কুন্তল পাল বনগাঁ: কথিত আছে চাঁদ সওদাগরের ছেলে সুমন্তকে এক রাজা মাঝসমুদ্রে ফেলে দেন। তখন দেবী দুর্গা তাঁকে উদ্ধার করেন। একহাতে সুমন্ত ও অন্য হাতে পদ্ম নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন দেবী, স্বপ্নে পাওয়া সেই রূপে আজও মা দুর্গার আরাধনা করেন সওদাগর বংশধররা। এখানে দেবীকে অসুর বধ করতে দেখা যায় না। থাকে না সিংহও। এখানে দেবী দুর্গা জীবনদাতা হিসেবেই পূজিত হন। এবার ১৮০ বছরে পা দিল গোপালনগরের দাঁ বাড়ির এই পুজো।
একদা ব্যবসার কাজে বর্ধমানের বৈঁচিতে বসবাস শুরু করেন চাঁদ সওদাগরের বংশধররা। সেখানে কলেরা মহামারীর চেহারা নিলে এক বংশধর গিরিশচন্দ্র দাঁ উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরে চলে আসেন। তিনিই বনগাঁর গোপালনগরে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। দাঁ পরিবারে আজও কমলেকামিনী রূপে পূজিত হন দেবী দুর্গা। দশটির পরিবর্তে মায়ের থাকে দু’টি হাত। এক হাতে এক শিশু ও অন্য হাতে পদ্ম। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই রূপেই মাকে স্বপ্নে পাওয়া গিয়েছিল।
দাঁ পরিবারের পুজো আজও এলাকার বাসিন্দাদের কাছে অন্য মাত্রা বহন করে। অষ্টমীতে দু’হাজারেরও বেশি মানুষ এখানে অঞ্জলি দেন। অনেকে
মানতও করেন। মনোবাসনা পূর্ণ হলে মায়ের সামনে ধুনো জ্বালিয়ে বুক চিরে মায়ের উদ্দেশে রক্তদান করেন। রীতি মেনে আজও কলা, কুমড়ো ও আখ বলি হয় অষ্টমীতে। চাঁদ সওদাগরের বংশধর সপ্তম পুরুষ স্বপনকুমার দাঁ বলেন, এই পুজো এখন আর শুধুমাত্র দাঁ বাড়ির পুজোতে সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র গোপালনগরবাসীর মধ্যে। যাঁরাই
পুজো দেখতে আসেন, তাঁদের সবাইকেই ভোগ বিতরণ করা হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বংশ পরম্পরায় নিজেদের দু’টি পুকুরের আয় থেকেই মায়ের পুজোর খরচ করা হয়। আজও প্রথা মেনে নিরঞ্জনের আগে বরণ করার সুযোগ দেওয়া হয় সবাইকে। এরপর আদিবাসীদের কাঁধে করে দেবীকে স্থানীয় বাওরে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরঞ্জনের আগে এলাকায় প্রায় তিন কিমি ঘোরানো হয় মাকে। রাস্তায় বরণের জন্য দশ জায়গায় নামানো হয় দেবীকে। এরপরই হয় বিসর্জন।