হ য ব র ল

জাদুঘরে একদিন

আগামী বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। দেশের প্রাচীনতম মিউজিয়ামটি রয়েছে শহর কলকাতাতেই। জাদুঘর দিবসের আগে ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’ ঘুরে এসে লিখলেন চকিতা চট্টোপাধ্যায়।

মিউজিয়ামকে কেন ‘জাদুঘর’ বলা হয় বল তো? কারণ, এইখানে প্রবেশ করা মাত্রই যেন এক অদৃশ্য জাদুবলে যুগের পর যুগ পিছিয়ে যাওয়া যায়! ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর মে মাসের ১৮ তারিখে পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস’। জাদুঘর দর্শনের মধ্যে দিয়েই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। যাতে মানুষ তাদের অতীত সম্পর্কে জানতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশ ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম জাদুঘরটি   কিন্তু আমাদের কলকাতা শহরেই অবস্থিত। যার পোশাকি নাম— ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’। ১৮১৪ সালে দ্য এশিয়াটিক সোসাইটির ভবন থেকে এর পথ চলা শুরু হয়েছিল, পরে ২৭ নম্বর জওহরলাল নেহরু রোডে স্থানান্তরিত হয়। সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মিউজিয়াম। প্রবেশমূল্য বড়দের মাথাপিছু ৫০ টাকা এবং ছোটদের ২০ টাকা। প্রাচীনত্বের বিচারে বিশ্বে এই জাদুঘরের স্থান নবম। প্রখ্যাত স্থপতি ওয়াল্টার গ্র্যানভিলের নকশা করা ইতালিয়ান স্থাপত্যে তৈরি তিনতলা এই মিউজিয়ামটির মধ্যে  আছে ছয় ভাগে বিভক্ত ষাটটি গ্যালারি। যার মধ্যে আছে অ্যাথ্রোপোলজি, আর্ট, আর্কিওলজি, জুলজি, বোটানি, জিওলজি ইত্যাদি। এতদিন ইতিহাস আর ভূগোল বইতে যা যা পড়েছ, কিংবা ছবি দেখেছ, সে সবেরই দেখা পাবে এর প্রত্যেকটি গ্যালারিতে প্রবেশ করলেই! 
প্রথমেই চোখ পড়বে সারনাথের অশোকস্তম্ভের একটি রেপ্লিকার উপর। যেখানে জ্বলজ্বল করছে ভারতের জাতীয় প্রতীক চার সিংহের মাথা। একতলার ডানদিকে রয়েছে ‘ভারহুত গ্যালারি’। মধ্যপ্রদেশের সাকনা জেলা থেকে প্রাপ্ত প্রাচীন ভারতের স্তূপ, তোরণ আর বিভিন্ন রকম বুদ্ধমূর্তি রাখা  আছে এখানে। প্রাচীন ভারতের ভাস্কর্য‍ শিল্প যে কতদূর উন্নতি করেছিল, তা এগুলো দেখলেই বোঝা যায়। 
জাহাঙ্গিরের স্বর্ণমুদ্রার কথা তো ফেলুদার গল্পে পড়েছ? এবার তা নিজের চোখে দেখতে পাবে এখানকার ‘কয়েন গ্যালারি’তে! এখানে রাখা আছে ভারত ও ভারতের বাইরের বিভিন্ন সভ্যতার বিভিন্ন রাজারানির প্রবর্তন করা সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ ও তামার মুদ্রা। দু’হাজার বছরের পুরনো গ্রিক, সাসানিয়ার কয়েন থেকে শুরু করে হুন, কুষাণ, গুপ্ত, মুঘল, ব্রিটিশ, ডাচ বিভিন্ন যুগের মুদ্রা যেমন রাখা আছে, সেই সঙ্গে সেযুগে কেমন করে মুদ্রা তৈরি হতো ছবির মাধ্যমে রয়েছে তারও বিবরণ। 
গান্ধার রাজ্যের কথা মহাভারতে পড়েছ নিশ্চয়ই? গান্ধার কিন্তু প্রাচীন ভারতেরই অঙ্গ ছিল। যা আজ উত্তর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকা। এই সমৃদ্ধ রাজ্যে ছিল তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। যা বৌদ্ধ ধর্মচর্চা কেন্দ্র ও শিক্ষা লাভের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখান থেকে আবিষ্কৃত বৌদ্ধমূর্তি ও হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি রাখা আছে এই গ্যালারিতে। আছে বৌদ্ধস্তূপ থেকে পাওয়া বুদ্ধদেবের পবিত্র দেহাবশেষ বা রেলিক্স।
কীভাবে এপ থেকে আজকের মানুষ এল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেমন করে ‘ডিএনএ’র পরিবর্তন হল— তা বোঝানো হয়েছে প্রমাণ সাইজের মডেল, থ্রিডি মডেল আর ছবির সাহায্যে। শুধু দেহই নয়, সেইসঙ্গে মানুষের হাত, পা ও মুখের গঠনেরও বিবর্তন দেখানো হয়েছে। 
মাঝখানে একটা ছোট্ট সবুজ মাঠকে ঘিরে রয়েছে মিউজিয়াম বিল্ডিংটি। চওড়া থামওয়ালা বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখনও চোখে পড়বে বিশাল মাপের বুদ্ধদেবের পদচিহ্ন, গাছের ফসিল বা সেযুগের জল যাওয়ার মকরমুখী পাথরের ব্যারেল।
একতলার শেষ গ্যালারিটি হল ‘রক্স অ্যান্ড মিনারেল’-এর। এখানে সংরক্ষিত আছে ভারতের বিভিন্ন জায়গার পাথর, বালি ও খনিজ। সেই সঙ্গে খননকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
দোতলায় উঠেই প্রথমে চোখ চলে যাবে বর্ধমান মহারাজের উপহার দেওয়া কুইন ভিক্টোরিয়ার একটি সুন্দর মার্বেলের মূর্তির দিকে! এরপরই রয়েছে ‘অ্যানিমাল কিংডম’। যার ‘ ম্যামাল গ্যালারি’তে আছে সমস্ত প্রজাতির প্রাণীদের লাইফ সাইজ মডেল, স্টাফ করা দেহ ও কঙ্কাল। কত রকমের হরিণের মাথায় যে কত রকমের শিং হতে পারে, তা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়! বিশাল ম্যামথ আর ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত প্রাণীদের কঙ্কালও রাখা আছে এখানে। আছে ব্লু হোয়েলের চোয়ালও! ভাবতে অবাক লাগে যে একসময় এরা কিন্তু সবাই জীবিত ছিল! 
এবার অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের জগৎ। বিভিন্ন প্রজাতির শামুক থেকে জেলিফিশ— সবেরই জীবাশ্ম বা ফসিল আছে এখানে। রাসায়নিকে ডুবিয়ে রাখা আছে তাদের প্রাণহীন শরীর। ‘পেন্টিং গ্যালারি’তে আছে মুঘল, রাজপুত থেকে শুরু করে বাংলার পটচিত্র, যামিনী রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের আঁকা তেল রং, জলরঙের ছবি। যার কোনওটা কাগজে কোনওটা আবার কাপড়ের উপর আঁকা। দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে ছবিগুলো দেখার ব্যবস্থাও আছে। ছবিগুলো যেন সেই সময়ের সমাজের কথা বলে! 
‘ফসিল গ্যালারি’ জুড়ে আবার শুধুই প্রাগৈতিহাসিক যুগের জীবাশ্ম। এখানে আছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের অ্যাটলাস প্রজাতির মডেল। যাদের দেখা মিলত দু’লক্ষ বছর আগে। আছে গুজরাতের খেড়া জেলা থেকে আবিষ্কৃত সাত কোটি বছরের পুরনো ডাইনোসরের ডিম! 
‘জুলজিক্যাল ইকোসিসটেম-এর গ্যালারিতে দেখা মেলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত যেমন মরুভূমি, জলাজমি, হিমালয়, ম্যানগ্রোভ জঙ্গল ও সেখানকার প্রাণীদের মডেল। 
জাদুঘরের মূল আকর্ষণ ‘ ইজিপশিয়ান গ্যালারি’। শীততাপনিয়ন্ত্রিত এই ঘরে ঢুকলেই গা ছমছম করে উঠবে! মনে হবে যেন মিশরেই পৌঁছে গেছ! চারদিকে রয়েছে ফারাওদের মূর্তি, রানি নেফারতিতির মূর্তি, ব্যবহার্য প্রাচীন মিশরীয় গয়না ও বাসনপত্র। আর আছে কফিনের ভিতর শায়িত চার হাজার বছরের পুরনো একটি মমি। যেটি ১৮৮২ সালে মিশর থেকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়! বর্তমানে মমির মুখটা কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। মুখোশটি বুকের উপর রাখা আছে। 
‘বোটানিক্যাল গ্যালারি’তে আছে প্রাচীনকালে কীভাবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করা হতো এবং কোন কোন গাছগাছড়া ব্যবহার করা হতো সে সমস্ত কিছুর বিবরণ। এছাড়াও এখানে আছে ভারতে প্রাপ্ত ফল, সব্জি, মশলা ও বীজের নিদর্শন। বিভিন্ন মডেলের সাহায্যে নীলচাষ, পাটচাষ, ধানচাষের বিবরণও দেওয়া আছে।
‘ফিশ গ্যালারি’তে যেমন দেখতে পাবে রাসায়নিকে ডুবিয়ে রাখা নানান ধরনের মাছ, তেমনই ‘বার্ডস গ্যালারি’তে দেখতে পাবে বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাখিদের মডেল। যেমন— পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাখি হল সাদাবুক মাছরাঙা। ‘রেপ্টাইলস গ্যালারি’তে পাবে স্টাফ করা কুমিরের দেহ আর ফর্মালিনে সংরক্ষণ করে রাখা বিভিন্ন প্রজাতির সাপ! 
প্রাচীনকালে রাজারানিরা কেমন পোশাক পরতেন, সেসব না দেখলে কি চলে? ‘ টেক্সটাইল গ্যালারি’তে দেখা মিলবে সেসবেরও! দেখতে দেখতে মন চলে যাবে কোন সে অজানা যুগে। 
‘চারুকলা গ্যালারি’তে নানান শৌখিন জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে হাতির দাঁতের দাবাবোর্ড ও ঘুঁটি। ঠিক যেমনটা ‘গুপীগাইন বাঘাবাইন’ ছবিতে মন্ত্রীমশাইকে খেলতে দেখা গিয়েছিল! মহাভারতে পাশাখেলার উল্লেখ আছে। নিজের চোখে দেখবে তেমনই একটি পাশাখেলার ছক। এছাড়াও প্রাচীনকালের ঘর সাজানোর আরও অনেক জিনিস দেখতে পাবে এখানে। একতলায় মিউজিয়াম শপে পাওয়া যায় বিভিন্ন ভাস্কর্য ও ছবির রেপ্লিকা এবং বই। মেমেন্টো হিসেবে ফেরার সময় সংগ্রহ করে নেওয়াই যায়। এতক্ষণ ঘোরার পর খিদে পেয়ে গেলে আছে কাফেটেরিয়া। কারণ জাদুঘরে খাবার নিয়ে ঢোকা বারণ।
সরকারি স্কুলে ইতিমধ্যে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। তাই এবারের ‘জাদুঘর দিবস’টি দেশের এই প্রাচীনতম জাদুঘরে কাটাতে চাও কি?
 
16Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা