বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
কলকাতা
 

দু’হাত ছাড়াই ফিজিক্স
অনার্সে স্বপ্নপূরণ দীপকের

অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: ‘হাত নেই তো কী হয়েছে? ফিজিক্স অনার্সই পড়ব আমি। কিছুতেই আর্টস নিয়ে পড়ব না...।’ এক সদ্য তরুণের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছিল বোঝাতে আসা প্রতিবেশীদের। হাইজেনবার্গকে রোল মডেল করা বেহালার দীপককে তখন ফিরিয় দিচ্ছিল একের পর এক কলেজ। একটাই যুক্তিতে—হাত না থাকলে ল্যাবরেটরিতে প্র্যাকটিক্যাল করবে কী করে! তখন অনেকে বোঝাতে এসেছিলেন, আর্টস পড়েও জীবনে উন্নতি সম্ভব। উত্তরে শুরুর ওই কথাগুলি বলেছিলেন দীপক পান্ডে। চতুর্থ সেমেস্টারে ৭.৯ গ্রেড পেয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, কবজির জোর নয়, কলজের জোরটাই আসল।
ছোট থেকেই বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার ঝোঁক দীপকের। ২০০৯ সালে ঝাড়খণ্ডে দেশের বাড়িতে এমনই একটা কিছু করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শক লেগে তাঁর দু’হাত পুরো অকেজো হয়ে যায়। তিনি তখন চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। গ্যাংগ্রিন থেকে বাঁচাতে কনুই থেকে বাদ দিতে হয় দু’হাত। সেই থেকেই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কপাল চাপড়ানো শুরু করেন অভিভাবকরা। কিন্তু দীপকের স্বপ্ন ছিল অন্য। স্কুল থেকেই পদার্থবিদ্যায় মনপ্রাণ সঁপেছিলেন তিনি। রোল মডেল করেছিলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনক, নোবেলজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী ওয়ার্নার কার্ল হাইসেনবার্গকে। দীপক জানান, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন, শারীরিক প্রতিকূলতাজয়ী স্টিফেন হকিং কেন আমার রোল মডেল নন? সত্যিই এর পিছনে বিশেষ কোনও কারণ নেই। হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিকূলতা জয় করেও সর্বোচ্চ স্তরের গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হাইজেনবার্গের জার্মান জেদই আমাকে বেশি তাতিয়েছে।’
প্রতিকূলতা দীপকের জন্যও কম ছিল না। বাড়ির কাছাকাছি কিছু কলেজে আবেদন করেছিলেন। নম্বর ভালো থাকলেও স্রেফ 
হাত না থাকার যুক্তিতে কলেজগুলি ফিরিয়ে দিচ্ছিল। শেষপর্যন্ত নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী তাঁর উপর আস্থা রাখেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন জানান তিনি। উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ও পাশে দাঁড়িয়ে বিশেষ অনুমতি দেন। ঠিক হয়, কলেজে তাঁকে গবেষণায় সাহায্য করবেন একজন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। আর প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে একজন জুনিয়র হাজির থাকবেন তাঁর সহায়তায়। এমনকী, বেশ কিছু গবেষণা পা এবং মুখের সাহায্যে করতে সমর্থ দীপক। প্রথম দু’টি সেমেস্টার তিনি এভাবেই পাশ করেছেন। তারপরে করোনার জন্য সব অনলাইনে। দীপক নিজেই স্বীকার করেন, অধ্যক্ষের অবদান কখনও ভুলতে পারবেন না। তবে সেই সঙ্গে এটাও জানেন কীভাবে সেই ঋণ আংশিক শোধ হবে। তাঁর পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্নপূরণই যে অধ্যক্ষের কাছে পুরস্কার।
মেধাবী দীপককে বিশেষ স্নেহ করেন অধ্যক্ষ জয়দীপবাবুও। তাঁর কথায়, ‘ পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ওঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। প্রথমবারেই ও আমাকে প্রভাবিত করেছিল। কলেজে অনেকেরই ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা থাকে। তবে, দীপক বরাবরই ব্যতিক্রমী। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করার ব্যাপারেও খুব উৎসাহী থাকত।’ দীপকের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়েও আশাবাদী তিনি।  দীপক পান্ডে।

15th     September,   2021
 
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ