নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ১১ অক্টোবর ষষ্ঠীর দিন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এবং ১৫ অক্টোবর দশমীর দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডাঃ দেবাশিস ভট্টাচার্যের ঘরে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকের পরও অশান্তি থামবার লক্ষণ নেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত হাসপাতাল ও কলেজ চত্বরে পরিক্রমা করে বিক্ষোভ মিছিল করেন ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সেই মিছিল বেলগাছিয়া সেতুতে গিয়ে অবস্থান করে। পোস্টার, ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিক্ষুদ্ধরা।
এদিকে প্রথমে ছাত্রছাত্রী, তারপর ইন্টার্ন এবং এখন হাউসস্টাফ ও পিজিটিরাও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে বলে বারবার দাবি জানালেও পুজোর পর ফের রোগীদের ঢল নামায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেকেই। পার্শ্ববর্তী টালা এলাকা থেকে সুদূর সুন্দরবন—আর জি কর গোটা উত্তর ২৪ পরগনার রেফারেল হাসপাতাল হওয়ায় জুনিয়র ডাক্তার কর্মবিরতিতে নাকাল হচ্ছেন বহু গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ১৫ অক্টোবরের বৈঠকে সরকার ‘মেন্টর গ্রুপ’ গঠন করলেও, নাছোড় ধর্মঘটীদের এখনও বাগে আনতে পারেননি ‘মেন্টর’ তথা সিনিয়র চিকিৎসকরাও। কারণ ১৫ই-এর বৈঠকশেষে ছ’টি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ কমেনি। তাঁদের এখন দাবি প্রধানত দুটি। এক, অধ্যক্ষ ডাঃ সন্দীপ ঘোষের অপসারণ। দুই, ১৪ অক্টোবর হাসপাতালের বাইরে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ।
এবার দেখা যাক, যে ছ’টি সমাধানসূত্রে দিয়েছিল সরকার, সেগুলি ঠিক কী কী? এক, মেন্টর গ্রুপ বিক্ষুদ্ধ ছাত্রছাত্রী এবং জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভগুলি সরাসরি স্বাস্থ্যভবনের শীর্ষমহলে পৌঁছে দেবে। কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যের দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করবে। দুই, ছাত্রীদের হস্টেল সংক্রান্ত বিষয়টি দেখছেন খোদ স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা)। তিনি নিজেই এর জন্য হাসপাতালে যাবেন। তিন, যুক্তিগ্রাহ্য স্টুডেন্টস কাউন্সিল যাতে হয়, সেটা দেখা হবে। চার, হাউসস্টাফ নির্বাচনে স্বচ্ছতা থাকবে। এক্ষেত্রে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাঁচ, আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের প্রতি কোনও প্রতিহিংসামূলক আচরণ দেখানো হবে না এবং ছয়, আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের নামে অভিভাবকদের কাছে কর্তৃপক্ষের নালিশ প্রত্যাহার করা হবে।
আর জি কর-এর রোগী কল্যাণ সমিতি’র চেয়ারম্যান ডাঃ সুদীপ্ত রায় এদিন বলেন, বাংলা সহ দেশে বর্তমানে মহামারী আইন চালু রয়েছে। সেই আইন ভাঙলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারই কথা। সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে আমরা সেকথা ভাবছি না এখনই। আমাদের একটাই অনুরোধ, রোগীদের কথা ভেবে যেন ওঁরা দ্রুত কাজে যোগ দেন। কথাবার্তা সবসময় চলতেই থাকবে।