বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

মোদিকে আজও খুঁজে পায়নি মণিপুর!
হারাধন চৌধুরী

গত সোমবারের কাগজে একটি উল্লেখযোগ্য শিরোনাম ছিল একইরকম: ‘নাইজেরিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন নরেন্দ্র মোদি’। হ্যাঁ, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে উঠল সেদেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘গ্রান্ড কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য নাইজের’, সংক্ষেপে ‘জিকন’। ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পর এই প্রথম কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনায়ককে আফ্রিকার দেশটি তাদের জিকন সম্মানে ভূষিত করল। এই নিয়ে মোদি মোট ১৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব গ্রহণ করলেন। নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বিদেশ সফর করেছেন মোট ৮৩ বার। উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, দশবছরে তাঁর চরণধূলি পেয়েছে মোট ৭১টি দেশ। ৪০টি দেশে গিয়েছেন একবার করে। দু’বার করে গিয়েছেন ১৬টি দেশে। তিনবার করে সফর করেছেন ৬টি দেশ। চীন, নেপাল ও সিঙ্গাপুরে তিনি গিয়েছেন পাঁচবার করে। নরেন্দ্র মোদি জার্মানি সফর করেছেন মোট ছ’বার। তাঁর সফরে দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে চারটি দেশ—ফ্রান্স, জাপান, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমির শাহি। ওই দেশগুলি তিনি সফর করেছেন মোট সাতবার করে। মোদির সফরের তালিকার সবার উপরে রয়েছে আমেরিকা, মানে ‘বন্ধু’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ! মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্কিন মুলুকে গিয়েছেন এখনও পর্যন্ত মোট ন’বার! 
৯ জুন তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণপরবর্তী ছ’মাসেই তাঁর বিদেশ সফরের সংখ্যা ১২। গত একবছরে দেশের বিভিন্ন রাজ্য সফর করেছেন প্রায় দু’শো বার! বাদ শুধু মণিপুর। ২০২৩ সালের ৩ মে মাস থেকে সেখানে কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ চলছে লাগাতার। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের হিসেব, ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত এজন্য ঘরছাড়া, এলাকাছাড়া হয়ে গিয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। নিহতের সংখ্যা অন্তত আড়াইশো। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যটিকে বাঁচাতে সেখানকার শান্তিকামী জনগণ শুরু থেকেই চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। তাঁদের দাবি ছিল, তিনি নিজে গিয়ে দেখে আসুন এন বীরেন সিংহের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার ছোট্ট সুন্দর মণিপুরের কী হাল করেছে! কিন্তু মেরু প্রদেশের বরফ গলে গেলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মন গলেনি। মণিপুরের মাটিতে পা রাখেননি মোদি। মণিপুরবাসী তাঁকে খুঁজেই পায়নি। তাই মোদির নামে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার পড়েছিল গতবছর মে মাসে। তারপরও কেটে গিয়েছে দেড় বছর। মোদিকে আজও খুঁজে পায়নি মণিপুর! মোদি সরকার এবং কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির কাছে মণিপুরের বাস্তব গুরুত্ব কতখানি, তা বুঝে নিতে এই তথ্যই যথেষ্ট নয় কি?
এখনও কাগজ, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখে রাখলেই সব হাড় হিম করা খবর: ‘জিরিবামে দুই বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ দুটি শিশুসহ ছ’জন’। খবরের বিস্তারে বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে ১১ জন কুকি যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে পরিস্থিতি ১২ নভেম্বরও ছিল ভয়ংকর উত্তপ্ত। তারই মধ্যে উদ্ধার হল জিরিবামে দুই বৃদ্ধের দেহ। ১১ তারিখ জাকুরাধোর কারোং এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দুই বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হয় সেখান থেকেই। পাশাপাশি নিখোঁজ মেইতেই গোষ্ঠীর তিনটি শিশু এবং তিনজন মহিলা। লড়াই চলছে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে। কিন্তু নিস্তার পাচ্ছেন না নিরীহ মহিলা, শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কেউই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে পরিবারসুদ্ধ তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপর তাদের পচাগলা কিংবা রক্তাক্ত দেহ মিলছে দূরবর্তী জঙ্গলে অথবা নদীতে। এর যেন বিরাম নেই! 
১৭ তারিখের সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম: ‘অপহৃত ছ’জনের দেহ উদ্ধার নদীতে, ফের অশান্ত মণিপুর, মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়িতে আগুন’! ‘ফের’ কথাটাই ফিরে ফিরে আসছে আর দখল করছে শিরোনাম। ১৬ নভেম্বর দেহগুলি নদী থেকে উদ্ধার হতেই মণিপুর অশান্ত হয়ে ওঠে নতুন করে। অশান্তির আগুন আরও ডালপালা মেলে। উত্তেজিত জনতা পূর্তমন্ত্রী গোবিন্দদাস কোনথুজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম ও পাওনাম ব্রজেন এবং কংগ্রেস বিধায়ক থোকচোম লোকেশ্বরের বাড়িতে আগুন ধরায়। তার আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাপাম রঞ্জনের বাড়িতে ঢুকেও চলে জনতার তাণ্ডব ও অগ্নিসংযোগ। কেশাম্পায় বিধায়ক সাপাম নিশিকান্ত সিং এবং ইম্ফল পশ্চিম জেলার সাগোলবন্দের বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের জামাই আর কে ইমোর বাড়ির সামনেও হামলা চলে। এই লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ খবর: তখনও জ্বলছে মণিপুর। বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছে আরও বিধায়ক আর মন্ত্রীর বাড়িতে। রেহাই পায়নি মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক ভিটেও! 
তারই মধ্যে মণিপুর ইস্যুতে ভাঙন ধরেছে এনডিএ’র অন্দরে। বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ জোটসঙ্গী কনরাড সাংমার দল  ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মণিপুর সরকারের উপর থেকে রবিবার তাদের সমর্থন তুলে নিয়েছে। হিংসা বন্ধে সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতাকেই এই চরম সিদ্ধান্তের কারণ বলে সাফ জানিয়েছে তারা। মণিপুরে সাংমার বিধায়ক আছেন সাতজন। এর আগে বিজেপির জোট ছেড়েছে বিধানসভায় দুই সদস্যের কুকি পিপলস ফ্রন্ট। বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার না-পড়লেও, উপর্যুপরি সিদ্ধান্ত দুটিতে মণিপুরে গেরুয়া শিবির যে আরও কোণঠাসা এবং দুর্বল হল, তাতে সন্দেহ কী! 
একটি রাজ্যে কোন দলের সরকার থাকবে কিংবা থাকবে না, সেটা অন্য প্রশ্ন। এখন আসল জিজ্ঞাসা, রাজ্যটিতে মানুষ আদৌ থাকতে পারবে তো? মণিপুর অতীতেও অনেকবার অশান্ত হয়েছে। কিন্তু অশান্তির আগুন এইভাবে রাবণের চিতার আকার নেয়নি কখনও। এখানেই অনন্য মোদি-শাহের প্রতিনিধি এন বীরেন সিং। এত কাণ্ডের পরেও বোঝা দায়, সেখানকার রাজ্যপাল লক্ষ্ণণপ্রসাদ আচার্যের ভূমিকা কী! তিনি কোন সার্টিফিকেট দিল্লিতে পাঠান যে এমন ‘কীর্তিমান’ মুখ্যমন্ত্রীরও চাকরি যায় না? মণিপুরে একবছর সাতমাস যাবৎ যে নৈরাজ্য অব্যাহত, তার এক আনাও পশ্চিমবঙ্গ বা অন্য কোনও ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ রাজ্যে ঘটলে মোদি-শাহ জুটি ছেড়ে কথা বলতেন কি? কুর্সিতে আর জায়গা হতো কি সেই নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর? কেন্দ্রে অন্য দল বা জোটের সরকার থাকলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফাই চাইত বিজেপি। তাহলে অমিত শাহ কোন কাণ্ডজ্ঞানে ওই পদ আঁকড়ে আছেন? 
তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বিজেপি এবং কেন্দ্র ভয়ানক গাড্ডাতেই পড়েছে বলে মনে হচ্ছে? না-হলে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের প্রচার স্থগিত রেখে রবিবার তড়িঘড়ি দিল্লি ফিরলেন কেন অমিত শাহ? মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সেদিনই জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে ইতিমধ্যেই মণিপুরে গিয়েছেন সিআরপিএফের ডিজি অনীশ দয়াল। শাহের নির্দেশে সিকিউরিটি অফিসারদের একটি দলও গিয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলার পথ বাতলাবেন নাকি তাঁরা। কিন্তু এখনও একটি সর্বদল বৈঠকের কথা শাসক শিবিরের কারও মুখে নেই! এখানেই সংশয় রয়ে যায় মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়ে। 
শুধু নির্বাক, নিশ্চল ‘বিশ্বগুরু’। তিনি কিছু বলেনও না, মণিপুরমুখোও হন না। যথার্থই বলেছেন, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে, ‘বিজেপি অশান্তি জিইয়ে রাখতে চায়।’ কিন্তু তার কী যে রাজনৈতিক ফায়দা, একমাত্র সঙ্ঘীরাই জানেন। মণিপুরে বিজেপি সরকারের একটাই সাফল্য, তারা মানুষকে দুটি বৈরী গোষ্ঠীতে ভাগ করে দিতে পেরেছে। কুকি অধ্যুষিত এলাকায় মেইতেইরা প্রবেশ করতে পারে না। উল্টো দিকে মেইতেই অধ্যুষিত এলাকার ছায়াও মাড়াতে পারে না কুকিরা। এমনকী বাড়ির বাইরে বেরনোর সাহস হারিয়েছেন সব দলেরই মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং অন্য নেতারা। কেননা, একদা ‘চোখের মণিরা’ই আজ যে জনতার ‘চক্ষুশূল’! আড়াআড়িভাবে বিভক্ত মণিপুরে ব্যবসা-বাণিজ্য, রুটিরুজি চৌপাট হয়েই গিয়েছে। ধুঁকে ধুঁকে মরছে অর্থনীতি। সম্প্রতি সেখানকার যুবরা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া-জগতে পা রাখছিলেন বেশ আত্মিবশ্বাসের সঙ্গে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাঁরা কতটা তাঁদের সাধনায় অবিচল থাকতে পারবেন বলা মুশকিল। অবিশ্বাস, ঘৃণা, বিভেদ ও বিভাজনের রাজনীতির চরম রূপই প্রত্যক্ষ করছে মণিপুর। এর ভিতরে বাকি ভারত কি ডরাবার মতোই সিঁদুরে মেঘ দেখছে না? 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সন্তানের তীক্ষ্ণ বাক্য ও উদ্ধত আচরণে মনঃকষ্টের যোগ। কর্ম নিয়ে জটিলতার অবসান। অর্থকড়ি দিক অনুকূল।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.০৬ টাকা৮৬.৮০ টাকা
পাউন্ড১০৩.৮৯ টাকা১০৭.৫৮ টাকা
ইউরো৮৬.৮৫ টাকা৯০.১৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
11th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা