‘মিঠে গঙ্গাজলে তোলা অন্নপূর্ণা-ঘাটে।/ মেছোর পাটায় শোভে কিবা বাঁকা ঠাটে।।’ ... ‘কাঁচা ইলিশের ঝোল কাঁচা লঙ্কা চিরে।/ ভুলিবে না খেয়েছে যে ব’সে পদ্মাতীরে।।’ ... ‘আষাঢ়ে প্রথম মৎস্য প্রবেশিলে ঘরে।/ দূর্ব্বাধানে পূজে তারে শঙ্খরব ক’রে।।’ ... ‘একটি একটি কাঁটা তারিয়ে তারিয়ে।/ অবলা বিরলে খান বেড়ালে হারিয়ে।।’ বাঙালির ইলিশ-প্রীতির এমন নানা কথা ছড়ার আকারে রেখে গিয়েছেন রসরাজ অমৃতলাল বসু। কথাগুলি পাওয়া যায় প্রায় একশো বছর আগে (১৩৩৩ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত ‘কৌতুক-যৌতুক’ গ্রন্থে সন্নিবেশিত ‘ইলিশ’ শিরোনামের একটি লেখায়। অমৃতলাল পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন ঘটি-বাঙালে দ্বন্দ্ব যা-ই থাক, ইলিশের কাছে গিয়ে সব একাকার! বাঙালির ঘরে এই মাছ নিছক একটি সুস্বাদু খাবার নয়, রীতিমতো বরণীয়। গোলাপে কাঁটা বলে কোনও প্রেমিক তার প্রেমিকার নরম হাতে ফুলটি তুলে দিতে ভয় পায় না। ঠিক তেমনই নারী, ইলিশের স্বাদ নিয়ে থাকে অজস্র কাঁটা বেছে এবং তারিয়ে তারিয়ে। নির্জন স্থানে নারীর এই রসনাতৃপ্তির কায়দাকে কবি বেড়ালের ধৈর্য, মনোযোগের চেয়েও এগিয়ে রেখেছেন।
ইলিশের স্বাদ এতটা অসভ্যের মতো ভালো কেন, তা নিয়ে বাঙালির গবেষণার অন্ত নেই। বাঙালির দ্বন্দ্বেরও শেষ নেই পদ্মা আর গঙ্গার ইলিশের স্বাদের তুলনা নিয়ে। উত্তর যখন অজানা তখন আসরে অবতীর্ণ হলেন সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদার। শোনা যায়, ডালহৌসি চত্বরে মানে সুতানুটি গোবিন্দপুরের বুকে দাঁড়িয়ে, এক বাঙাল ভদ্রলোক পদ্মার ইলিশের বড়াই করছিলেন। উপস্থিত কমলকুমার তাঁকে এই মারেন তো সেই মারেন অবস্থা! তিনি রসিয়ে বললেন, গঙ্গার ইলিশ তিনশো বছর ধরে কোম্পানির (পড়ুন, ইংরেজ) তেল খাচ্ছে। সেই কারণেই তার এত স্বাদ, সে-ই সেরা! এই সত্যটা জানা নেই বলেই বাঙালরা পদ্মার ইলিশ নিয়ে ‘মিথ্যে বড়াই’ করেন।
স্বাদ নিয়ে চ্যালেঞ্জ না-হয় মুলতুবি রইল, কিন্তু ইলিশের বাসস্থান নিয়ে চ্যালেঞ্জ এখন করাই চলে। প্রবাদে রয়েছে, ‘ইলিশ মাছ কি বিলে থাকে/ কিলাইলে কি কাঁঠাল পাকে?’ অফিসের বসকে গ্রামের বাড়ির পুকুরের ইলিশ উপহার নিয়েও রয়েছে রঙ্গরসিকতা। কিন্তু বছর আটেক আগেই কাগজে ছবিসহ খবর দেখেছে বাঙালি—‘মেছোঘেরিতে বাড়ছে ইলিশ!’ উত্তর ২৪ পরগনার চারঘাটে টিপির বিলে জনৈক সঞ্জয় বিশ্বাসের মেছোঘেরিতে জাল ফেললেই মিলছে জ্যান্ত ইলিশ। কোনওটার ওজন ৬০০ গ্রাম, কোনওটা আরও বড়! এগুলি সম্ভবত যমুনার উপচানো জলের সঙ্গে এসেছিল। কিন্তু মিষ্টি জলে ইলিশের চাষ নিয়ে গবেষণা তো অব্যাহত।
ইলিশ এমন একটি মাছ, যা ধনী গরিব মধ্যবিত্ত থেকে গৃহী সন্ন্যাসী সবাইকে এক-ঠাঁই করে ছেড়েছে। ইলিশ রান্না হলে বাড়িতে কী যে আনন্দের পরিবেশ তৈরি হয়, তা শুনিয়ে গিয়েছেন যোগীন্দ্রনাথ সরকার, ‘সোনা নাচে কোনা/ বলদ বাজায় ঢোল/ সোনার বউ রেঁধে রেখেছে/ ইলিশ মাছের ঝোল।’
কবি বুদ্ধদেব বসু ইলিশকে ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ আখ্যাসহ জানিয়েছেন তারই ছোঁয়ায় কলকাতার বিবর্ণ সকাল কেমন করে সরস হয়ে ওঠে। আরও মনে করিয়ে দেন, ‘এল বর্ষা, ইলিশ-উৎসব’। এ শুধু ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমার পরিসরে আটকে নেই— দুই বাংলার দিকে দিকে ঘোষণা সহকারে এবং রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে অনেক বছর যাবৎ ‘ইলিশ উৎসব’ হচ্ছে—সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। বড় হোটেল-রেস্তরাঁয় এবং অভিজাত ক্লাবে গিয়ে এমন আয়োজন নাম পাচ্ছে ‘হিলসা ফেস্টিভ্যাল’। কিছু ক্ষেত্রে এমন উৎসবের আয়োজক রাজনীতির কারবারিরা। সামনে বড় কোনও নির্বাচন থাকলে তো কথাই নেই। রীতিমতো সরকারি মদতেই হয় ইলিশ উৎসব। সেখানে নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে রুপোলি পর্দার নায়িকাদের ছবি ভাইরাল হয়। আম পাবলিক ভিড় জমায় তাঁদের সঙ্গে সেলফি তুলতে। বিজ্ঞাপনের জগতেও মাছটি একাই একশো। বিশেষ করে বর্ষাকালে নামী কোম্পানির সর্ষের তেলের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে ইলিশ যেন একাঙ্গী হয়ে যায়। বাংলাদেশ রেডিওর একটি বিজ্ঞাপনে একসময় কানে আসত, ‘মাছের রাজা ইলিশ,/ বাতির রাজা ফিলিপস।’
ভোটের রাজনীতিতে জলের রুপোলি শস্যের উপস্থিতিও ভুলবার নয়। পূর্ব পাকিস্তানের শেষ নির্বাচনে বাঙালিরা বুক ফুলিয়ে ছড়া কেটেছিল, ‘ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বুয়াল মাছের দাড়ি/ ইয়াহিয়া খান ভিক্ষা করে, মুজিবের বাড়ি।’ কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নেও বাঙালির হাতিয়ার ইলিশ। আমরা বারবার দেখেছি, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক একটু টাল খেলেই বাংলাদেশ যেন বর্ষার জন্য অপেক্ষা করে। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’দের নৌকার খোল ‘মৃত সাদা ইলিশ মাছ’-এ ভরে উঠলেই বাংলাদেশ সরকার পশ্চিমবঙ্গে দেদার ইলিশ পাঠাবার ঘোষণা করে।
২০১১ সালের একটি কাহিনিও প্রাসঙ্গিক। তিস্তা জলচুক্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা গিয়েছেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ভারতের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে চুক্তিটি যদিও সেবার হয়নি। তাতে বাংলাদেশ যারপরনাই অখুশি হয় এবং বিশেষ অস্বস্তিতে পড়ে শেখ হাসিনার সরকার। তবুও আতিথেয়তায় কোনওরকম কার্পণ্য করেনি ঢাকা। মন্ত্রী, আমলার সঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিকদের রসনাতৃপ্তির জন্যও আয়োজন ছিল এলাহি। তার মধ্যে ইলিশেরই ছিল নানা পদ। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধান অতিথি মনমোহন সিং যে নিরামিষাশী! অত্যন্ত সংযমী মানুষটি কিন্তু সেদিন পদ্মার ইলিশ গ্রহণের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেননি। মনমোহন বলেছিলেন, ‘এমন ইলিশের জন্য নিয়মভঙ্গ একদিন হতেই পারে।’ আয়োজন সার্থকজ্ঞান করে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু তনয়াও।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, ২০০৯ সালে হোয়াইট হাউসে মনমোহনের সম্মানে ডিনারের আয়োজন করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সেখানে আমিষ পদ গ্রহণের আন্তরিক আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু এই মনমোহনই। ‘ইলিশ খলিশ্চৈব ভেটকি মদগুর এব চ।/ রোহিতো মৎস্যরাজেন্দ্র পঞ্চমৎস্য নিরামিষাঃ।’—ইলিশের প্রতি চরম ওকালতির এই শ্লোকের দ্বারা মনমোহন প্রভাবিত কি? এক বাঙালি ছড়াকার ইলিশকে এমন উচ্চ স্থান দিয়েছেন, তার উপর আর কারও জায়গা হতে পারে না, ‘বায়ু বিশ্বকে ধারণ করে আছে। তার উপরে আছে কচ্ছপ। তার উপরে শেষনাগ। তার উপরে পৃথিবী। তার উপরে কৈলাসশৃঙ্গ। তার উপরে গঙ্গা। গঙ্গার উপরে ইলিশ। এই ইলিশই হল মৎস্যরাজ।’
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও ইলিশ একটি মস্ত হাতিয়ার। যেমন পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম ‘ইলিশ পার্বণ’-এর আয়োজন করে। একেবারে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি মেখে গঙ্গাবক্ষে ইলিশ-ভোজের এমন আহ্বানে সাড়া না-দেওয়াকে অনেকে অনেক কিছু না-পাওয়ার তালিকায় রাখেন। তাঁদের কাছে ব্যাপারটা এইরকম, ‘ইলিশ তো বাড়িতে বসেও খাওয়া যায়, কিন্তু মাঝগঙ্গায় বৃষ্টি দেখতে দেখতে খাওয়ার মজাই আলাদা।’
তবে সাবধান, কোনও কোনও ভুঁইফোঁড় বেসরকারি উদ্যোগ সস্তায় ইলিশ খাওয়ানোর নামে দেদার টাকা তুলে ভোজনরসিকদের সঙ্গে প্রতারণাও করতে পারে। বছর কয়েক আগে মিডিয়াতেই এমন খারাপ খবর ফাঁস হয়েছিল।
বিশিষ্ট কবি হয়েও ইলিশ প্রসঙ্গে কবিদের সামনে একটি নিরীহ প্রশ্ন রেখেছিলেন নবনীতা দেবসেন, ‘জোড়া ইলিশ মাছের বদলে জোড়া কবিতার বই দিলে বেশি খুশি হব কি আমরা? বুকে হাত রেখে ক’জন বাঙালি নিজের কাছেই একথা মেনে নেবেন?’
ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তসঙ্কট এক স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই রাজ্যের নানা জায়গায় বছরের মধ্যে অনেকবার রক্তদান শিবির হয়ে থাকে। কিন্তু সব শিবিরে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষের সাড়া মেলে না। তাই আয়োজকরা অনেক সময় নানা ধরনের ‘উপহার’ কিংবা ‘লটারি’র ব্যবস্থা রাখেন। এমন উপহারের তালিকায় ব্যাগ, বালতি, টর্চ ইত্যাদিই চেনা। ২০১৬ সালে বারাসতে দেখা গেল, ‘রক্তদানের উপহার এক কেজি ওজনের ইলিশ ও তেল-মশলা’! আর যায় কোথায়, যেখানে পাঁচ-দশজন দাতা জোগাড় করতে হিমশিম অবস্থা হয়, সেখানে ৬০ জনের জায়গায় রক্ত দিলেন ৬৮ জন। তাঁদের হাতে ইলিশ তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন স্থানীয় পুরকর্তারাও।
ইলিশ-প্রিয়তা নিয়ে বাঙালির আইকনদের দিকে একটু তাকানো যাক।
ইলিশের প্রতি মুগ্ধতা রবীন্দ্রনাথের অবশ্যই ছিল। তবুও এক জায়গায় তিনি চিতল পেটিকে জিতিয়ে দিয়েছেন। শিলাইদহের বাড়িতে একবার সবাইকে নিয়ে মহাভোজ খাওয়ার শখ হল তাঁর। রাঁধলেন যজ্ঞেশ্বর। খেতে খেতে চলল রসিকতা। ইলিশের পর চিতল পেটি মুখে নিয়ে কবি মন্তব্য করে বসলেন, ‘আমার প্রিয় ইলিশ মাছের পেটিকে দেখছি হারিয়ে দিলে যজ্ঞেশ্বরের চিতল মাছের পেটি!’ এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, জালে আটকে পড়া সুন্দর ইলিশের বিষাদের মধ্যে একজন যুবকের কৌমার্য হারিয়ে যাওয়ার মিলটাই খুঁজে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে, কবির দাদা সত্যেন্দ্রনাথ বম্বে-প্রবাসের কালে লিখেছিলেন, ‘যব পান্না মছলি খানা, তব সিন্ধু ছোড়কে নেহি যানা।’
সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘ইলিশই ইলিশের বিকল্প।’ ইলিশের ডিম ভাজা মুখে দিলেই জোড়া চোখ তৃপ্তিতে বুজে আসত মহানায়ক উত্তমকুমারের। মমতা শঙ্কর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সাধভক্ষণে ইলিশ মিস করতে চাননি, তাই সিজারের দিন পিছিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ইলিশের আঁশ বাস্তুভিটেয় পুঁতে রাখলে কোনও একদিন নাকি সেসব মোহরে রূপান্তরিত হবে! এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল অমলা শঙ্করের যশোর জেলার বাটাজোড় গ্রামে। অন্যদিকে, শিলাইদহের ঠাকুরবাড়িতে একবার হয়েছিল ইলিশ এক্সপেরিমেন্ট। আমগাছের গোড়ায় আস্ত আস্ত ইলিশ পোঁতা হয়েছিল পরের বছর আমের ফলন ও স্বাদ বাড়াবার আশায়!
ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস ইলিশ সম্পর্কে আমাদের হুঁশিয়ার করেছেন, ‘ডাব মাটির কত উপরে থাকে, অথচ তার জল খেলে শরীর জুড়িয়ে যায়। আর ইলিশ থাকে গঙ্গার জলের গভীরে, তবু ইলিশ খেলে পেট গরম হয়।’ তা সত্ত্বেও স্বামী বিবেকানন্দের ইলিশ-প্রীতি ইতিহাস হয়ে আছে। ১৮৯৪ সালের গ্রীষ্মকাল। স্বামীজি শিকাগোতে। মঠের গুরুভাইদের উদ্দেশে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে এক চিঠিতে লিখলেন, ‘ভাল কথা, এখানে ইলিস মাছ অপর্যাপ্ত আজকাল। ভরপেট খাও, সব হজম।’ স্বামীজি একবার পূর্ববঙ্গে গিয়ে স্টিমারে ঘুরছেন। আশপাশে জেলেদের নৌকায় জ্যান্ত ইলিশ ধরা পড়েছে দেখে তিনি রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। কারণ এমন দৃশ্যের প্রথম সাক্ষী যে! খানকয়েক মাছ কেনার নির্দেশ দিলেন এক সঙ্গীকে। এক টাকায় ষোলোটি ইলিশ কেনা হল।
অন্য আর একদিনের কাহিনি। স্বামীজি বেশ অসুস্থ। আগের দিন উপোস করেছেন। এদিন দীর্ঘ ধ্যান থেকে উঠতেই ভয়ানক খিদে পেয়েছে। অনুজ-ভক্তদের জানিয়ে দিলেন, ‘জমিয়ে খাব।’ তাঁর জন্য এল গঙ্গার টাটকা ইলিশ। তা ভাজা হল। ইলিশের তেল নুন লঙ্কা মেখে খেলেন গরম ভাত। সঙ্গে ডাল, মাছ এবং শেষপাতে মাছের অম্বল। এমন মুখরোচক পদ খাবার পর, স্বামীজি শরীরে এতটাই বল পেলেন যে লাইব্রেরিতে গিয়ে ছাত্র পড়ালেন, হাঁটতে বেরলেন, গল্পগাছাও করলেন ভক্ত-সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে। পরিতাপের বিষয়, স্বামীজি প্রয়াতও হলেন সেই রাতে।
ইলিশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের এক বিতর্কিত শাসকের নাম—মহম্মদ-বিন তুঘলক। বিদ্রোহীদের দমন করতে তুঘলক একবার গিয়েছিলেন গুজরাতে। এমনকী, নৌযোগেও বিদ্রোহীদের পিছু নেন তিনি। তারই মধ্যে একদিন বিকেলে সম্রাটের নৌকার ভিতরে লাফিয়ে ওঠে সুন্দর গড়নের একটি মাছ। কিন্তু মাছটির পরিচয় অজানা। তা সত্ত্বেও সম্রাট সেটি খাবেন বলেই ঘোষণা দিলেন। পারিষদদের পরামর্শ, সতর্কবার্তা ইত্যাদি কানে তুললেন না। রান্না মাছ এত ভালো লেগেছিল যে, পরিমাণে অনেক বেশিই খেয়ে ফেলেন সম্রাট। পরিণামে মারাত্মক পেট খারাপ হল তাঁর, দিনকয়েকের মধ্যে মারাও গেলেন। এই কাহিনি প্রসঙ্গে সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলির অনুমান, মাছটি ইলিশই ছিল। তিনি মন্তব্য যোগ করেছেন যে, ইলিশ খেয়ে সম্রাটের মৃত্যু যখন হয়েছে, তখন নিশ্চিতভাবেই তিনি বেহেস্তে গিয়েছেন! অনেকে অনেক কিছু চড়ে স্বর্গে গিয়েছেন—ঐরাবত, পুষ্পক রথ আরও কত কী! আর শাহ-ইন-শা সালামত মহম্মদ তুঘলক শাহ ইলিশ চড়ে স্বর্গারোহণ করলেন!
বেহিসেবি ইলিশ ভক্ষণের বিপদ তো কিছু জানা হল। এবার শুনব ইলিশ শিকারে গিয়ে চরম বিপদের টাটকা খবর।
গত ১৫ জুন, বৃহস্পতিবার নামখানা মৎস্যবন্দর থেকে মাঝ-সমুদ্রের উদ্দেশে রওনা দেয় ‘এফবি কল্পতরু’ নামে একটি ট্রলার। তাতে ছিলেন ১৭ জন মৎস্যজীবী। খবরে প্রকাশ, পরদিন দুপুরে বকখালি থেকে ৩০ কিমি দূরে প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে ট্রলারের নীচের পাটাতন ফেটে যায়। অমনি হু হু করে জল ঢোকে ট্রলারে। প্রাণ বাঁচাতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন জলে। অন্য একটি ট্রলার গিয়ে বিপন্ন ১৬ জনকে উদ্ধার করতে পারলেও, নিখোঁজ রয়ে যান এক হতভাগ্য যুবক।