সম্পাদকীয়

উপেক্ষা অথবা গলাবাজি

বেঁচে থাকার জন্য প্রথম দরকার খাদ্য। বিপুল জনসংখ্যা সত্ত্বেও, সুজলা সুফলা কৃষিপ্রধান ভারতবর্ষে খাদ্যের অভাব হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই সমাজ ক্রমবর্ধমান বৈষম্যে দীর্ণ। তাই হাড়ভাঙা খাটুনির পরও দুর্বল মানুষগুলির ঘরে খিদের অন্ন সবসময় বাড়ন্ত। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য হল নাগরিকের ক্ষুধার নিবৃত্তি। এই ধারণা থেকেই চালু হয় গণবণ্টন ব্যবস্থা (পিডিএস)। ব্রিটিশ ভারতে পিডিএসের সূচনা বাংলা থেকে, পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে খাদ্যের আকাল ছিল পৃথিবীজুড়েই। কিন্তু বিদেশি শাসকের সেই ব্যবস্থা ছিল প্রহসন মাত্র, প্রমাণ বঙ্গদেশে বহু মানুষের অনাহারে মৃত্যু। স্বাধীন ভারতে গত শতকের পঞ্চাশের দশকেও কন্ট্রোল বা রেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। তা একটু চোখে পড়ার মতো ছিল পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু সেসব কখনোই যে পর্যাপ্ত ছিল না, তার সাক্ষ্য দেয় রাজ্যজুড়ে তীব্র খাদ্য আন্দোলন এবং তাতে অংশ নিয়ে নিরন্ন মানুষের মৃত্যু। পরবর্তীকালে নাগরিক নির্বিশেষে সকলের জন্য খাদ্যের নিরাপত্তা আইন তৈরির তাগিদ রাষ্ট্র পেয়েছে ওইসব মর্মান্তিক ঘটনা থেকেই।
এই সূত্রে দ্য ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৩ তৈরি হয়েছে গ্রামাঞ্চলের ৭৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলের ৫০ শতাংশ মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে। তাঁর সরকার ৮০ কোটি ভারতবাসীকে রেশনের মাধ্যেম বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছে দাবি করে ভোটের বাজারে হাততালি কুড়োন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারপরেও বিশ্ব ক্ষুধার সূচকে কিছুতেই উপরে উঠতে পারছে না ভারত: স্বাধীনতালাভের ৭৭ বছর পর, ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারতের র‍্যাঙ্ক ১০৫। বলা বাহুল্য, এখানে র‍্যাঙ্ক যত উঁচুতে দুর্দশা তত বেশি বোঝায়। শিশু এবং মহিলাদের অপুষ্টির বিচারে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ভারতের ছবিটি অত্যন্ত করুণ। ভারতের এই ক্রনিক সমস্যার সত্য একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা/সংগঠন নানাভাবে সামনে তুলে ধরে ভারতের অভিভাবকদের সতর্ক করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পরিবর্তে, প্রেক্ষিত বিশেষে দুটি উপায় নিয়েছে সরকার: উপেক্ষা অথবা গলাবাজি। মন্ত্রী, অফিসাররা তুলে ধরেছেন কিছু পরিসংখ্যান। দাবি করেছেন সেটাই ক্ষুধানিবৃত্তির খতিয়ান ও সাফল্য। তাঁদের দাবিমতো, সরকারি কোষাগার ফাঁকা করে খাদ্যশস্য কেনা হলেও সেসব ক্ষুধার্ত মানুষের হাত অব্দি শেষপর্যন্ত পৌঁছেছে কি না তার গ্যারান্টি কোথায়? সেই নজরদারি যে বেশিরভাগ জায়গাতেই নেই, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে একটি বেসরকারি রিপোর্টে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রবল মরুঝড়কে উপেক্ষা করার জন্য বালিতে মুখ গুঁজে থাকার রাজকীয় মূর্খামির মাশুলই গুনছে ভারতবাসী।
রেশনের চাল-গম নিয়ে দেশজুড়ে দুর্নীতির ছায়াই প্রকট এখন। সরকারি নিগমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্যশস্য পৌঁছে যাওয়ার কথা। অথচ, সারা দেশে বহু গ্রাহকের কাছে পৌঁছনোর আগেই উধাও হয়ে যাচ্ছে রেশনের চাল-গম। অন্তত ২৮ শতাংশ গ্রাহকের বঞ্চনাই মোদিযুগের দস্তুর! পরিমাণটা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই, প্রায় ২ কোটি টন! অথচ এজন্য প্রতিবছর রাজকোষের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা! উপর্যুপরি তিনটি বিস্ময় চিহ্নিত হয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনসের রিপোর্টে। তাদের দাবি, ওই চাল-গম ঘুরপথে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে খোলা বাজারে। এমনকী পাচার হচ্ছে বিদেশেও। আর এই পাপ কারবারে শীর্ষস্থানগুলি দখল করেছে মোদি-শাহদের সাধের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলি। অথচ মোদির মুখের বুলি, ‘না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’—অর্থাৎ দুর্নীতি রুখব যেকোনও মূল্যে। হায়, মোদি-শাহ যে রাজ্যের ভূমিপুত্র সেই গুজরাতের নামও যে এই কালো তালিকা আলো করে আছে! আছে যোগীপীঠ ইউপি’ও! ভয়াবহ রেশন দুর্নীতি তালিকার বাইরে নেই মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার প্রভৃতিও। এর বিপরীতে, রেশনের মাল পাচার রুখে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। ২০১১-১২ সালে বাংলায় রেশনের খাদ্য পাচার হয়েছিল ৬৯.৪ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা মাত্র ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তারপরেও রেশন দুর্নীতির দায় বাংলার ঘাড়ে চাপাতেই সবচেয়ে বেশি তৎপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি। গরিবের অন্ন নিয়ে দুর্নীতি রুখতে জরুরি কেন্দ্রের নিরপেক্ষ এবং কঠোরতর ভূমিকা। অন্যথায় কিছু বিরোধী দলের হেনস্তা চলবে বটে দুর্নীতি কমবেন না, বরং আরও আশকারাই পাবে দুর্বৃত্তরা। গরিব মানুষের খিদের যন্ত্রণা বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও নিচু হবে ভারতের মুখ-মান।
18d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে আকস্মিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। দুপুরের পর থেকে জটিলতা মুক্তি ও কর্মে উন্নতি। ভ্রমণ...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৮৫ টাকা৮৫.৫৯ টাকা
পাউন্ড১০৬.১০ টাকা১০৯.৮৬ টাকা
ইউরো৮৭.৯১ টাকা৯১.৩০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা