দ্বাদশ শ্রেণির পর কোন বিষয় নিয়ে পড়ব? উচ্চশিক্ষার জন্য কোন কোন প্রতিষ্ঠান ভালো? উচ্চমাধ্যামিকে সায়েন্স, আর্টস, কমার্স যে কোনও শাখায় পাশ করার পর বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীর মনে ঘুরপাক খায় এইসব প্রশ্ন। অভিভাবকরাও ঠিক করে উঠতে পারেন না আগামী দিনে তাদের সন্তানের শিক্ষার অভিমুখ কী হবে? যারা উচ্চশিক্ষায় যেতে চায়, তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ।
উলুবেড়িয়ার এক ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেকচার কলেজের তরফে অলোক টিব্রেওয়াল বললেন, ‘আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়লে অনেক পথ খুলে যায়। সরকারি যোগ্যতা নির্ণায়ক মাপকাঠি মেনে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার দরজা খোলা। স্নাতক কোর্সের পর অনায়াসেই সফলভাবে পেশা জগতে প্রবেশের সুযোগ মেলে।’
বিগত কয়েক বছরে পড়াশোনার ধরন আমূল বদলে গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের সময়োপযোগী নতুন কোর্স চালু হয়েছে। যে কোর্সগুলি শেষ করার পরে দারুণ কেরিয়ার তৈরির সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পরিসংখ্যান বলছে, শেষ কয়েক বছরে হেলথকেয়ার ডিগ্রির চাহিদা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। বলা যেতে পারে, যে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে নিজেদের কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছে, তাদের জন্য এই কোর্সটির কোনও বিকল্প নেই। যেহেতু স্বাস্থ্য পরিষেবা আসলে চিরকালীন ক্রমবর্ধমান শিল্প, সেহেতু স্বাস্থ্যসেবা বা হাসপাতালে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতায় পারদর্শী ব্যক্তিদের সব সময়েই বিপুল চাহিদা থাকে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে হেলথকেয়ার বিবিএ কোর্সটি ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের একটি দারুণ কেরিয়ার উপহার দিতে পারে।
হাওড়ার ধূলাগড়ে একটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে হেলথকেয়ার নিয়ে স্নাতক কোর্স করার সুযোগ। এই নিয়ে বিস্তারিত বললেন অনিন্দিতা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘সায়েন্স, আর্টস, কমার্স যে কোনও শাখায় উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণরা হেলথকেয়ার নিয়ে উচ্চশিক্ষায় অগ্রসর হতে পারেন। ইন্ডাস্ট্রি ইন্টিগ্রেটেড কোর্স যেমন সাইবার সিকিউরিটি, ফুড প্রসেসিং, লজিস্টিক ম্যানেজমেন্টও পড়ানো হয়। এছাড়াও, ফ্যাশন ডিজাইনিং, জার্নালিজমের স্নাতক স্তরের কোর্সও রয়েছে।’ এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ম্যানেজমেন্ট কোর্সও রয়েছে। বর্তমান সময়ে ফার্মাসি ইন্ডাস্ট্রির কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফার্মাসি, ফিশারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচারের মতো কোর্সও করা যায়।
ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রয়োজন দক্ষ পেশাদারদের। হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে হেলথকেয়ার স্টাফ ছাড়াও প্রয়োজন এই দক্ষ ম্যানেজারদের। যারা প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ধরে রাখতে সাহায্য করে। কোর্স হিসাবে বেশ আকর্ষণীয় বিবিএ ইন হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট। এটি ম্যানেজমেন্ট কোর্স হওয়ার জন্য ম্যানেজেরিয়াল জব যেমন পাওয়া যায়, আবার সরকারি এবং বেসরকারি ফার্মা কোম্পানিতে, হেলথকেয়ার অর্গানাইজেশনে কাজের সুযোগ মেলে। বিভিন্ন নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শাখার উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের প্রফেশনাল ডিগ্রি কোর্স।
এমনই এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরফে গৌতম সাহা বললেন, ‘আমাদের চোখ শুধুমাত্র দেখা নয়, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বয়সে চোখের নানা সমস্যা হয়। চশমা থেকে কনট্যাক্ট লেন্স এই সব ক্ষেত্রে অপথালমোলজিস্টদের পাশাপাশি অপ্টোমেট্রিস্টরাও কাজ করে থাকে। অপ্টোমেট্রিতে স্নাতক কোর্সের সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন সংস্থায়।’
এছাড়াও হেলথকেয়ার ইউনিট, মেডিক্যাল ল্যাব নিয়ে কোর্স করতে পারেন বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরা। পাশাপাশি কলা বিভাগে উত্তীর্ণদের জন্যও রয়েছে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার সুযোগ। জিএফএক্স, মাল্টিমিডিয়ার মতো প্রফেশনাল কোর্সও পড়ানো হয়। ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট ও স্পোটর্স ম্যানেজমেন্ট (তিন বছরের) কোর্সও যে কোনও শাখার ছাত্রছাত্রীরা পড়তে পারে।
বিজ্ঞান শাখায় পড়ার পর ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্বপ্নের মতো। বর্তমান সময়ে কেরিয়ার গড়তে প্রয়োজন নিশ্চিত ও কর্মমুখী শিক্ষা এবং সঙ্গে সঠিক দিক নির্দেশনা। এই অবস্থায় যতগুলো বিষয় সামনে আসে তার মধ্যে অন্যতম হল অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। সম্ভাবনাময় অটোমোবাইল শিল্পে কাজ করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। চাইলে জয়েন্ট উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে চার বছরের কোর্স করতে পারে।
এরকমই একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তরফে কিষাণ কেজরিওয়াল বললেন, ‘অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে এই ক্ষেত্রে সুবিধা অনেক। ইলেকট্রিক ভেহিকেল হল আগামী দিনের ভবিষ্যত্। সেই প্রযুক্তি হাতেকলমে শেখার সুযোগ রয়েছে চার বছরের এই কোর্সে।’
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধীনে থ্রিডি প্রিন্টিং ল্যাব চালু হয়েছে। যে কোনও শাখার ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিভোক কোর্সে পড়ার সুযোগ। অটোমাবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিসিং, সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট পড়ানো হয় তিন বছরের কোর্সে।
হুগলির একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রিন্সিপাল স্মিতধী গঙ্গোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করছিলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসার পিছনে মূলত দু’টি কারণ থাকে। প্রথমত, কোনও কোর্সে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের মাথায় থাকে, পড়ার শেষে কাজের সুযোগ কতটা? এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার তুলনায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চার বছরের কোর্সের শেষে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
দ্বিতীয়ত, ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটা বিষয়, যা আমাদের রোজকার জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থাৎ আমাদের দৈনিক জীবনযাপনে এর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রভাব খুবই প্রকট। স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংকে বেছে নেওয়ার প্রবণতাও বেশি। এই মুহূর্তে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স সায়েন্স অ্যান্ড কমিউনেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কোর্স করানো হয়। জয়েন্টের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।’
এ রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতেও রয়েছে বেশ কিছু বৃত্তিমূলক বিষয় নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়ার সুযোগ। যা নিয়ে পড়ে পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার স্তরে যাওয়া যায়। আবার কোনও পেশাতেও প্রবেশ করা যায়।