ট্রেনটা সচল হতেই তপেশের ফোন এল, ‘কী দাদা, কতদূর?’
—আর বোলো না, বারাকপুর ছাড়লাম সবে।
—কেসটা কী?
—শ্রমিকদের কী সব দাবিদাওয়া নিয়ে রেললাইন অবরোধ সেই সকাল থেকে।
—এসো, আমি অপেক্ষা করছি।
—ঠিক আছে।
কথাটা বলে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখল শতানিক।
তপেশরঞ্জন একসময়ে লটারির টিকিট বিক্রি করত। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ে পড়া ছেড়ে দিয়েছিল। এখন মস্ত বড় প্রমোটার হয়েছে। কয়েকজন বন্ধু মিলে পার্টনারশিপ ব্যবসা খুলেছে। আয় পত্তর ভালোই হচ্ছে সেটা ওর বাড়ি দেখেই শতানিক গেলবারই বুঝতে পেরেছিল। তবে, তপেশ দান ধ্যান করে। ক্লাবের দুর্গা প্রতিমার দাম ছাড়াও কালীপুজোর ভোগের খরচ পুরোটা ওর পকেট থেকেই যায়। ক্লাবের ছেলেরা বায়না করে, দাদা একটু আনন্দ করব। মাংস-ভাত খাব। এত খাটাখাটনি করছি পুজোতে।
শোনামাত্র পকেট থেকে চার-পাঁচ হাজার বের করে বলে, খাবি। তবে বেশি মাতলামি করবি না।
ট্রেনটা ভালোই গতি নিয়েছে। শতানিক জানলা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখছে। কত মাঠ ঘাট জনবসতি পেরিয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলায় মনে হতো ট্রেনটা স্থির আছে গাছপালাগুলোই বুঝি ছুটে চলেছে। কেমন ঘুরে ঘুরে দূর থেকে কাছে চলে আসছে আবার কাছ থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে।
এমনি বুঝি হয়। এখন বড় হয়ে বুঝেছে। কাছের মানুষেরা কেমন দূরে সরে সরে গিয়েছে। আর দূরের যারা যাদের কখনও চিনত না, জানত না তারাই এখন কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছে। জীবনটা যেন এক চলমান রেলগাড়ি।
বারাকপুর ছাড়ল সবে। এখনও ঘণ্টা খানেক তো লাগবেই। চাকদহ নেমে আবার পনেরো-কুড়ি মিনিট লাগবে। বাস চলে এ পথে তবে অটো আসার পর বাস অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। তেলের দাম বাড়ায় প্যাসেঞ্জার প্রত্যাশী বাস ঢিকির ঢিকির করে চলে।
যদুনাথপুরে শতানিকদের বাড়ি। সত্তর বছরের বাসিন্দা ওরা। এবারে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলবে ঠিক করেছে। বাবা মারা যাওয়ার পরেও কেটে গেল পনেরোটা বছর। মা থাকাকালীন তবু যোগাযোগ ছিল। পাঁচ বছর মা চলে গেলেন। শতানিকের জন্মভূমির প্রতি টান আছে ঠিকই কিন্তু কর্মব্যস্ততার ভিতরে সময় করে ঠিকমতো আসা হয় না।
নিতাই কাকাই বাড়িটার দেখভাল করে। প্রায় চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর ধরে আছে। এ বাড়ির সদস্যই বলা যায়। দেশ ভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত অনেক আশ্রিতদের দলে নিতাই কাকাও ছিল। পরে ওদের বাড়িতেই থেকে যায়। মা দেখে শুনে বিয়ে দিয়েছিল। ঝিঙ্গেখালিতে নিতাই কাকার শ্বশুরবাড়ি। গত বছর কাকিমাও চলে গেলেন।
চাকদহ নেমে একটা অটোতে চেপে বসল। বেশ ঠাসাঠাসি করেই পিছনে বসতে হল।
অটো যেই চলতে শুরু করেছে অমনি পুরনো স্মৃতিরা সব হুড়মুড়িয়ে চলে এল। একটা সময়ে এই রাস্তা হাতের তালুর মতো চেনা ছিল।
প্রতিটা মোড়, কোন বাড়ির সামনে কী ফুল গাছ ছিল, কী রঙের ফুল ফুটত, কোন বাড়ির মেয়েটা খুব সুন্দরী, কোন স্যরের কাছে টিউশন পড়ে ইত্যাদি সমস্ত নাড়িনক্ষত্র জানা ছিল।
অটোতে বসে কত কিছু ভাবছিল শতানিক। কিছুদিন ধরেই ভাবছে বিষয় সম্পত্তি সব গুটিয়ে নেবে। বয়স বাড়ছে, এসব দেখভাল করার সময় কোথায়। মাঝে মাঝে নিতাই কাকার সঙ্গে কথাবার্তা হয়। নিতাই কাকা আর কাকিমা এতদিন ছিল তাই রক্ষে। তবুও আশপাশের মানুষ প্রায় দিন ঝামেলা বাঁধাচ্ছে। এই তো সেদিন অফিস থেকে বাড়িতে ফিরতেই নিতাই কাকার ফোন, ‘সতুবাবা পাশের বাড়ির সমর বিস্তর গোল পাকাচ্ছে।’
—কেন?
—তোমাগের মধু কুলকুলি আম গাছের এট্টা ডাল ওগের দিকে ঝুঁকে পড়ায় উঠোন নোংরা করতিছে।
—ঠিক আছে, ডালটা কেটেই দাও।
—তা দিচ্ছি বাপ, তুমি যখন কচ্চ, কিন্তু ওই ডালটাতে মেলা আমের কুষি আসিছে। কেমন মায়া করতিছে ডাল কাটতি। কইলাম, থাক এবারডা, পরের বারে কাটি দেবানে। আম হলি পরে তোমারাই খাতি পারবা।
—ঠিক আছে।
—তারপরেও আর এক ফ্যাকড়া তুলিছে।
—কী?
—ওগের টিনির চালে ঝুনো নারকেল পড়ায় ওগের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতিছে। শতানিক খানিক মাথা চুলকে বলল, ‘তুমি এবারে এক কাজ কর, ঝুনো নারকোল সব বিক্রি করে দাও। পরের বারে ডাব বিক্রি করে দিও, কেমন? এসব উটকো ঝামেলা আর সহ্য হয় না।’
নিতাই কাকা ফোনের ও প্রান্তে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়লেন বোঝা গেল। এই গাছপালা নিয়েই রোজকার ঝামেলা লেগেই আছে। আসলে নিতাই কাকা আর কাকিমা বহুদিন ধরে ওই বাড়িতে আছে, এতটা জমি-বাগান দেখভাল করছে এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। এটা শতানিক বুঝতে পারছে। তারাই আবার তপেশকে লাগিয়েছে, জায়গাটা কেনার জন্য।
তপেশ সেদিন এমন সময়ে ফোন করেছিল যখন ও অফিসের জরুরি একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিল।
আস্তে করে বলল, ‘রাতে কথা বলব।’
সেদিন রাতে ফিরে তপেশকে ফোন করেছিল। তপেশ বলল, ‘কী করবে দাদা ওই জায়গা জমি রেখে। তোমরা তো আর কোনওদিনই এসব জায়গায় আসবে না। তার চাইতে কত দাম নেবে বল আমি কিনে নিই।’
শতানিক বলল, ‘একটু সময় দাও। হুট করে বলতে পারছি না।’
—সে তুমি সময় নাও, তবে বেচবে মনঃস্থির করলে আমাকে জানাবে কিন্তু।
—ঠিক আছে।
সে মাস ছয়-সাত হবে। সেদিন হঠাৎ আবার তপেশের ফোন, ‘কী দাদা, কিছু ভাবলে?’
—নাহ, কিছুই ভাবিনি।
—ভাব, এরপর জবরদখল হয়ে গেলে কি ভালো লাগবে?
তপেশের কথার ভিতরে অন্য এক সুর শতানিকের কানে নতুন অর্থ বয়ে আনল।
শতানিক বলল, ‘দু’-এক দিন সময় দাও।’
রাতে শতানিক মিসেসের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করল। মহুল বলল, ‘ঠিকই বলেছে। আজকাল তো দেখছি, কিছুদিন পড়ে থাকলেই সব ক্লাব দখল করে নিচ্ছে। কিছুই বিশ্বাস নেই। মা-বাবা যতদিন ছিলেন, সে একরকম ছিল। দেখ—।’
শতানিক অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল, ওই বাড়ি ও সংলগ্ন এক বিঘের উপরে বাগান সব বিক্রি করেই দেবে। এর ভিতরে পাড়ার দু’-চারজনের কাছ থেকে শুনে নিল কেমন জমির দাম।
যাইহোক বাড়ি আর জায়গা মিলে একটা দাম বলল শতানিক। তপেশ তার উপরে একটু দরাদরি করল। শতানিক বুঝতে পারল, জমির দাম এর চাইতেও বেশি। ও ভুল করে অনেকটা কম চেয়ে ফেলেছে। এককথায় রাজি হয়ে গেলে শতানিক বুঝতে পারবে, ভেবে নিয়ে তাই এই ঝোলাঝুলি।
শেষমেশ ওর কথাতেই রাজি হয়ে গেল তপেশ। বাড়ি সংলগ্ন জমি মিলে চল্লিশ লাখে রফা হল। সামনের সপ্তাহে বাড়িতে যাবে শতানিক জানিয়ে দিল। ওইদিনই ফাইনাল করে দেবে। তপেশ দশ লাখ অ্যাডভান্স পেমেন্ট করে দেবে বলেছে। বাকিটা রেজিস্ট্রির দিন।
তপেশ বলল, ‘তোমাদের বাড়িতে যারা থাকে তাদের বলে দিও, এর ভিতরে অন্যত্র সরে যেতে।’
‘সে আমি দেখছি, তোমার কিছু বলার দরকার নেই।’
আজ প্রায় চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে নিতাই কাকা ওদের বাড়িতে আছেন।
শতানিক কলকাতায় পড়তে চলে এল। এই কাকা-কাকিমাই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দেখভাল করেছেন। ডাক্তার দেখানো, ওষুধপত্র কেনা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম এমনকী এই বাড়িটার দায়-দায়িত্ব সমস্ত কিছুই এই নিতাই কাকা আর কাকিমাই পালন করেছেন। নিতাই কাকা ছিলেন বলেই শতানিক শান্তিতে পড়াশোনা, চাকরি, পরবর্তীকালে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাতে পেরেছে।
অটো থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে শতানিক এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে।
এদিকে এলেই মনটা অকারণে কেমন ভালো হয়ে যায়। পুরনো মানুষগুলো প্রায় কেউই নেই। নতুন নতুন মুখ সব, তবুও যেন ভালো লাগে। সেই বটতলা, প্রাইমারি স্কুল, সেই খেলার মাঠ যে মাঠে বিকেল হলেই দাপিয়ে বেড়াত। বর্ষায় চোরকাঁটা আর কাদা মেখে বাড়িতে ফিরত। সে একটা সময় ছিল। কথাটা মনে পড়তেই একটা খরগোশ বুকের ভিতরে লাফিয়ে চলে গেল।
বাড়িতে পা দিতেই নিতাই কাকা এগিয়ে এল, ‘এসো বাবা, সেই কখন বেরিয়েছ।’
ঘরে ঢুকতেই পাখা চালিয়ে দিল।
শতানিক ওদের বড় ঘরে ঢুকে বসল। কী সুন্দর পরিপাটি করে রেখেছে। ঠিক আগের মতোই। শো কেসের উপরে বাবার সেই ফোটোটা এখনও জ্বলজ্বল করছে। ঘরের চারদিকে চোখ বোলাল। কোনও কিছুই সরানো হয়নি। বরঞ্চ প্রতিটা জিনিস খুব যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছে নিতাই কাকা। ও ঘুরে ঘুরে পাশের প্রতিটা ঘর দেখল। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দোতলার ঘরগুলো সব ঘুরে ঘুরে দেখল। বাবা যে ঘরে ছাত্র পড়াতেন সেই ঘরটা সেই চেয়ারটা আজও তেমনই আছে। তক্তপোশের উপরে একটা লাল নীল ডোরাকাটা শতরঞ্চি পাতা আছে। এমনই একটা শতরঞ্চিতে ছাত্ররা বসত। মনে পড়ল বহুকাল আগের সেই কথা। বাবা চার্লস ডিকেন্স, অস্কার ওয়াইল্ড, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, কিটস, বায়রন পড়াতেন। ও চুপটি করে পড়া শুনত।
নীচে এসে দেখল নিতাই কাকা ডাব হাতে রেডি, ‘খাও বাবা’ বলে এগিয়ে দিল।
বাড়ির গাছের ডাব, কী মিষ্টি, সুস্বাদু!
ও এক নিঃশ্বাসে জলটুকু খেয়ে মস্ত বড় একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলল।
এরপরে বাগানে এল। কত গাছগাছালিতে ভরা এই বাগান। বাবা আর মায়ের হাতের সব স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়ে আছে। কী সুন্দর ছায়াঘন পরিবেশ। কত পাখি গাছের ডালে। কুটুর কুটুর, কিচিরমিচির সুরে ডাকছে। গরমের দিনে এই আম-কাঁঠাল-লিচু-সবেদা বাগানে মাদুর পেতে শতানিক বই পড়ত। ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করত। তখন এখনকার মতো এমন প্রতিযোগিতা ছিল না। অনেকটা সময় ছিল ইচ্ছেমতো সময় কাটানোর।
এ বাড়িতে কত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিলেন বাবা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ে আত্মীয়-অনাত্মীয় একটু আশ্রয়ের জন্য তখন হন্যে হয়ে ঘুরতেন। এই বাড়িতে দু’-চার বছর কাটিয়ে তারা সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত। বাবা-ই ছিলেন এদেশে তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল।
সেই সময় থেকে নিতাই কাকা এ বাড়িতে। তারপরে কত যুগ পেরিয়ে গেল।
বাড়িটার কিছু কিছু জায়গায় প্লাস্টার খসে হাড় পাঁজর বেরিয়ে পড়েছে। শতানিকের মনে পড়ে, নিতাই কাকাকে বাবা বলতেন, আমরা যখন থাকব না, নিতাই তুই কিন্তু এই গাছগাছালি আর এই বাড়িটার যত্ন করিস। এই বাড়িটা ছিল বাবার কাছে মায়া নিকেতন। বাবা বলতেন, বাড়ি যেমন মানুষের আশ্রয়স্থল, ঠিক তেমনই সেই বাড়িটা যখন জীর্ণ হবে, তখন সে অন্যের সাহায্য চায়। একটু আশ্রয় দাবি করে। তারও তখন যত্নের প্রয়োজন। শতানিক বলল, ‘কাকা, আমাকে একটু বেরতে হবে।’
নিতাই কাকা ঘরের ভিতরে নিজের জিনিসপত্র গোছগাছ করছিল।
শতানিক দুপুরে খেতে এসে দেখল নিতাই কাকার জিনিসপত্র সমস্ত কিছু বাঁধাছাদা হয়ে গিয়েছে।
দুপুরে খাওয়ার পরে সোজা ছাদে উঠে চারপাশটা দেখতে লাগল। কেমন ছায়ায় ঘেরা এই মায়াকুঞ্জ।
কাছেই আমগাছের পাতার আড়ালে একটা ইস্টিকুটুম পাখি ডাকছিল। হলুদ রঙের লাজুক পাখিটা ডেকেই পাতার আড়ালে লুকিয়ে পড়ছে। শতানিক ভাবছে, বাড়িটা বিক্রি করে দিলে এই গাছগুলো সমস্ত কাটা পড়বে, এই পাখিগুলো আশ্রয়হীন হবে। সেই সঙ্গে নিতাই কাকাও। বাবার এই ‘মায়া নিকেতন’ চিরতরে হারিয়ে যাবে। মুছে যাবে বাবা-মায়ের সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন।
কথাগুলো ভাবতেই বুকের ভিতরে একটা কান্না গুমরে উঠল।
এখনও এই বাড়িতে পা রাখলে মনে হয় বাবা আছে। মা হয়তো ধারে কাছে আছে কোথাও।
ঠিক তখনই হলুদ পাখিটা ডেকে উঠল, ‘কুটুম হোক। খোকা হোক।’
শতানিক খুঁজছে পাখিটাকে। পাখিটা কী করে জানল, সামনেই পাপানের বিয়ে? নতুন কুটুম তো আসছেই।
বিকেল গড়িয়ে গিয়েছে। নীচে এসে দেখল, নিতাই কাকা জিনিসপত্র ঘরের বাইরে নিয়ে এসেছে।
শতানিকের দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘সতুবাবা, এই নাও চাবি।’
নিতাই কাকার গলার স্বর কেঁপে উঠল, হাত কাঁপছে থরথর করে।
শতানিক হাতটা বাড়িয়েও কাছে টেনে বলল, ‘চ -চাবি? চাবি কী করব আমি?’
—আমি তো আর এ বাড়িতে থাকতিছি না।
—মানে, কোথায় যাচ্ছ?
—যাই দেখি। তপেশ যে বলল, এ বাড়ি ছেড়ে দিতে। তুমি নাকি বেচে দেছ?
—তাই বলেছে বুঝি?
এর মধ্যেই শতানিক দেখল তপেশ একমুখ হাসি নিয়ে এদিকে আসছে।
বলল, ‘তুমি আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলে শুনলাম। আমি একটু বিশেষ কাজে বেরিয়েছিলাম। অ্যাডভান্সের টাকাটা কি নগদে নেবে? নাকি চেক দেব?’
শতানিক কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইল। তারপরে আস্তে আস্তে বলল, ‘বুঝলে তপেশ, আমি এ বাড়ি বেচব না।’
—বেচবে না? কেন?
—আমার ছেলে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।
শেষের কথাটা হঠাৎই শতানিককে দিয়ে কে যেন বলিয়ে নিল।
তপেশ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে ওর দিকে। এইটুকু সময়ের ভিতরে পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল কীরকম!
গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে, যা ভালো বোঝো।’
বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে এল। এবারে বেরতে হবে।
নিতাই কাকার চোখে জল।
—আবার কবে আসবা বাবা?
—খুব তাড়াতাড়িই।
ভ্যান চলতে শুরু করেছে। বেশ কিছুটা চলার পরে সোজা রাস্তাটা বাঁয়ে বাঁক নিলে শতানিক ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পিছনে তাকাল। দেখল, নিতাই কাকা মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যেন এক ছায়াগাছ। এতকাল যিনি নিজেই আশ্রিত ছিলেন, আজ মনে হল তিনিই এখন বাড়িটার একমাত্র আশ্রয়স্থল। কথাটা ভাবতেই শতানিকের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
অঙ্কন : সোমনাথ পাল