বাঙালির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া ভারতের এতকালের ওই পার্লামেন্ট ভবন। যাকে এখন নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘সংবিধান সদন’। একেবারে শুরুর দিন থেকে। ১৯২৭ সালের ১৮ জানুয়ারি যখন এই ভবনের উদ্বোধন হল তখন নাম ছিল ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। অর্থাৎ ব্রিটিশ ভারতের সংসদীয় সদন। সেই সময় ব্রিটিশ শাসনের ভারত সরকারের সর্বোচ্চ যে প্রশাসনিক কাঠামো সেই ভাইসরয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন স্যর ভূপেন্দ্রনাথ মিত্র। একদিকে যেখানে একঝাঁক সর্বোচ্চ মেধার বাঙালি নিজেদের উজ্জ্বল কেরিয়ারকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞে, ঠিক তেমনই আবার একটি অংশের উচ্চশিক্ষিত বাঙালিরা ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর স্পর্শ করছিলেন। প্রথম তালিকায় যদি থাকেন অরবিন্দ ঘোষ, চিত্তরঞ্জন দাশ অথবা সুভাষচন্দ্র বসুরা, তাহলে দ্বিতীয় তালিকায় ছিলেন সুকুমার সেন, ভূপেন্দ্রনাথ মিত্র অথবা অতুলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়রা।
কতটা শক্তিমান ছিলেন বাঙালি অফিসাররা? একটি উদাহরণ হল, ১৯৩১ সালে ভূপেন্দ্রনাথ মিত্র হয়েছিলেন ব্রিটেনে নিযুক্ত তৃতীয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। তাঁর ঠিক আগে কে ছিলেন? অতুলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। অর্থাৎ একের পর এক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন বাঙালিই। এতটাই ছিল বাঙালি অফিসারদের দাপট। স্যর ভূপেন্দ্রনাথ মিত্র ভাইসরয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে ১৯২৭ সালের ১৮ জানুয়ারি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন নতুন আইনসভা ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের উদ্বোধনে। তিনিই গোটা উদ্বোধন পর্ব ও কর্মসূচির তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ভাইসরয় লর্ড আরউইনের কাছে তিনি ছিলেন দক্ষিণ হস্ত। তিনিই আরউইনকে বলেন, আপনিই উদ্বোধন করুন। সেই শুরু এই ভবনের পথ চলা। এভাবে চলল ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত।
১৯৪৫ সাল নাগাদ মোটামুটি বোঝাই যাচ্ছিল যে, আর ভারতকে উপনিবেশ করে রাখা যাবে না। এবার স্বাধীনতা দিতেই হবে। যিনি এই প্রস্তাবে সবথেকে বেশি বাধা দিতেন, সেই উইনস্টন চার্চিল নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। ক্ষমতায় ক্লিমেন্ট এটলি। যিনি স্বাধীনতা দেওয়ারই পক্ষে। তবে একটা ফর্মুলা চাই তো! ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব দিয়েছিল আগে একটি সংবিধান সভা গঠন করা হোক। ভারতীয় নেতারা বসে স্বাধীন ভারতের জন্য সংবিধান নির্মাণ করবে এখানে। সেইমতোই ১৯৪৬ সালে জুলাই মাসে সংবিধান সভার নির্বাচন হল। দেখা গেল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ২০৮ আসনে। আর মুসলিম লিগের দখলে গিয়েছে ৭৩ আসন। ঠিক হল এবার যত দ্রুত সম্ভব সংবিধান সভায় মিলিত হবেন সকল সদস্য। আর শুরু হয়ে যাবে স্বাধীন দেশের নতুন সংবিধান নির্মাণের কাজ। তবে সংবিধান তো হচ্ছে! দেশের স্বাধীনতার ফর্মুলা কী হবে? এটাই হল সবথেকে বড় প্রশ্ন। কিন্তু একটি অন্তত ইতিবাচক প্রশাসনিক উদ্যোগের সূত্রপাত হোক। তারপর তো দড়ি টানাটানি চলবেই। গণতান্ত্রিক নিয়মে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটেই হবে সিদ্ধান্তের হেরফের। আর এ কথা বুঝে মহম্মদ আলি জিন্না কিছুতেই রাজি নন। তিনি নিশ্চিত যে, ‘হিন্দুত্ববাদী’ কংগ্রেস তাঁর মুসলিম লিগের পক্ষে কোনও সংবিধানই হতে দেবে না। অতএব জিন্না সংবিধান সভায় যোগ দেবেন না জানালেন। বহু চেষ্টা করা হল তাঁকে সভায় যোগ দেওয়ানোর জন্য। লাভ হল না। তিনি নারাজ। উল্টে ২৭ জুলাই বম্বেতে একটি সমাবেশ করে জিন্না ঘোষণা করলেন, ১৬ আগস্ট হবে ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’। সেদিন কী হবে? সেদিন বোঝা যায়নি। আর বম্বে অথবা দিল্লিতে কিছু বোঝা গেল না। বোঝা গেল অনেক দূরের শহর কলকাতায়। ১৬ আগস্ট, ১৯৪৬। কলকাতার ভোর হয়েছিল রক্তস্রোতে। সেই স্রোত আর থামেনি! বাঙালির প্রথম সর্বনাশ হয়েছিল ১৯০৫ সালে। বঙ্গভঙ্গ। ৬ বছর পরই আবার সংযুক্ত হয়ে যায়। অবশ্য আরও বড় সর্বনাশের মাধ্যমে। ভারতের রাজধানী সরিয়ে নেওয়া হল কলকাতা থেকে। আর ১৯৪৬ সালের ওই ১৬ আগস্টে ভয়ঙ্কর দাঙ্গার মাধ্যমে যে নতুন সর্বনাশের বীজ রোপণ করা হল, তারই পরিণতি মহা সর্বনাশের মহীরুহ। দেশভাগ। একবছরের মধ্যে।
সেই সংবিধান সভার কাজ শুরু হয়েছিল এই ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ ভবনেই। আর তারপর থেকে নাম দেওয়া হয়েছিল সংবিধান সভা। কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি। ১৩ ডিসেম্বর চেয়ারম্যানের আসনে ছিলেন ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এখন সংবিধানের প্রস্তাবনা পেশ করবেন। জওহরলাল নেহরু এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন সংবিধানের প্রস্তাবনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্থাৎ কেন ভারত স্বাধীন হলে একটি নিজস্ব সংবিধানের প্রয়োজন। এই ভবনে সংবিধান রচনার কাজটি সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল।
আর শেষ হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ২৫ নভেম্বর। ওইদিন সংবিধান রচনা সমাপ্ত হয়ে সংবিধানকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার মাহেন্দ্রক্ষণে এই সভায় শেষতম বক্তৃতা দিয়েছিলেন সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকর। তিনি দীর্ঘ বক্তৃতায় একজন মানুষের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন। আম্বেদকর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমাকে যে কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা আমার প্রাপ্য নয়। এটা আংশিকভাবে প্রাপ্য সংবিধান সভার সাংবিধানিক পরামর্শদাতা স্যর বি এন রাওয়ের। কৃতিত্বের একটি অংশ অবশ্যই প্রাপ্য খসড়া কমিটির সদস্যদের। তবে এসবের থেকেও অনেক বড় কৃতিত্ব অবশ্যই পাওয়া উচিত মিস্টার এস এন মুখার্জির। যিনি সংবিধানের প্রধান খসড়া রচয়িতা। সবথেকে জটিল প্রস্তাবগুলিকে অত্যন্ত সরলভাবে উপস্থাপনে তাঁর যোগ্যতা অপরিসীম। স্বচ্ছ আইনি ব্যাখ্যায় তাঁর মতো পারঙ্গম অন্য কাউকে পাওয়া অসম্ভব। একইসঙ্গে তাঁর পরিশ্রম করার ক্ষমতাও অবিশ্বাস্য। তাঁকে ছাড়া এই সভাকে অনেক অনেক বেশি সময় অতিবাহিত করতে হতো সংবিধান রচনার কাজে।’
সুতরাং আজ বাঙালিমাত্র জানে যে, ভারতের সংবিধান রচনার সঙ্গে এহেন এক বাঙালি অফিসার অঙ্গাঙ্গিভাবে ততটাই কৃতিত্বের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যে, স্বয়ং আম্বেদকর স্পষ্ট বলছেন, এস এন মুখার্জি ছাড়া সংবিধান রচনার কাজ হতো আরও দুরূহ। এই সেই ভবন, যেখানে ভারতের সংবিধান রচিত হল। আর যার সঙ্গে এক বাঙালির নাম সম্পৃক্ত।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। সংবিধান সভা। সেই ভবন। রাত ১১টা। আর মাত্র একঘণ্টা পর ভারতে নতুন সূর্যোদয় হবে। স্বাধীন হবে ভারত। বন্দেমাতরম সঙ্গীতের প্রথম পঙ্ক্তি গাইলেন সুচেতা কৃপালনী। সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ আবেগপূর্ণ এক ভাষণ দিয়ে বললেন, ‘আসুন আমরা সেই মানুষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করি যে হাজার হাজার মহাপ্রাণ আত্মবলিদান দিয়েছিলেন এই মাহেন্দ্রক্ষণটি আসার লক্ষ্যে। অর্থাৎ স্বাধীনতা।’
সেই বিখ্যাত ভাষণটি দিলেন জওহরলাল নেহরু। ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি। তারপর তিনি একটি প্রস্তাব ও শপথবাক্য পেশ করলেন ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ক্ষণে। যে শপথবাক্য এই সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া বিখ্যাত পার্লামেন্ট ভবনের অন্দরে মন্ত্রের মতো উচ্চারিত ও অনুরণিত হয়েছিল। পণ্ডিত নেহরু এবং বাকিরা সেটি পড়েছেন। প্রস্তাবটি ছিল—
‘এই পবিত্র মুহূর্তে যখন বহু আত্মবলিদান আর যন্ত্রণার বিনিময়ে ভারতবাসী স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তখন আমি ভারতের সংবিধান সভার সদস্য ভারত ও তার নাগরিকদের সেবার লক্ষ্যে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে সমগ্র মানবিকতার সঙ্গে সমর্পণ করব, যতক্ষণ না এই প্রাচীন ভূমি বিশ্বের দরবারে সঠিক স্থান লাভ করছে। এই ভূমিতে নির্মাণ করব আমরা এক সার্বিক সদিচ্ছা, যা বিশ্বশান্তি এবং মানবসভ্যতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবে।’
মধ্যরাতের এই অনুষ্ঠানের পর পরদিন সকাল ১০টায় আবার বসেছিল অধিবেশন। সেখানেই ভারতের ১০০ জন নারীশক্তির তরফে প্রদান করা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল এই ভবনের উপরে। সেই শুরু স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকার উড্ডীন হওয়া। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ভবন হয়ে রইল সংবিধান সভা হিসেবে। আর তারপর থেকে ৭৩ বছর ধরে ভারতের সংসদ ভবন। পার্লামেন্ট হাউস।
এই ঐতিহাসিক ভবনে আধুনিক ভারত নির্মাণের প্রতিটি পর্ব সম্পাদিত হয়েছিল। এখানেই ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, বিকেল ৪টের সময় আপনাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দেব। গোটা সংসদ ছিল উদগ্রীব। কী হয় কী হয় একটি আগ্রহ। ইন্দিরা গান্ধী চারটের সময় ঘোষণা করেছিলেন, পাকিস্তান ভারতের কাছে সারেন্ডার করছে। আগামী কাল হবে সেই আত্মসমর্পণ। আর আমরা নতুন দেশের স্বীকৃতি দিচ্ছি। পাকিস্তানের আর অঙ্গ নয় পূর্ব পাকিস্তান। নতুন দেশের নাম বাংলাদেশ। গোটা পার্লামেন্টে ছড়িয়ে পড়েছিল বিজয়োৎসব। ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে জিন্না গঠন করেছিলেন তাঁর সাধের পাকিস্তান। আর মাত্র ২৪ বছরের মধ্যেই ভারত নিয়েছিল মধুর প্রতিশোধ। পাকিস্তানকে দু’টুকরো করে দিয়ে। সাক্ষী ছিল এই পার্লামেন্ট।
১৩ ডিসেম্বর। সকাল ১১টা ৪০। ২০০১।
৪০ মিনিট আগে লোকসভা ও রাজ্যসভা মুলতবি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি এবং বিরোধী দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী নেই। সামরিক বাহিনীর জন্য কফিন কেনাবেচায় দুর্নীতি হয়েছে এই অভিযোগে বিরোধীদের চরম হট্টগোল চলছিল। সেই কারণেই লোকসভা ও রাজ্যসভা মুলতবি। প্রায় ২০০ এমপি রয়ে গিয়েছেন। উপ প্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি তাঁর চেম্বারে কিছু ফাইলে সই করছেন। এখান থেকে তিনি যাবেন নর্থ ব্লকে। একটু আগে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ির কথা হয়েছে। যেহেতু সংসদ মুলতবি হয়ে গেল, তাই বাজপেয়ি আজ আর আসছেন না। তিনি ৭ নং রেস কোর্স রোডের বাড়ি থেকেই কাজ করবেন জানালেন।
হঠাৎ আদবানি শুনতে পেলেন পরপর কিছু শব্দ। আর চিৎকার। তিনি আসন ছেড়ে দ্রুত বাইরে এসে দেখার চেষ্টা করলেন কী হয়েছে! তাঁকে ওভাবে বাইরে দেখেই লাফ দিয়ে ঘিরে ফেলল সিআরপিএফ, এসপিজি আর এনএসজি কমান্ডো বাহিনী। তাঁকে বলা হল, ‘সাব আপ অন্দর যাইয়ে, আতঙ্কবাদীও নে হামলা কর দিয়া।’ আদবানি স্তম্ভিত। সন্ত্রাসবাদীরা পার্লামেন্টে ঢুকে পড়েছে! তিনি চেম্বারে এসেই ফোন করলেন বাজপেয়িকে। জানালেন। বাজপেয়ি জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের কী করা উচিত? আদবানি বললেন, আপাতত সিকিউরিটিদের সঙ্গে চলছে গান ব্যাটল। আমি জানাচ্ছি আপনাকে।
কী ঘটেছিল? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্টিকার লাগানো একটি অ্যাম্বাসাডর গাড়ি ঢুকছে। স্টিকার থাকলেও সন্দেহ হল কনস্টেবল কমলেশ কুমারী যাদবের। সেই অসম সাহসী নারী একাই দ্রুত দৌড়ে একনম্বর গেট বন্ধ করলেন প্রাণপণে। আর সঙ্গে সঙ্গে সাদা অ্যাম্বাসাডর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এল গুলি। এ কে ফর্টি সেভেন থেকে। কমলেশ কুমারী সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়লেন। অ্যাম্বাসাডর এবার এগল ১২ নম্বর গেটের দিকে।
কিন্তু ১২ নম্বর গেটে ততক্ষণে পজিশন নিয়েছে সিকিউরিটি ফোর্স। গুলি ছুড়ছে তারা। দ্রুত পিছনে সরে গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে সাদা অ্যাম্বাসাডর দেখল সামনেই মুখোমুখি একটি গাড়ি। সেই গাড়ি আসলে উপ রাষ্ট্রপতি কৃষ্ণ কান্তের। মুখোমুখি ধাক্কা লাগল। তৎক্ষণাৎ পাঁচজন যুবক নেমে এল অ্যাম্বাসাডর থেকে। প্রত্যেকের হাতে একে ফর্টি সেভেন। আর বোমার ব্যাগ। এক হাতে গুলি চালাচ্ছে। অন্য হাতে গ্রেনেড। রীতিমতো উচ্চমানের প্রশিক্ষণ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
উপ রাষ্ট্রপতির সিকিউরিটি ফোর্স ছিল সবথেকে সামনে। তাঁদের অত্যাধুনিক রাইফেল সমানে গুলি চালাচ্ছে। হঠাৎ গুলি লেগে একটি শরীরে বিস্ফোরণ ঘটল। তৎক্ষণাৎ পার্লামেন্ট সিকিউরিটি ফোর্স মাটিতে শুয়ে পড়ল। তার মানে এদের শরীরে রয়েছে সুইসাইড ভেস্ট! আত্মঘাতী বাহিনী। ভেস্টে গুলি লেগে ফেটে গিয়েছে। আর তাই বিস্ফোরণ। ৪০ মিনিটের একটি রোমহর্ষক গুলিযুদ্ধের সাক্ষী হল ভারতের পার্লামেন্ট। পাঁচজন জঙ্গির মৃত্যু হল। শহিদ হলেন সিকিউরিটি ফোর্সের ১২ জন সদস্য।
এহেন অসংখ্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ভারতের পার্লামেন্ট একনিমেষের মধ্যেই অতীতের পৃষ্ঠায় প্রবেশ করল। চালু করা হল নতুন পার্লামেন্ট। তবে পুরনো পার্লামেন্টের কাঠামো, ডিজাইন, ইতিহাস, উজ্জ্বলতা চিরকাল থেকে যাবে অম্লান! কারণ এই ভবনে অনুরণিত হচ্ছে আজও অদৃশ্যভাবে আধুনিক ভারতের পথ চলার প্রতিটি মুহূর্তের প্রতিধ্বনি!