ‘চিহ্নিত’ বাড়িগুলির বাসিন্দারা। রিপোর্টে ১০বি, দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বলা হয়েছে। সেটা বর্তমানে জনমানবহীন। আড়াই বছর আগে মেট্রো-বিপর্যয়ের পর এই বাড়ির বাসিন্দা বিকাশ সাউ থাকেন পাশের পাড়ায়। মেট্রো কর্তৃপক্ষই বাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিকাশবাবুর কথায়, ‘শুনেছি, যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়াররা রিপোর্ট দিয়েছেন। বাড়ি ভাঙা পড়তে পারে। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। এটাই আমাদের ভবিতব্য। কবে বাড়ি ফিরে পাব বা আদৌ ওখানে ফিরতে পারব কি না, জানি না। মেট্রো কিছুই খোলসা করছে না। ওরা স্পষ্ট করে কিছু বলুক।’
১৯/১/এ, দুর্গা পিতুরি লেন। এই পেল্লাই বাড়ির দেওয়ালে পুরনো ক্ষতে ফের চিড় ধরেছে। বাড়ির বাসিন্দারা ঘরছাড়া। ঠিক উল্টো দিকের বাড়িতেই ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মধ্যবয়স্কা স্বপ্না মল্লিক। প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এই বাড়ি কি ভাঙবে? শুনেছি রিপোর্ট ভালো না।’ প্রতিবেদকের মৌনভাব দেখে স্বপ্নাদেবীর আশঙ্কা, ‘আমাদের বাড়ির কিছু হবে না তো? ছোট গলিতে মুখোমুখি দুই বাড়ি। ওই বাড়ি ভেঙে পড়লে তো আমার বাড়িতেই আঘাত আসতে পারে।’ 
ভবিতব্য, নিয়তি, ভাগ্যের পরিহাস— এই শব্দগুলিই ঘোরাফেরা করছে বউবাজারের অকুলস্থলের বাসিন্দাদের মুখে মুখে। তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? উত্তর অজানা। ২ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেন, ইতিমধ্যেই সেই বাড়ির সামনের দিকের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাকি বাড়িও ভেঙে ফেলা হবে। ভিটেছাড়া বাসিন্দা সঞ্জয় বসাক বলেন, ‘তিন বছর বাড়িছাড়া। বাড়ি কবে পাব, আদৌ এখানে মিলবে কি না, জানি না। মেট্রো কর্তৃপক্ষ কিছু জানাচ্ছে না।’ -নিজস্ব চিত্র

25th     May,   2022
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ