বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

দু’টি ডোজ নেওয়া ‘দুঃসাহসিক’
জনতাই বাড়াচ্ছে আক্রান্তের হার

অর্ক দে, কলকাতা: ‘আমার তো দু’টি টিকাই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। করোনাকে আর ভয় পাই না। ’ পথে-ঘাটে এমন কথা হামেশাই শোনা যায়। বাস্তবে তাঁদের এই মনোভাবই কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দুঃসাহসিকতা দেখাতে গিয়ে তাঁরাই মূলত ফের বরণ করছেন করোনাকে। শুধু মুখের কথা নয়, কলকাতা পুরসভার তথ্যই এ কথা বলছে। দেখা যাচ্ছে, যাঁরা টিকা নেননি বা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের তুলনায় দু’টি ডোজ প্রাপকরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে ভয়ভীতির জায়গা কম। আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হচ্ছে না। মৃত্যু হারও কম। একাংশের উদাসীনতা ও বেপরোয়া মানসিকতার কারণেই করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী, দাবি পুর প্রশাসনের।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর একধাক্কায় অনেকটাই নেমে এসেছিল দৈনিক সংক্রমণ। কিন্তু আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে এই সংখ্যা ফের ১০০ গণ্ডি পার করে। পুজোর বাজারের উপচে পড়া ভিড় তাতে ইন্ধন জোগায়। পুরসভা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পুজোর আগে দৈনিক সংক্রমণের হার একশো থেকে দেড়শো’র মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এরমধ্যেই ঢল নামে মণ্ডপে। ফলে দিনের হিসেব টপকে যায় দু’শোর ঘর। পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগের দাবি, পুজোর দিনগুলিতে যেভাবে রাস্তায় লোক নেমেছিল, তাতে সংক্রমণ কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে, তা বুঝতে আরও দিন দশেক সময় লাগবে। তবে এটা ঠিক যে, নতুন আক্রান্তদের সিংহভাগই টিকার দু’টি ডোজ পেয়ে গিয়েছেন, দাবি করছে পুরসভা। আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এই আক্রান্তদের রোজ ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। দেখা যাচ্ছে, তাঁদের বড় অংশই উপসর্গহীন। যাঁরা টিকা নেননি, বা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের তুলনায় দ্বিতীয় ডোজ প্রাপকরা প্রায় ১০ গুণ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। 
পুর স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, কেউ কেউ অতিরিক্ত দুঃসাহসিক হয়ে ওঠায় তার মাশুল গুনতে হচ্ছে এই শহরকে। মাস্ক পরছেন না বলে আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন, এই তত্ত্ব পুরোপুরি সত্য নাও হতে পারে। এই যুক্তি অনুমানভিত্তিক। এমনও হতে পারে, দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার পর কিছুটা হলেও হার্ড ইমিউনিটি ধাক্কা খেয়েছে। তাই, আলোচনায় উঠে এসেছে ‘বুস্টার ডোজ’-এর প্রসঙ্গ। তবে, এই চর্চাকে মান্যতা দেয়নি সরকার। 
পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুব্রত রায়চৌধুরী বলেন, ‘যাঁরা একটি ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁরা কিছুটা হলেও সতর্ক থাকছেন। তাঁদের মনে ভয় রয়েছে। কিন্তু দু’টি ডোজ নেওয়া লোকজন দুঃসাহসিক হয়ে উঠেছেন। ট্রেনে-বাসে, বাজারে, মণ্ডপে-মণ্ডপে ভিড় জমিয়েছেন। কখনও কেউ বলেনি, দু’টি ডোজ নিলে করোনা হবে না। অ্যান্টিবডি অবশ্যই তৈরি হবে। কিন্তু, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কেউ আক্রান্ত হতেই পারেন। তবে, গুরুতর শারীরিক অবনতি ঘটবে না। মৃত্যু হারও খুব কমবে। পাশাপাশি, যাঁরা এখনও ভ্যাকসিন নেননি, গত দেড় বছরে হয়তো তাঁদের শরীরে আপনাআপনি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে, আশপাশের টিকা প্রাপকদের থেকে তাঁরা ইমিউনিটি পাচ্ছেন। ফলে কম আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রাথমিক অনুমান ছিল, শহরে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া গেলে, একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে, সেটাই হয়তো হয়েছে।’ এপ্রসঙ্গে বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘আমার কাছে এই সংক্রান্ত নানা তথ্য আছে। বিজ্ঞানসম্মত পর্যবেক্ষণ রয়েছে। মাসের পর মাস বহু রোগী আমি দেখেছি। বুঝেছি, শরীরের ভিতরে ভ্যাকসিন গিয়ে কী প্রভাব ফেলছে! কিন্তু সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে গবেষণার প্রমাণ না মেলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে শুধু পর্যবেক্ষণ বা বক্তব্য দিলে মানুষ বিভ্রান্ত হবেন। ভ্যাকসিন প্রচুর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেও প্রচুর মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কিংবা টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে শরীরে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।’

21st     October,   2021
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ